রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: দলের জন্য দিনের পর দিন খেটে, দীর্ঘ ত্যাগ স্বীকার করেও আওয়ামী লীগের যেসব নেতা সঠিকভাবে মূল্যায়ীত হননি তাদের ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে। বঞ্চিত নেতারা এবার যোগ্যতার মাপকাঠিতে নতুন দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয় বঞ্চিত এমপি ও মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়া সাবেক মন্ত্রীরাও পাবেন নতুন দায়িত্ব।
মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করেই দলের মধ্যে যাতে অন্তঃকোন্দল সৃষ্টি না হয় এবং জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা যাতে দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় হয়ে না পড়েন সেজন্য কাজ করছে আওয়ামী লীগ। শুধু কেন্দ্রীয়ভাবেই নয়, তৃণমূলের যেসব নেতা দলের সিদ্ধান্ত মেনে দলীয় পদ ও এমপিত্ব বিসর্জন দিয়েছেন তারাও মূল্যায়িত হবেন। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তালিকা প্রণয়নে শুরু হয়েছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
এসব নেতাদের সরকারের বিভিন্ন অনুবিভাগ- ব্যাংক, বীমা, কর্পোরেশন, বিভিন্ন কমিশনে নিয়োগ দেয়ার চিন্তা চলছে। সরকারের খালি থাকা এক ডজন মন্ত্রণালয়েও স্থান পাবেন কেউ কেউ। এছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বঞ্চিত নেতাদের সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তের চেষ্টা চলছে। আবার বঞ্চিত কিছু নেতাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ বড় পদ দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে এমপি-মন্ত্রীর মতো দলীয় মর্যাদা পেতে পারেন তারা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, যারা দলে ও সরকারে স্থান পাননি তাদের বিভিন্নভাবে মূল্যায়িত করা হবে। সরকারের অনেকগুলো অনুবিভাগ আছে। সেগুলোতে অনেককে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। এছাড়া মন্ত্রণালয়েও নিয়োগ পেতে পারেন অনেকে। আবার অনেককে দলীয় কোনো বড় পদ দেয়া হতে পারে। সেটা আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগেই হওয়ার সম্ভাবনা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে দলে ও সরকারে সমন্বয় করতে মন্ত্রিসভায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
বর্তমান মন্ত্রিপরিষদে এখনও ৯টি মন্ত্রণালয়ে কোনো পূর্ণ মন্ত্রী নেই। সেগুলো হচ্ছে- প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, নৌ পরিবহন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পানিসম্পদ, সংস্কৃতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের কাছে যে চারটি মন্ত্রণালয় রেখেছেন, তার মধ্যে কমপক্ষে তিনটি- জনপ্রশাসন; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়েও কেউ কেউ মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় নির্বাচনে এমপি পদে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত ৪৫ এমপি, মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়া ৩৬ জন সাবেক মন্ত্রী, সংরক্ষিত আসনে পুনরায় মনোনয়নবঞ্চিত ৪২ জন নারী এমপি পুরোদমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিতরাও এখন তৃণমূলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৪৫ এমপি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। তারা সবাই এখন সাবেক এমপি। এদের মধ্যে ৫ জন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বিএম মোজাম্মেল হক এবং কার্যনির্বাহী সদস্য ও সাবেক দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার ৩১ জনই নতুন। বাদ পড়েছেন পুরনো মন্ত্রিসভার ৩৬ জন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক।
সংরক্ষিত মহিলা আসনে পুরনো ৪২ জনের ৪০ জনই বাদ পড়েছেন। যে ৪৩ জন সংরক্ষিত আসনে এমপি হয়েছেন তাদের ৪১ জনই নতুন।
এছাড়া উপজেলা নির্বাচনে অনেক পুরনো চেয়ারম্যান দলীয় মনোনয়ন পাননি। স্থানীয়ভাবে তাদেরও মূল্যায়নের চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ। এর বাইরে সারা দেশে প্রায় এক হাজারের মতো জনপ্রিয় নেতা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। এসব নেতাদের নামও ভাগ্য খোলার তালিকায় রয়েছেন।
Leave a Reply