সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলার তজুমদ্দিনে এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষের অনৈতিক কর্মকান্ড ও নিয়মিত ক্লাশের দাবীতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যান অধ্যক্ষ। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অফিস বন্ধের দিনেও ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করতে বাধ্য হন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
সুত্রে জানা যায়, উপজেলার উত্তর চাঁচড়া মোহাম্মদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও. সালাউদ্দিন ও তার স্ত্রী এবতেদায়ী কারী নুরুন্নাহার হঠাৎ করে মার্চ-এপ্রিল ২মাস কোন ছুটি ছাড়াই মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকেন। এ সময় তার অনুপস্থিতিতে তারই ছোট ভাই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাও. নুরউদ্দিন হাজিরা খাতায় অধ্যক্ষ ও এবতেদায়ীকে অনুপস্থিত দেখান। ২মাস পরে মাদ্রাসায় এসে অধ্যক্ষ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে নিজের ও স্ত্রীর অনুপস্থিত থাকা ২ মাসের বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন।
এরপর ভবিষৎ সতর্কতার জন্য অধ্যক্ষকে অনুপস্থিত দেখানো হাজিরা খাতা পরিবর্তনের প্রস্তাব শিক্ষকদের দিলে তারা তার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিপত্তি বাজে উভয়ের মধ্যে। তারপরও অধ্যক্ষ মাও. সালাউদ্দিন পুরনো হাজিরা খাতা বাদ দিয়ে একটি নতুন হাজিরা খাতা বানিয়ে চাপ প্রয়োগ করে কোন কোন শিক্ষকের স্বাক্ষর নিলেও তার ভাই উপাধ্যক্ষ মাও. নুরউদ্দিন ওই খাতায় আজও স্বাক্ষর করেননি। একপর্যায়ে শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে না দিয়ে অধ্যক্ষ নিজের রুমে খাতা নিয়ে যান।
অধ্যক্ষ মাও. সালাউদ্দিনের এধরনের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদে শিক্ষকরা মাঝে মধ্যে ধর্মঘট করলেও সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। এরইধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার সকল শিক্ষক ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিটিংয়ের রেজুলেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধ্যক্ষের আরেক ছোট ভাই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মোঃ মাইনুদ্দিনকে নোটারীর মাধ্যমে মাও. সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে দায়িত্বভার প্রদান করেন। এ ঘটনার পর পরই অধ্যক্ষ মাও. সালাউদ্দিন গতকাল শনিবার সকালে মাদ্রাসায় এসে শিক্ষত হাজিরা খাতা তার রুমে আটকে রাখেন। শিক্ষকরা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে না পেরে ক্লাশ বন্ধ করে শিক্ষক মিলনায়তনে অবস্থান নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জন করে অধ্যক্ষকের অনৈতিক কর্মকান্ড ও নিয়মিত ক্লাশে পাঠদানের দাবীতে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে অধ্যক্ষ মাও. সালাউদ্দিন মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় অফিস বন্ধের দিনেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শওকত আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। জানতে চাইলে মাদ্রাসার আলিম ২য় বর্ষের ছাত্র মোঃ শরীফ বলেন, কোন নোটিশ ছাড়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমাদের ক্লাশ বন্ধ করে দেন। এর আগেও তিনি কয়েকবার এধরনের কাজ করছেন। তাই আমরা আমাদের ন্যায্য দাবী ক্লাশে নিয়মিত পাঠদান ও অধ্যক্ষের সকল অনৈতিক কাজের বিচার চাই। মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাও. মো. নুরউদ্দিন বলেন, অধ্যক্ষ মাও. সালাউদ্দিন তার সকল অপরাধ ঢাকতে শিক্ষকদের পুরনো হাজিরা খাতা বাদ দিয়ে নতুন করে হাজিরা খাতা তৈরী করে আমাকে স্বাক্ষর দিতে বললে আমি তাতে রাজি না হওয়ায় আমাকে ও মাইনুদ্দিন স্যারকে মারপিটের হুমকি দেন। আমরা মাদ্রাসার সকল শিক্ষকগণ বৃহস্পতিবার মিটিং করে অধ্যক্ষ মাও. সালাউদ্দিনের সকল অনৈতিক কাজের আইহগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাইনুদ্দিন স্যারকে নোটারির মাধ্যমে দায়িত্বভার প্রদান করি।
তারপর শনিবার অধ্যক্ষ শিক্ষক হাজিরা খাতা রুমে আটক করার কারণে শিক্ষকরা ক্লাশ বর্জন করলে বিক্ষোব্ধো হয়ে উঠে। পরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে অধ্যক্ষ মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যান। এ বিষয়ে জানতে উত্তর চাঁচড়া মোহাম্মদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও. সালাউদ্দিনের ব্যবহৃত ০১৭৩৫৫৮২৩১৫ নম্বরে বার বার ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শওকত আলী বলেন, ঘটনা শুনার সাথে সাথেই আমি অফিস বন্ধের দিনেও উত্তর চাঁচড়া মোহাম্মদিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যাই এবং অধ্যক্ষ মাও. সালাউদ্দিনকে অনুপস্থিত পাই। প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকায় অধ্যক্ষকে রবিবার দিনই কারণ দর্শানোর নোটিক করা হবে।
Leave a Reply