বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২২ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরিশাল নগরীর এক প্রবাসীর স্ত্রী দুই সন্তানের জননীর মৃত্যু নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন ও ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। মৃত্যুর দুই ঘন্টা আগে বাবাকে ফোন করে বাঁচার আকুতি জানানোয় হত্যাকান্ডের ঘটার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
নিহতের পরিবার হত্যার বিচার দাবি করছেন। এদিকে, হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সন্দেহে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত প্রাইভেট শিক্ষক সুমনও ঘটনার পর থেকেই লাপাত্তা। যে কারণে অতিদ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি নিহতের পরিবারের।
ঘটনার পর থানায় মামলা দেয়ার জন্য বারবার গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ এমন অভিযোগ নিহতের পরিবারের।
কোতয়ালি থানা পুলিশ নিহতের স্বজনদের বলেছেন আদালতে মামলা করতে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত তারা কিছুই করতে পারবে না। এ তথ্য জানায় নিহতের পরিবার। তারা মনে করেন, পুলিশ এখনই গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি না দেখলে তাদের মেয়ে হত্যাকান্ডেরর সুষ্ঠু বিচার হবে না।
নিহতের নাম তাসবিয়া আক্তার (২৬)। দুই সন্তান নিয়ে বাস করতেন নগরীর রূপাতলী এলাকার পারুল মঞ্জিল ভবনে। তিনি নলছিটি উপজেলার নলবুনিয়া এলাকার ফরিদ উদ্দিনের মেয়ে এবং সৌদি প্রবাসী কবির হোসেনের স্ত্রী। গত ৩০ মার্চ তার মৃত্যু হয়েছে।
তাসবিয়ার বাবা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন ও সৌদি প্রবাসী ভাই মোঃ তাজ সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, সন্তানকে প্রাইভেট পড়াতেন কালিজিরা এলাকার সানরাইজ কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক ইলিয়াস হোসেন সুমন। তাদের ধারণা এ শিক্ষকের সঙ্গে তাসবিয়ার ভাল সখ্যতা ছিলো। যে কারণে বাসায় আসা-যাওয়া ছিলো। বিভিন্ন সময় সুমন বিপুল অংকের টাকা তাসবিয়ার কাছ থেকে ধার বাবদ নিয়েছে। কিন্তু টাকা চাইলে গড়িমশি শুরু করে। গত ২৯ মার্চ শিক্ষক সুমন ও তার স্ত্রী তাসবিয়াকে তার বাসায় গিয়ে লাঞ্ছিত এমনকি মারধরও করেন।
এরপর ঘটনার দিন ৩০ মার্চ সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে তাসবিয়া তার বাবাকে মোবাইলে ফোন করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আকুতি জানায়, আমি মরে যাচ্ছি। আমাকে বাঁচাও। মেয়ের আকুতি শুনে বাবা ফরিদ উদ্দিন দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে রূপাতলীর ভাড়া বাসায় গিয়ে মেয়ের লাশ দেখতে পান। তখন ওই ঘরের মধ্যে শিক্ষক সুমন এবং তাসবিয়ার দুই সন্তান অবস্থান করছিলো। কিন্তু সন্তানের লাশ দেখে বাবা হতবিহ্বল হয়ে পড়লে কৌশলে সটকে পড়েন সুমন। যার প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার রাসেল।
নিহত তাসবিয়ার ভাই মোঃ তাজ দাবি করেন, তার বোনের কাছে দুলাভাইয়ের পাঠানো ৭/৮ লাখ নগদ টাকা ছিলো। শিক্ষক সুমন তার বোনকে ফুঁসলিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং টাকা চাওয়ায় হত্যার স্বীকার হয়েছে বলে সন্দেহ ভাই তাজের।
এদিকে, তাসবিয়ার বাবা ফরিদ উদ্দিন বলছেন, আমার মেয়ে সুখের সংসার করছিলো। দাম্পত্য জীবনে তেমন কোনো সমস্যা ছিলো না যে তাকে আত্মহত্যা করতে হবে। শিক্ষক সুমনই তাকে হত্যা করেছে। মেরে ফেলার আগের দিন সুমনের স্ত্রী বাসায় এসে তাসবিয়াকে মারধর করেছে বলে দাবি তার।
তাসবিয়ার স্বামী সৌদি প্রবাসী কবির হোসেন মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, ১০ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। সংসারে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী আত্মহত্যা কেন করবে? আমাদের সংসারে সুখ শান্তির কমতি ছিলো না। তিনিও দাবি করেন, শিক্ষক সুমনই আমার স্ত্রীকে মেরেছে, আমি এই হত্যার বিচার চাই।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারি পুলিশ কমিশনার (কোতয়ালি) মো. রাসেল সাংবাদিকদের বলেছেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। রিপোর্ট আসার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply