বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন
এম.কে. রানা॥ বরিশাল নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ১২ হাজার অবৈধ ইজিবাইক (হলুদ অটো/বোরাক)। এসকল অটোরিক্সা এক সময় সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স দিয়ে সড়কে নামলেও দীর্ঘ প্রায় দুই বছর যাবত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম। ফলে নগরীতে চলাচলকৃত সকল অটোরিক্সা-ই এখন অবৈধ।
প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও নগরীতে যানজট সৃষ্টির অন্যতম বাহন অবৈধ এ ইজিবাইকগুলো মালিক সমিতির ব্যানারে মাসোয়ারা দিয়ে চলছে। লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকার সুযোগে জেলা ও মহানগর ইজিবাইক সংগঠনের নামের আড়ালে অবৈধ একটি চক্র এ খাত থেকে প্রতি বছর প্রায় ২২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
আর রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। যদিও সিটি কর্পোরেশন প্রদত্ত ২৬শ ১০টি অটোরিক্সার লাইসেন্স নবায়ন করে পূর্বে প্রতি বছর প্রায় সোয়া কোটি টাকার রাজস্ব আয় হতো বিসিসি’র।
তবে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে জানিয়ে ট্রাফিক বিভাগ বলছে, কোন ধরণের যানবাহনে চাঁদাবাজী চলবে না। এছাড়া অটো তৈরীর কারখানা/গ্যারেজে নতুন অটো তৈরী বন্ধ করতে বিআরটিএ-কে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর বিআরটিএ বলছে, শীঘ্রই অভিযান চালানোর কথা।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ ও সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের আমলে ২৬শ ১০টি ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল।
জানা যায়, ওই সময় একটি লাইসেন্স দিয়ে দু/তিনটি ইজিবাইকও নগরীতে চলাচল করতো। গত অর্থবছরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইজিবাইকের লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ রাখে সিটি কর্পোরেশন। ফলে নগরীতে চলাচলকৃত সকল ইজিবাইক এখন অবৈধ। এদের বৈধ কোন লাইসেন্স নেই।
অনুমোদন ছাড়াই এ নগরীতে চলছে প্রায় ১২ হাজার অবৈধ ইজিবাইক। বর্তমানে জেলা ও মহানগর ইজিবাইক শ্রমিক সংগঠনের আড়ালে ওই ১২ হাজার অবৈধ ইজিবাইক প্রতি মাসে গাড়ি প্রতি ১৫শ’ টাকা মাসোয়ার নিয়ে বৈধতা পাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, ১২ হাজার ইজিবাইক থেকে মাসিক ১৫শ’ টাকা তুললে তা বছরে দাড়ায় প্রায় ২২ কোটি টাকা।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সড়ক থেকে এতো টাকা আদায় হলেও তার কোন অংশই পাচ্ছে না বিসিসি। সূত্র বলছে, পূর্বেকার ২৬শ’ ১০টি লাইসেন্স নবায়ন ফি বাবদ প্রতি বছর প্রায় সোয়া কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো সিটি কর্পোরেশনের।
আর বিষয়টি জেনেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগ। এদিকে অবৈধ ইজিবাইকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতিদিন নতুন নতুন ইজিবাইক নগরীর রাস্তায় নামছে। ফলে তৈরী হচ্ছে যানজট, ঘটছে দুর্ঘটনা আর যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক সদস্যরা।
সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন শাখার সুপারিন্টেনডেন্ট মোঃ সোহেল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজী না হয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
বিসিসি’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহামুদ জুয়েল বলেন, তিনি শুধুমাত্র রুটিন ওয়ার্ক পালন করছেন। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যোগদান করলে তিনি সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) মোঃ জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, নগরীতে অবৈধ ইজিবাইক উচ্ছেদের মূল দায়িত্ব বিআরটিএ’ এর। তাছাড়া অবৈধ এ সকল ইজিবাইক বন্ধের ব্যাপারে আরডিসি মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সভার রেজুলেশনে বিষয়টি বাস্তবায়নে বিআরটিএ-কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সরেজমিনে বিভিন্ন অটো তৈরীর গ্যারেজে গিয়ে নতুন কোন অটো তৈরী করতে নিষেধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
যানজট প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধু ট্রাফিক বিভাগের একার পক্ষে শহর যানজটমুক্ত করা সম্ভব নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ভোরের কাগজকে জানান, ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযানে অবৈধ ইজিবাইক আটক করা হচ্ছে। তবে বিএমপিতে ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় তুলনামূলকভাবে আটক করা সম্ভব হচ্ছে না বলেন তিনি।
বরিশাল বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোঃ আতিকুল ইসলাম জানান, আরডিসি সভার রেজুলেশন এখনো তাদের হাতে পৌঁছায়নি। তবে জেলা প্রশাসকের বরাত দিয়ে তিনি জানান, অবৈধ এসকল ইজিবাইক উচ্ছেদ ও নতুন ইজিবাইক তৈরী বন্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
Leave a Reply