সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার রিফাত শরীফ হ’ত্যার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পেলে আলোচিত হয় এই হত্যাকাণ্ড। ভিডিও ফুটেজে যারা রিফাত শরীফের স্ত্রী’ মিন্নির সাহসী ভূমিকা দেখেছেন, তাদের প্রশ্ন কেন এমনটি ঘটল?
মামলায় যেখানে মিন্নির বাদী হওয়ার কথা, সেখানে তাঁকে সাক্ষী করা হলো। আবার সাক্ষী থেকে আসামির কাঠগড়ায় যেতে হলো।
কারণ স্বামী হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে মিন্নি এখন জেলে। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, রিফাত হত্যা মামলার বাদী-সাক্ষীর ফাঁদে শুরু থেকেই মিন্নির পরিবার। ঘটনাস্থল থেকে মিন্নিই বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে রিফাতকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
খবর পেয়ে এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথের ঘনিষ্ঠ ও রিফাতের বন্ধু মনজুরুল আলম জন হাসপাতালে ছুটে আসেন। রিফাতকে যখন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হচ্ছিল, তখন মিন্নিও স্বামীর সঙ্গে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জনের বাধার কারণে পারেননি।
বরগুনা হাসপাতাল থেকেই মিন্নির পরিবারের প্রতি ফাঁদ পাতা হয়। মিন্নির বাবার টাকায় বরগুনা থেকে বরিশালের উদ্দেশে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করা হয়। বরিশালে রিফাতের চিকিৎসার সব খরচ তিনিই বহন করেন। বিকেলে রিফাতের মৃত্যু ঘটে। খবর পেয়ে মিন্নির চাচাশ্বশুর আব্দুস সালাম শরীফ রাতে সেখানে আসেন। পরের দিন সকালে
জামাইয়ের লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার জন্য মিন্নির বাবা অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেন। লাশ ওঠানোর আগে মিন্নির বাবার সঙ্গে জন খারাপ আচরণ করেন। জনের সঙ্গে থাকা বন্ধুরা শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের লাশকাটা ঘরের সামনে মিন্নির বাবাকে লাঞ্ছিত করে। এমনকি তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে জোর করে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেই হাসপাতালের ঘটনার রেশ ধরে অনেকে বলছেন মিন্নি কেন হসপিটালে যায়নি!
মিন্নির বাবা বিকল্প পরিবহনে বরগুনায় পৌঁছান। তার আগেই রিফাতের লাশ তাঁর বাবার বাসা বড়লবণগোলা গ্রামে পৌঁছায়। মিন্নির পরিবার লাশ দেখতে রিফাতের বাসায় যায়।
বড়লবণগোলা গ্রামের বেল্লাল হোসেন রিফাতের দূরস’ম্পর্কের আত্মীয়। ঘটনার পর ২৮ এবং ৩০ জুন তাঁর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘২৭ জুন বিকেল তখন ৪টা হবে। ওই সময় মিন্নি তাঁর পরিবারের সঙ্গে রিফাতের বাসায় প্রবেশ করছিলেন। তখন রিফাতের বন্ধুরা জনের নেতৃত্বে মিন্নির পরিবারকে বাধা দেয়।
বেল্লাল ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘জনের বিশেষ ভূমিকার কারণে সেখানকার পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে সেখানকার নারী-পুরুষ মিন্নির পরিবারের দিকে তেড়ে আসে। লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে মিন্নির পরিবার রিফাতের বাসার লাগোয়া তাঁর চাচা আব্দুস সালামের বাসার দোতলায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। রিফাতের জানাজার আগে-পরে তাঁর লাশ দেখার জন্য জনের কাছে অনুনয়-বিনয় করেন মিন্নি। কিন্তু মিন্নিকে তাঁর স্বামীর লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে মিন্নির শ্বশুরের সহযোগিতায় তাঁরা ওই বাসা থেকে বের হন।
মিন্নি বলেছিলেন, ‘বরগুনা হাতপাতাল থেকেই আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় জন। বলে মহিলাদের নিলে ঝামেলা। পরের দিন বিকেলে জনই আমার স্বামীর লাশ দেখতে বাধা দেয়। স্বামীর কবরে মাটিও দিতে পারিনি। পরিবেশটা এমনভাবেই তৈরি করা হয় যে আমার সঙ্গে বিয়ের কারণেই রিফাতকে খুন করা হয়েছে।মিন্নি বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই জনের সঙ্গে আমার দূরত্ব। কারণ জন মাদকের সঙ্গে জড়িত। রিফাতকেও একই পথে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি বাধা দেওয়ায় আমার ওপর জন ক্ষুব্ধ ছিল।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘জনের সঙ্গে রিফাতকে চলাফেরা করতে আমি নিষেধ করতাম। কারণ জনের ব্যাপারে শহরের মানুষের নেতিবাচক ধারণা আছে। ওই ঘটনার জের ধরেই রিফাতকে কোপানোর পর জন আমার সঙ্গে বাজে ব্যবহার শুরু করে।
বন্ধুদের নিয়ে লাশকাটা ঘরের সামনে আমাকে লাঞ্ছিত করেছিল। জামাইয়ের লাশ নেওয়ার জন্য আমি টাকা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেও তাতে আসতে পারিনি। মামলা দায়েরের ব্যাপারে জন সম্পৃক্ত ছিল। মিন্নিকে ফাঁ’সানোর জন্য মামলায় তাঁকে (মিন্নি) বাদী এবং আমাকে সাক্ষী করেনি।
Leave a Reply