শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫১ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ ইলিশ ধরা, পরিবহন ও বিক্রিতে চলছে ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এর ফলে জেলেরা ইলিশ শিকারে যাচ্ছে না। যতদূর চোখ যায় নদীতে নেই মাছ ধরার কোনো ট্রলার।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটার বিএফডিসি ঘাটে নেই মাছ কেনা বেচার নিত্যদিনের কোলাহল। কর্মহীন হয়ে পড়েছে ঘাটের শ্রমিকরা।
সরেজমিন ঘুরে বিএফডিসি ঘাটে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। ঘাটে কোনো প্রকার মাছ ও ট্রলার না আসায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন ঘাট শ্রমিকরা।
ইয়াছি, সিদ্দিক, রফিকসহ বেশ কয়েকজন ঘাট শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আয়-রোজগার না থাকায় তাদের দিন কাটছে আর্থিক দুর্দশায়। বিকল্প কোনো পেশা না থাকায় বিষণ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই তাদের।
ঘাট শ্রমিকদের আক্ষেপ, নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন জেলেদের ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে চাল বিতরণ করা হলেও কর্মহীন ঘাট শ্রমিকদের জন্য নেই কোনো ব্যবস্থা। জেলেদের মতো কর্মহীন ঘাট শ্রমিকদেরকেও নিবন্ধিত করে সরকারি সহায়তা প্রদানের দাবি বিএফডিসি ঘাট শ্রমিকদের।
ঘাট শ্রমিক রাসেল বলেন, ৫ বছর ধরে বিএফডিসি ঘাটে ইলিশ পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। নিষেধাজ্ঞায় সরকার শুধু মাত্র কর্মহীন জেলের সহায়তা প্রদান করেন। কিন্তু আমরা ঘাট শ্রমিকরাও যে নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন হয়ে যাই তা কেউ ভাবেন না। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছিনা, কখনো কখনো না খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে।
ঘাট শ্রমিক হাবিবুর রহমান বলেন, আমি এই ঘাটের সরদার। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘাট শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি এখানে। নিষেধাজ্ঞার চলায় অন্যান্য ঘাট শ্রমিকদের মতো আমিও ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছি। বিকল্প কোনো পেশা না থাকায় জেলেদের মতো আমরাও কর্মহীন। সরকার কর্মহীন জেলেদের ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে চাল দিচ্ছেন। ঘাট শ্রমিকদেরকেও এই ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় এনে অল্প সল্প সহায়তাও করা হলে, ঘাট শ্রমিকদের আর্থিক দুর্দশা কিছুটা তো কমতো।
বিএফডিসি ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন শান্ত বলেন, পাথরঘাটা বিএফডিসি অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে ৬১৩ জন ঘাট শ্রমিক আছেন। বিকল্প কোনো পেশা না থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময় কর্মহীন হয়ে যেতে হয় ঘাট শ্রমিকদের। সরকার জেলেদের পাশাপাশি ঘাট শ্রমিকদেরকেও যদি ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় নিতেন ঘাট শ্রমিকদের আর্থিক দুর্দশা লাঘব হতো। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি ঘাট শ্রমিকদেরকেও ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নেয়া হোক।
যোগাযোগ করা হলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, আসলে ঘাট শ্রমিকদের জন্য সরকারের কোনো বরাদ্দ নেই বিধায় আমাদের কিছু করার থাকে না। তবুও ঘাট শ্রমিক ছাড়াও নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন হওয়া অন্যান্য শ্রমিকদেরকেও সরকারি সহায়তার অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা এ বিষয়ে ঊর্ধতন কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করেছি।
বরগুনার ডিসি হাবিবুর রহমান বলেন, ঘাট শ্রমিকদের বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করা হবে। যদি তাদের জন্য বরাদ্দ আসে তবে সে সহায়তা তাদের পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় সাগর-নদীতে ৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে ২২ দিনের ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত অবধি। এ ২২দিন প্রজনন ক্ষেত্রে মাছ ধরা যাবে না। এ সময় মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ। এ আইন আমান্য করলে জেল অথবা জরিমানা এবং উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
Leave a Reply