বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ কক্সবাজারের চকরিয়ায় বহুল আলোচিত মা-মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় হারবাং ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে নির্যাতিত পারভিন বেগম বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বাদী এ ঘটনায় হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনেছেন।
এ মামলায় আসামিদের মধ্যে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন, হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম, উত্তর হারবাং বিন্দারবান খিলের জিয়াবুল হকের ছেলে নাছির উদ্দিন (২৮), মাহবুবুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (১৯) ও এমরান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২)।
মামলার বাদী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভিন বেগম মামলায় উল্লেখ করেছেন, তারা রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও বর্তমানে সপরিবারে পটিয়া উপজেলার শান্তির হাট কুসুমপুরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। ওই ভাড়া বাসা থেকে গত ২১ আগষ্ট দুপুরে পারভিন বেগম, তার ছেলে এমরান, ছেলের বন্ধু ছুট্টু এবং দুই মেয়ে রোজিনা আক্তার ও সেলিনা আক্তার শেলীকে নিয়ে চকরিয়া উপজেলার হায়দার নাশি এলাকায় ছোট মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। তারা প্রথমে মাইক্রোবাস যোগে সাতকানিয়ার কেরানি হাটে যান। সেখান থেকে একটি সিএনজিচালিত বেবী ট্যাক্সিতে করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে ছোট মেয়ের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে আবারও রওনা দেন।
লাল ব্রিজ নামক এলাকায় পৌঁছলে পেছন থেকে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে ৬ জন লোক ধাওয়া দেয়। সিএনজি চালক ভয় পেয়ে সিএনজি চালিয়ে হারবাং পহর চাঁদা এলাকায় নির্মাণাধীন রেললাইনের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে ওই মোটরসাইকেল আরোহীরা তাদেরকে আটক করে কিল ঘুষি মারতে থাকে। অভিযুক্তরা তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার, মোবাইল কেড়ে নিয়ে নেয়। এরপর তাদের কোমরে রশি বেঁধে মারতে মারতে রাস্তায় হাটিয়ে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যান।
মামলায় বাদী আরও উল্লেখ করেছেন, ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। চেয়ারম্যান প্রথমে পারভিন বেগমের মেয়ে সেলিনা আক্তার শেলীকে তলপেটে লাথি মারেন। এরপর চেয়ার দিয়ে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়েও আঘাত করেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে হারবাং ফাঁড়ির পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
পারভিন বেগম আরও জানান, তাদের গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে রাস্তায় হাটিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়। আসামিরা পরিকল্পিতভাবে এসব করেছে। মামলার আসামিদের মধ্যে পুলিশ গত ২৪ আগস্ট ভোররাতে নাছির উদ্দিন (২৮), নজরুর ইসলাম (১৯) ও জসিম উদ্দিনকে (৩২) গ্রেপ্তার করেন। ওইদিনই তাদের চকরিয়া সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দেয়া হয়। আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেব শুনানি শেষে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, মামলা রুজু করা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি এ ঘটনার সময় চট্টগ্রামে ছিলেন। মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা তিনি মোবাইলে জানতে পেরে গ্রামপুলিশ পাঠিয়ে জনতার কবল থেকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য সহযোগিতা করেছেন।
পারিভিন বেগম ও তার দুই মেয়ে জামিনে মুক্তি পেয়ে ২৫ আগস্ট বিকালে চকরিয়া থানায় উপস্থিত হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলা বাদী পারভিন বেগমের আইনজীবী এডভোকেট ইলিয়াছ আরিফ জানান, এ মামলাটি রুজু হওয়ার সাথে সাথে পুলিশ চাইলে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
Leave a Reply