রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪১ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ মেয়ে সেজে ফেসবুকে আড়াই বছর প্রেম করে বিয়ে করার কথা বলে প্রেমিককে নিয়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা পড়েছে কথিত প্রেমিকা সুমন মিয়া। প্রেমিকের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে সে হাতিয়ে নিয়েছে তিন লাখ টাকার বেশি। ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনার বেতাগী পৌর এলাকায়। প্রতারককে বরগুনা কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, রাজধানীর লালবাগের মো. সুমন মিয়া ফেসবুকে জারা খান নামে দিয়ে ফেক আইডি খোলে। প্রোফাইলে সুন্দরী তরুণীর ছবি দিয়ে বায়োগ্রাফিতে নিজেকে মডেল হিসেবে উল্লেখ করে। এ আইডির মাধ্যমেই তার পরিচয় হয় বেতাগী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের টুটুল রায়ের সঙ্গে। কথিত জারা খান কিছুদিন চ্যাটিং করার পর টুটুলকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। সুন্দরীর সে প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যায় টুটুল।
জারা খান নিজেকে বিত্তশালী বাবার কন্যা বলে পরিচয় দেয়। শুরু হয় হয় তাদের গভীর ভালবাসার সম্পর্ক। মাঝে মধ্যেই ভিডিও কলে সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে কথা বলাতো জারা, যেন টুটুলের কোনো সন্দেহ না হয়। বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে টুটুলের কাছে টাকা চাইত জারা। প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া টুটুলও চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টাকা পাঠিয়ে দিতো। এভাবে তিন লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক সুমন মিয়ার এ চক্র।
এভাবে চলে আড়াই বছরের কঠিন প্রেম। এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের ধর্ম। পরে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার শর্তে টুটুল রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণে রাজি হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফ্ল্যাট কিনে দিতে এবং বিয়ে করার জন্য টুটুলকে ঢাকায় নিয়ে যেতে রোববার বেতাগী আসে জারা খানের আপন ছোট ভাই পরিচয় দেওয়া প্রতারক সুমন। টুটুল তার বন্ধুদের সঙ্গে সুমনকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
সুমন খানের পোশাক এবং কথাবার্তায় সন্দেহ হলে টুটুলের বন্ধুরা তাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এরই মধ্যে পরিবারের লোকজনের অগোচরে সুমন খানের সঙ্গে ঢাকা যাওয়ার জন্য টুটুল বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এ খবর পেয়ে বিভিন্ন পথে ফাঁদ পাতে টুটুলের বন্ধুুরা। পার্শ্ববর্তী বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি বাসস্ট্যান্ডে সুমন ও টুটুলকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে টুটুলের বন্ধু ও ছাত্রলীগ নেতা মো. রাফি সিকদারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা নিয়ামতি গিয়ে সুমন ও টুটুলকে নিয়ে আসে।
জিজ্ঞাসাবাদে সুমন খান স্বীকার করে- জারা খান হিসেবে সে নিজেই এতদিন টুটুলের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেছিল। সুমন খানের ব্যাগ তল্লাশি করে বোরকা, মেয়েদের পোশাক, রূপচর্চার বিভিন্ন উপকরণ, কৃত্রিম চুল ও নেশা জাতীয় ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এসব উপকরণসহ সুমন খানকে বেতাগী থানায় সোপর্দ করা হয় এবং টুটুল রায়কে অচেতন অবস্থায় পুলিশের উপস্থিতিতে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বেতাগী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুস সালাম জানান, সুমন খানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারন করে প্রতারণা করার অভিযোগে মামলা করেছেন টুটুল রায়ের বড় ভাই হরি চন্দ্র রায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে বরগুনা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply