রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার বেতাগী উপজেলার বেতাগী পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডে জমি বিরোধে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রতিবন্ধীসহ স্থানীয় নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মাতৃছায়া জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আবুল বাশার স্ত্রীকে দিয়ে ধর্ষণ মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রসূতি মায়েদের নিজে সিজার করানোসহ একাধিক অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, বরগুনার বেতাগী পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডে বাসস্ট্যান্ডের পূর্বপাশে ২০১৮ সালের মে মাসে সরকারি অনুমোদন বিহীন মাতৃছায়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি ক্লিনিক গড়ে ওঠে। চিকিৎসবিহীন পরিচালক আবুল বাশার নিজেই প্রসূতি মায়েদের সিজার করানো, মাদকব্যবসা ও নারী রোগীদের শ্লীলতাহানি ও ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ক্লিনিকের অন্তরালে রয়েছে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ।
ক্লিনিকের সামনের বাসিন্দা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, স্থানীয় কিছু নামধারী আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সিজার করছেন তিনি। ক্লিনিকে কর্মরত কর্মীদের মাধ্যমে মাদকের ব্যবসা করছেন। যখনই ক্লিনিকের পরিচালক আবুল বাশারের বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তখনই স্থানীয় কিছু সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগ নেতারা তার পক্ষে এসে কথা বলেন।
এদিকে স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, বেতাগী পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আতাহার সিকদারের ৩ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন ক্লিনিকের মালিক আবুল বাশার। জমির মালিক মৃত হাতেম আলী সিকদার তার দুই পুত্র আতাহার সিকদার, মোতাহার সিকদার ও এক কন্যা চন্দ্রভানু। এরা ওয়ারিশ সূত্রে মালিক এবং জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ করে। আর্থিক অভাব-অনটন থাকার কারণে এসব ওয়ারিশরা বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় কর্মস্থল বেছে নেন। মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসেন। দেড় মাসে পূর্বে শারীরিক প্রতিবন্ধী আতাহার সিকদারের স্ত্রী হাচনাবানু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার কন্যা পারুল বেগম বেতাগী মাতৃছায়া জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা করানোর ভর্তি হয়। ক্লিনিকের পরিচালক আবুল বাশার রোগীকে তিন মাস তার ক্লিনিকে থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে হবে বলে জানান। এ সময় আতাহার সিকদারের কন্যা পারুল বেগমকে আবুল বাশার অনৈতিক কুপ্রস্তাব দেন।
ক্লিনিকের সামনে স্থানীয় বাসিন্দা মো. স্বাধীন মিয়া জানান, আবুল বাশার দৈনিক বিজয়ের বাণী, বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার কথিত সম্পাদক ও প্রকাশক পরিচয় দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানিসহ চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন।
বেতাগী বাসস্ট্যান্ডের হোটেল ব্যবসায়ী শওকত হোসেন জানান, আবুল বাশার স্থানীয় সুবিধাবাদী নেতা ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকেন। আবুল বাশার তার স্ত্রীকে দিয়ে নিরীহ সত্যের পক্ষে কথা বলা ওই এলাকার মো. আব্দুর বাজ্জাক ও স্বাধীন নামের দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দেওয়ার জন্য বেতাগী থানায় গিয়েছিলেন। এর আগেও তিনি কিছু নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন।
উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, আবুল বাশার কলাপাড়া, বামনা, পাথরঘাটা, বাকেরগঞ্জ ও বাউফলে এভাবে অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক করেন এবং এসব উপজেলায় একটা করে বিবাহ করেন। তার ক্লিনিকের সরকারি কোনো অনুমোদন না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তার ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়।
বিবিচিনি ইউনিয়নের বাসস্ট্যান্ডে ‘সৈয়দ ইলেকট্রনিক’ এর মালিক সৈয়দ দুলাল বলেন, বিভিন্ন কৌশলে আমার কাছ থেকে বেতাগী ক্লিনিক শুরু করার সময় ৭ লাখ টাকা নিয়েছেন। এখনও তিনি সাড়ে ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেননি।
জমি দখল বিষয় ক্লিনিকের পরিচালক আবুল বাশার বলেন, তাদের কাছে টাকা পাব এজন্য জমি দখল নিয়েছি। ক্লিনিক সম্পর্কে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এরা বিভিন্নভাবে মিথ্যা সংবাদ ছাড়াচ্ছেন।
বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তেন মং বলেন, মাতৃছায়া জেলারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আবুল বাশারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। তার বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেতাগী থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুস সালাম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। জমি জমা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি মৌখিক অভিযোগ হয়েছে। তবে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সুত্র, কালের কন্ঠ
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply