সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৩ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ করোনা একটি ভাইরাস বাহিত জীবন ধ্বংসকারী রোগ হলেও তা প্রতিহত করতে সমন্বয় করে কাজ করতে হচ্ছে। শুধু চিকিৎসা নয় মানুষ নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রশাসনের সার্বক্ষণিত চেষ্টা, আবার অভূক্তদের ঘরে খাবার পৌছে দিতে নিরন্তর কাজ করে যাওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্চ।
সেই চ্যালেঞ্চকে গ্রহণ করে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রশাসনিক তিনটি দফতর ও তাদের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ফলে এখন পর্যন্ত করোনার প্রাদুর্ভাব শতভাগ প্রতিহত করা না গেলেও সেবায় বিচ্যুতি হয়নি বরিশালে। যদিও জনসেবা দিতে গিয়ে ইতিমধ্যে রাষ্ট্রীয় ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যারমধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাক্তার। তারপরও উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
যতক্ষণ প্রাণ আছে, ততক্ষণ করোনা মোকাবেলায় কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন সমন্বিত তিনটি দফতরের কর্মকর্তারা। দফতরগুলো হলো শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। দক্ষিণাঞ্চলে করোনা যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি লড়াই করে যাচ্ছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হােসেন ও তার চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। যারমধ্যে তিনজন চিকিৎসক, একজন সেবিকা ও একজন ছাত্র রয়েছেন। রোগীদের হঠকারিতায় লকডাউন করতে হয়েছে মেডিসিন ওয়ার্ডকেও। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির চেয়ে অপ্রতুল ব্যবস্থা নিয়ে করোনা প্রতিরোধে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সকল চিকিৎসকরা।
বলা হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার পর এই অঞ্চলের মানুষের জন্য করোনা প্রতিরোধে যদি কাজ করতে পারেন তা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এর আগে এই হাসপাতাল নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় এখন ডেডিকেটেট হাসপাতালে পরিণতে হয়েছে বর্তমানে।
ওদিকে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার আগ থেকেই কঠোর অবস্থানে মাঠে নামে জেলা প্রশাসন। করোনা শনাক্তের পর সম্পূর্ণ বরিশাল জেলাকে লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করা হয়। করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই অদ্যবধি জেলা প্রশাসন কল্পনাতীত ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান পুরো জেলাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। যেকোন স্থানের তথ্যে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষদের সুরক্ষিত রেখেছেন। তাছাড়া অসহায়, কর্মহীন মানুষদের সহায়তায় উজার করে দিচ্ছেন নিজেকে। অভাবগ্রস্থের সংবাদ পেলেই কােন আনুষ্ঠানিকতা, প্রচারণার ফটোসেশনের বালাই না ধরে পৌছে দিচ্ছেন খাবার।
এসএম অজিয়র রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও তৎপরতায় বাস্তবায়িত হয়েছে লকডাউন। কোথাও কােন অনিয়মের অভিযোগ এখনো ওঠেনি। এমন কথাই বলছিলেন কর্নকাঠির বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম শাওন। বিশ্বিদ্যালয় পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী মনে করেন, জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান দক্ষতার সাথে সবকিছু সামাল দিচ্ছেন। পুরো জেলায় তার প্রশংসা। কারন, অনেক জেলায় লকডাউন, ত্রাণ নিয়ে নানান অভিযোগ শোনা যায়। বরিশাল জেলায় ওই ধরণের কিছু এখন পর্যন্ত কারও কাছে নেই।
মানুষকে সচেতন করতে এসএম অজিয়র রহমান সরাসরি সংযুক্ত হচ্ছেন বাসিন্দাদের সাথে। ব্যাক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রটিকেও ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করে মানুষের সাহায্য পাওয়ার দ্বার প্রসার ঘটিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মনে করেন, সমন্বয় করে কাজ করলে সুফল আসবেই। তিনি সবসময় চেষ্টা করেন সবাইকে নিয়ে করোনা প্রতিরোধে কাজ করতে। আর তারই সুফল পাচ্ছে মানুষ। এটা তার নৈতিক দায়িত্ব। সুতরাং তার কাজের ক্ষেত্র নিয়ে এখনই মতামত দেওয়ার সময় আসেনি বলে মত দেন।
ওদিকে সরকারের সমস্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে এবং কোটি মানুষকে করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে সম্পৃক্ত করার চেষ্টায় ইতিমধ্যেই সফলতা দেখিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খানের সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে শতভাগ সচেতন হয়েছেন মানুষ। তার সাথে সাথে অবর্ননীয় পরিশ্রম এবং দেশ প্রেমের জন্য প্রশংসিত হয়েছে বিএমপি।
দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে জনবহুল বিধায় ঝুঁকিপূর্ণর প্রবণতায় এগিয়ে ছিল মেট্রোপলিটন এলাকার চার থানা। আর এই এলাকার মধ্য থেকেই গেছে এই বিভাগের একমাত্র আঞ্চলিক মহাসড়কটি। ফলে সারা বাংলাদেশের মানুষ এই পথ দিয়ে যাতায়াত করায় করোনার ঝুঁকি ছিল মারাত্মক। কিন্তু ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী সংক্রমিত হওয়ার পরপরই কঠোর নজরদারী শুরু করে পুলিশ। এতে করে মানুষের চলাচল সিমিত করা হয়; পুলিশের সকল সদস্য মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সচেতনতামূলক নির্দেশনা দিয়ে আসেন। জানিয়ে আসেন কি করতে হবে আর কি করা যাবে না। মূলত করোনা কি, কেন হয়? তা এই অঞ্চলের মানুষ জেনেছে পুলিশের মাধ্যমে।
আর বর্তমানে কমিশনার শাহাবুদ্দিন খানের কড়া নির্দেশনা রয়েছে ত্রাণে অনিয়ম, প্রতারণা, মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ ও লকডাউন কার্যকর করার। মেট্রো এলাকার জনবহুল এলাকার বাজার ইতমিধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে সাধারণ পরিবহনগুলো। শুধু বন্ধ করেই থেমে থাকেনি, কর্মহীন হয়ে পরা মানুষদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে পুলিশ যে শুধু আইন প্রয়োগ করতে পারে তা নয়; মানবতার বন্ধু হয়েছেন। নিজেদের কাঁধে করে মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌছে দিয়েছে মেট্রো পুলিশ। এমনকি নিজেদের বেতনের টাকাও বিলিন করে দিয়েছেন মানুষের মাঝে।
Leave a Reply