বিশ্বাস পরিবার:ঠিকাদারি, ঘাট, বাসস্ট্যান্ড মাদক কারবারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রক Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৩ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বিশ্বাস পরিবার:ঠিকাদারি, ঘাট, বাসস্ট্যান্ড মাদক কারবারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রক

বিশ্বাস পরিবার:ঠিকাদারি, ঘাট, বাসস্ট্যান্ড মাদক কারবারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রক

বিশ্বাস পরিবার:ঠিকাদারি, ঘাট, বাসস্ট্যান্ড মাদক কারবারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রক




তৈমুর ফারুক তুষার॥ সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু খুলনার বিশ্বাস পরিবারের আধিপত্যের সূর্য অস্ত যায় না। সরকার পাল্টালেও তাদের আধিপত্যের পরিবর্তন হয় না। খুলনার রাজনীতি, ঠিকাদারি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘাট ও বাসস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ এবং মাদক কারবারে এই পরিবারটির একচেটিয়া দৌরাত্ম্য স্বাধীনতার আগ থেকে। বর্তমানে সেই দৌরাত্ম্য আরো বেড়েছে। পরিবারটির সদস্যরা কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি, কখনো জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজেদের এ আধিপত্য অটুট রেখেছেন।

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্দুর রহমান ওরফে টুকু বিশ্বাসের হাত ধরে খুলনায় বিশ্বাস পরিবারের দাপুটে যাত্রা শুরু। তিনি ছিলেন তৎকালীন খুলনার প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী খান এ সবুরের ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন। টুকু বিশ্বাস বেশ কয়েকটি বিয়ে করেন। ৯ ছেলে, ৯ মেয়ের জনক তিনি। খান এ সবুরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে খুলনায় বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় খান এ সবুরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে অনেক নৃশংসতা চালান টুকু বিশ্বাস। দেশ স্বাধীন হলে এসব অপকর্মের দায়ে তিনি কারাভোগ করেন।

 

 

স্বাধীনতার পর টুকু বিশ্বাসের সন্তানরা একেকজন একেক দলে যোগ দেন। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে; বিশ্বাস পরিবারের একাধিক সদস্য ওই দলের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে খুলনায় আবির্ভূত হন। এ পরিবারের একজন সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন। সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের আমলে জাতীয় পার্টি থেকে গাফফার বিশ্বাস সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

 

গাফফার বিশ্বাস জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হলেও একসময় বিএনপি করতেন। বর্তমানে তিনি খুলনা জেলা মোটর বাস মালিক সমিতির সভাপতি, খুলনা আন্ত জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি, খুলনা নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি, খুলনা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি, খুলনা ট্যাংক-লরি মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি, খুলনা পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক।

 

 

খুলনা পুলিশ প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা খুলনার ৭ নম্বর ঘাট দখলে নেন গাফফার বিশ্বাস। এরপর তিনি ৭ নম্বর ঘাট থেকে বয়ড়া পর্যন্ত মাদক স্পটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেন। সেই ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত ওই মাদক স্পটগুলো বিশ্বাস পরিবারের নিয়ন্ত্রণে।

 

 

পুলিশ সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের ঘাট এলাকা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছেন খুলনার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস। আনিসুর রহমান বিশ্বাস গাফফার বিশ্বাসের বড় ভাই সাত্তার বিশ্বাসের ছেলে এবং গাফফার বিশ্বাসের মেয়ের জামাই। সাত্তার বিশ্বাসও একসময় ওই এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন। গত বছর খুলনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মাদক কারবারিদের একটি তালিকা ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই তালিকায় আনিসুর রহমান বিশ্বাসের নাম ছিল। বিএনপি আমলে তিনি দলটির প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনির জেল হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন আনিসুর। গত বছর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।

 

 

গাফফার বিশ্বাসের দুই ছেলে সোহেল বিশ্বাস ও শিবলী বিশ্বাস। শিবলী বিশ্বাস খুলনা জেলা মোটর বাস মালিক সমিতির সহসভাপতি। সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ঘিরে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। বাসে মালামাল তোলার কাজে নিয়োজিত হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নও তাঁর নিয়ন্ত্রণে। এই শ্রমিকরা প্রায়ই বাসে মালামাল তুলতে গিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েক গুণ বেশি অর্থ আদায় করে।

 

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাস মালিক জানান, গাফফার বিশ্বাস ও তাঁর ছেলের কাছে খুলনার পরিবহন সেক্টর জিম্মি। কোনো বাস মালিক নতুন একটি বাস নামাতে গেলে তাঁদেরকে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। সাধারণ বাস মালিক তো বটেই, আশপাশের জেলার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারাও খুলনা রুটে বাস নামাতে গেলে বিশ্বাসদের চাঁদা দিতে বাধ্য।

 

 

