রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি॥ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (USEO) রফিকুল ইসলাম ভুঁঞার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ নিয়োগসহ সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে কাগজ পত্র হেড অফিসে প্রেরণ করতে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, নিয়োগে ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা, স্কুল, মাদ্রাসা পরিদর্শনে উৎকোচ গ্রহণ। অফিসে জাতির পিতার ছবি অবহেলাসহ আরও অভিযোগ রয়েছে।
তিনি তার কর্মক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতির এলাকায় বাড়ি ও তাঁর লোক বলে দাম্ভিকতার সাথে প্রচার করে আসছেন এবং এই সুযোগটি তিনি সর্বক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহন করে আসছেন।
অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম ভুঁঞা মঠবাড়িয়ায় ২০২০ সালের মার্চ মাসে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই মঠবাড়িয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুর্নীতিকে বৈধতা দিয়ে দেদারছে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে আসছেন।
যে সকল প্রতিষ্ঠান তাকে মাসোহারা দিতে অস্বীকার করেন তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। যার ফলে শিক্ষক কর্মচারীরা বর্তমানে তার কাছে চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কে, এম, লতিফ ইনস্টিটিউশন থেকেও মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাপলেজা ভাইজোড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেকায়েব প্রকল্পের একটি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান। সেখানকার মাসিক বেতনের বিল থেকেও তাকে একটি অংক দিতে হয়।
সম্প্রতি উত্তর হলতা নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহকারি গ্রন্থাগারিক, আয়া ও নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের ডিজির প্রতিনিধি চিঠি না পেয়ে পূর্বের বাতিলকৃত ০১/০২/২০২১ইং তারিখের নিয়োগ পরীক্ষার চিঠি দিয়ে বর্তমানে ২৭/০৩/২০২১ইং তারিখে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। যা সম্পূর্ণ বে-আইনী ও বিধি বহির্ভুত।
তিনি আরও যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে উৎকোচের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীদের আইন বহির্ভুত নিয়োগ দেন সেগুলো হলো; বি,বি,এস মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মীপদ, চিত্রা পাতাকাটা আঙ্গুলকাটা দাখিল মাদ্রাসায় গ্রন্থাগারিক, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদ, নাগ্রাভাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসায় নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদ, হারজী নলবুনিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহ সুপার, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদ, তাফাল বাড়িয়া হাসানিয়া আলিম মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক পদে অনিয়ম করে বিল-ভাতা করান, নুরে আলা নুর দাখিল মাদ্রাসায় নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদ।
সালেহিয়া পশ্চিম ছোট মাছুয়া দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষায় আয়া প্রার্থীদের মধ্য হতে সুমা নামক এক প্রার্থীর নিকট থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে পরীক্ষার খাতায় মূল্যায়নে বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে। আর এই বিষয়টি অত্র প্রতিষ্ঠানের সভাপতি শাহজাহান হাওলাদারের কাছে হাতে নাতে ধরা পরে এবং তাৎক্ষণিক তিনি ওই নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
অনুরূপ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে তিনি বেআইনি ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। সেখানের প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকগন তার এ অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন।
চাকুরী বঞ্চিত প্রার্থীরা এ ব্যাপারে অবহিত হয়ে মাদ্রাসা মহাপরিচালক ও উপজেলা নিবার্হী অফিসারের বরাবরে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার বিরুদ্ধে কে,এম লতিফ ইনষ্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি শিক্ষকবৃন্দসহ বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসার একাধিক প্রধান শিক্ষকগন মাননীয় সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রনালয় সচিব, পিরোজপুর জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার, মঠবাড়িয়ার সকল ক্লাবের গণমাধ্যম কর্মীদের বরাবরে অনুলিপি প্রদান করে।
বর্তমানে এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মো: বশির আহম্মেদের কাছে তদন্ত কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে ও বিধি বহির্ভুত অবৈধ নিয়োগ প্রাপ্তদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে।
চাকুরী প্রার্থী ছানাউল্লাহ্ জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার চাকুরী দেয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এক পর্যায়ে ওই পোস্টে মোটা অংকের টাকা নিয়ে অন্য লোককে নিয়োগ দেন। তবে তিনি আমার টাকা ফেরত দেন।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদারেছিনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাও. মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ একাধিক লোকের মুখে আমি শুনেছি কিন্তু লিখিত ভাবে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি।
পিরোজপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ইদ্রিস আলী আজিজি বলেন, রফিকুল ইসলাম ভুঁঞার এত দুর্নীতি আমার জানা ছিলনা। এ পর্যন্ত আমাকে কেউ অবহিত করেনি। আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির আহমেদ বলেন, উত্তর হলতা নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগের বিষয় আমার কাছে লিখিত অভিযোগ এসেছে ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে বিধায় নিয়োগ প্রাপ্তদের বেতন-ভাতা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বিষয় চুড়ান্ত প্রতিবেদন না দেয়া পর্যন্ত তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকবে।
এ বিষয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম ভুঞার কাছে জানতে চাইলে তিনি তার কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি বরং তিনি প্রতিবেদককে একাধিকবার প্রতিবেদনটি পত্রিকায় প্রকাশিত না করার জন্য অনুরোধ করেন।
Leave a Reply