রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৫ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ গলায় ফাঁস লাগানো অর্ধ গলিত লাশ ঝুলছিল মহাসড়কের পাশে টঙ্গীর ডেসকো গোডাউনের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে। সকাল ৯টার দিকে পথচারীরা দেখতে পেয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় খবর দেয়। তিন ঘণ্টা পর পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। পরে জানাজানি হয় লাশটি সৌদি প্রবাসী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ইউনুস মোহাম্মদ শফিক মুন্সির (৫০)। টঙ্গীর খাঁ পাড়া এলাকার বন্ধু ইসমাইল হোসেনের বাসায় বেড়াতে এসে তিন দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন তিনি।
পরিবার নিয়ে তিনি সৌদিতে বাস করেন। ৩ মার্চ স্ত্রীকে নিয়ে দেশে আসেন। পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বন্ধু ইসমাঈল হোসেনকে (৩৫) আটক করেছে পুলিশ।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে এসআই ইয়াসির আরাফাত জানান, তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জনক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ইউনুস আগে কখনো দেশে আসেননি। তার স্ত্রীও সৌদিতে বাংলদেশি বংশোদ্ভুত। পূর্ব পুরুষদের দেশ দেখতে এবং পাসপোর্ট নবায়ন করতে স্বামী-স্ত্রী এবারই প্রথম বাংলাদেশে আসেন। সন্তানদের রেখে ৩ মার্চ সৌদি থেকে এসে লকডাউনের কারণে আটকা পড়েন।
পাসপোর্টে ইউনুসের পৈত্রিক বাড়ি শরীয়তপুর জেলার সফিপুর থানার বড় কান্দা গ্রামের ঠিকানা লেখা থাকলেও সেখানে তাদের কোনো ঘনিষ্ট আত্মীয়-স্বজন নেই। সৌদি আরবে পরিচয় হয়েছে এমন কয়েকজন বাংলাদেশি বন্ধু ও দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে ঘুরে তারা লাকডাউনকালীন সময় কাটাচ্ছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সৌদি থেকে এসে তারা প্রথমে নারায়ণগঞ্জের কোনাপাড়ায় এক বন্ধুর বাড়িতে উঠেন। এরপর পূর্ব পুরুষের গ্রামে গেলেও সেখানে ঘনিষ্ট কাউকে না পেয়ে অন্যত্র বন্ধু-বান্ধব ও দূর সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যান।
সম্প্রতি তারা টঙ্গীতে ইসমাঈল নামে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় ও বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ইসমাঈলও এক সময় সৌদি আরবে থাকতেন। সেদেশে থাকতে ইসমাঈলের সঙ্গে ইউনুসের ঘনিষ্ঠতা হয়। প্রায় ৫ বছর আগে কোনো এক ঘটনায় সৌদি আরবে ইসমাঈলকে কালো তালিকাভুক্ত করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
টঙ্গী পশ্চিম থানার আউচপাড়ার খাঁ পাড়া রোডে বন্ধু ইসমাঈলের ভাড়া বাসায় সস্ত্রীক অবস্থানকালে ইউনুস পাশের মোক্তার বাড়ি রোডে আরেক সাবেক সৌদি প্রবাসী বন্ধু কাশেমের বাসায়ও বেড়াতে যেতেন। গত ২৬ জুন সকাল ১০টায় বন্ধু কাশেমের বাসায় যাওয়ার কথা বলে ইসমাঈলের বাসা থেকে বের হন ইউনুস। তারপর তিনি আর ফেরেননি।
ওইদিন রাতেই ইউনুসের স্ত্রী ফাতেমা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। দুপুরে লাশ উদ্ধারের পর জিডির সূত্রে ইউনুসের স্ত্রীকে খবর দেওয়া হয়। তিনি এসে লাশটি স্বামীর বলে শনাক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে সফিউদ্দিন সড়ক সংলগ্ন ডেসকো ভান্ডারের বাউন্ডারি ঘেঁষে বিআরটি প্রকল্পের পিলারের পেছনে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ইউনুসের লাশ ঝুলছিল। ধারণা করা হচ্ছে দুদিন আগে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
স্ত্রী ফাতেমা আক্তার জানান, ই্উনুস বাংলা বলতে পারতেন না। আরবী ভাষায় কথা বলতেন। নিখোঁজের পর স্বামীকে উদ্ধারের সহায়তা চেয়ে পুলিশের কাছে বহু কান্নাকাটি অনুনয়বিনয় করেছেন। পুলিশ কোনো গুরুত্ব দেয়নি। একটু তৎপর হলে স্বামীকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব ছিল। তিনি স্বামীর ঘাতকদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।
থানার ওসি এমদাদুল হক জানান, এ ঘটনায় নিহত ইউনুসের বন্ধু ইসমাঈলকে (৩৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। আরেক বন্ধু কাশেমকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আটক ইসমাইলের বাবার নাম হাসান। তার বাড়ি শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার মুন্সিকান্দি গ্রামে। গত মার্চ মাসে খাঁপাড়া রোডের বদরুল আলমের ছয় তলা বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া উঠেন ইসমাঈল।
বাড়ির মালিক বদরুল আলম জানান, ইসমাঈল নিজেকে গার্মেন্ট ব্যবসায়ী দাবি করে বাসা ভাড়া নেন। বাসায় শুধু স্বামী-স্ত্রীই থাকতেন। এপ্রিলে বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও লকডাউনের কারণে আর যাননি।
Leave a Reply