গাফফার বিশ্বাসের আরেক সন্তান সোহেল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অনেক অভিযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালের পর সেনা সমর্থিত সরকারের সময় এক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সোহেল বিশ্বাসকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক মারধর করেন। ২০১৫ সালে খুলনার নূরনগর এলাকায় সোহেল বিশ্বাসের বাসায় খুন হন তাঁর স্ত্রী নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সারাহ ফারগুশান তন্বী। এ ঘটনায় সোহেল বিশ্বাস ও তাঁর বোনকে আসামি করে মামলা হয়। মামলায় সোহেল বিশ্বাস বেশ কিছুদিন কারাবন্দি ছিলেন। বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় স্থগিত আছে।

 

 

খুলনা আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে বিশ্বাস পরিবারের মূল শক্তি আওয়ামী লীগ সোনাডাঙ্গা থানা শাখার সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বুলু বিশ্বাস। তিনি খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি। সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে অর্থবিত্তে ফুলে-ফেঁপে ওঠেন বুলু বিশ্বাস।

 

 

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বুলু বিশ্বাস থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও তাঁর প্রভাব খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার চেয়ে বেশি। বুলু বিশ্বাস ও তাঁর ভাই ওমর বিশ্বাস পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পূর্ত বিভাগের যাবতীয় কাজ ভাগ-বাটোয়ারায় নেতৃত্ব দেন। ওমর বিশ্বাসকে অনেকে অঘোষিত নির্বাহী প্রকৌশলী বলে থাকেন।

 

 

বুলু বিশ্বাসের ভাগ্নে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান। তিনি খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত বছর যোগ দেন আওয়ামী লীগে। আলোচিত এক-এগারোর সময় বিশ্বাস পরিবারের সদস্য টিপু বিশ্বাস আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে পুকুরে ডুবে মারা যান।

 

 

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘বিশ্বাস পরিবারের ওরা সুবিধাবাদী। বিএনপিতে কয়েকজন ছিল। আমরা তাদের দল থেকে বের করে দিয়েছি। ওরা আমাদের দলের সঙ্গে বেঈমানি করেছে। আওয়ামী লীগ খুলনায় যে কয়টি বিতর্কিত পরিবারকে সামনে নিয়ে এসেছে, বিশ্বাস পরিবার তাদের অন্যতম।

 

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চিহ্নিত রাজাকার পরিবারের সদস্যরা এখন খুলনা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। তাঁরা এতটাই প্রভাবশালী যে, আমরাও এখন প্রকাশ্যে তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারি না। এর চেয়ে হতাশার আর কী হতে পারে!

 

 

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘টুকু বিশ্বাস ছিলেন খান এ সবুরের ঘনিষ্ঠ। পরবর্তী সময়ে বিশ্বাস পরিবারের নতুন প্রজন্ম বিএনপিতে যুক্ত হয়। ভাইদের মধ্যে বুলু বিশ্বাস আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সোনাডাঙ্গা এলাকায় বিশ্বাস পরিবারের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তাঁরা বিএনপি করলেও এক-দেড় বছর নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ফলে তাঁদের আওয়ামী লীগে নেওয়া হয়েছে। তবে দলের নাম ব্যবহার করে তাঁদের কোনো অপকর্ম করার সুযোগ নেই।সুত্র,কালের কন্ঠ

 

 

সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বুলু বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বাবা মুসলিম লীগ করতেন। খান এ সবুরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি মুসলিম লীগে যুক্ত ছিলেন এটুকুই। অন্য কোনো অপরাধে তিনি যুক্ত ছিলেন না।’ নিকটাত্মীয়দের বিভিন্ন দলে যুক্ত থাকা ও সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বুলু বিশ্বাস বলেন, ‘তারা বিএনপিতে ছিল। আমাদের চেষ্টায় তারা এখন আওয়ামী লীগে ফিরেছে।

 

 

ঠিকাদারি কাজের ভাগ-বাটোয়ারা প্রসঙ্গে বুলু বিশ্বাস বলেন. ‘এগুলো মিথ্যা কথা। এখন সব টেন্ডার অনলাইনে হয়। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই। আমি যোগ্যতা দিয়েই কাজ করছি। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।

 

 

সাবেক সংসদ সদস্য গাফফার বিশ্বাস বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষরা নানা কুৎসা রটাচ্ছে। পরিবহন সেক্টরে কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই। আমি টেন্ডারে অংশ নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে মালামাল হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেয়েছি। এর সঙ্গে আমার ছেলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নতুন বাস নামানোর ক্ষেত্রে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।

 

 

তিনি আরো বলেন, ‘আমার পুত্রবধূ হত্যার অভিযোগটিও সত্য নয়। সে আত্মহত্যা করেছে। বর্তমানে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটি স্থগিত আছে।’

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD