বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৪ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বদলে গেছে বরিশাল নগরীসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের দৃশ্যপট। নগরীর রাস্তাঘাট অনেকটাই জনমানবশূন্য। ওষুধ এবং মুদী দোকান ছাড়া বন্ধ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। করোনা এড়াতে জনগণকে নিজ নিজ ঘরে রাখতে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। বিভিন্ন স্থানে চেক পোস্ট স্থাপন করে জনসমাগম রোধে কাজ করছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার আইনশৃংখলাবাহিনীর কঠোরতায় ফাঁকা হয়ে গেছে এ জনপদ।
বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লা রুটের ল -বাস চলাচল বন্ধ হয় গত মঙ্গলবার। নগরীর অভ্যন্তরীণ গনপরিবহন বন্ধ হয় পরদিন বুধবার। তবে মঙ্গলবার রাতেও বরিশাল আসে বেশ কিছু নৈশবাস। ওইসব বাসের যাত্রী ছাড়াও বুধবার রাত পর্যন্ত মাওয়া ফেরিঘাট থেকে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে আসা হাজার হাজার মানুষ পিকআপ-ট্রাকে বরিশাল নগরীতে ঢুকে। ফলে নগরীর দুটি বাস টার্মিনালসহ কয়েকটি এলাকা ছিল লোকারণ্য।
বুধবার রাতে স্থানীয় প্রশাসনের স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের এমপি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বৃহস্পতিবার নগরীতে সব ধরনের যানবাহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং জনসমাগম বন্ধে কঠোর নির্দেশ দেন। প্রশাসনের কঠোর নজরদারীতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরিশাল নগরীর সড়কগুলো জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে। নগরীর গীজ্জমহল্লা, সদর রোডসহ কয়েকটি এলাকায় একাধিক জনসমাগম দেখা গেলে পুলিশ সেখানে মৃদু লাঠিচার্জ করেছে।
জেলা প্রশাসক এস.এস অজিয়র রহমান জানান, বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নগরী ও তার আশপাশে ১২টি খেয়াঘাটে যাত্রী পাড়াপাড় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একটি নৌকায় অনেক সংখ্যক যাত্রী একসঙ্গে পাড় হওয়া করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশংকায় জেলা প্রশাসন এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের দপ্তর থেকে জানানো হয়, জনসমাগম প্রতিরোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম নগরীতে গতকাল টহল দিয়েছে। এসময় বাংলাবাজার এলাকায় একটি জুতার দোকান খোলা রেখে একাধিক ক্রেতার সমাগম করায় ওই দোকান মালিককে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে ভর্তি হওয়া দুই রোগী করোনাভাইরাস মুক্ত প্রমাণিত হওয়ায় ছাড়পত্র পেয়ে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কাশি ও জ্বর নিয়ে বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদকাঠি এলাকার বিধি আক্তার (২৬) বুধবার (২৫ মার্চ) দুপুরে ভর্তি হন। একইদিন বিকেলে একই কারণে আগৈলঝাড়া উপজেলার চান্দু গ্রামের তৃষ্ণা (৪৫) এবং এরআগে মঙ্গলবার মধ্যরাতে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নিমদি এলাকার নোমানকে (২৫) ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অপর দুজনের মধ্যে ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় বরিশাল নগরের বাজাররোড এলাকার শাওন (২৩) ও একইদিন রাত ৯ টায় বানারীপাড়া উপজেলার তেতলা গ্রামের স্বপন হাওলাদার (২৭) ভর্তি হন। শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন জানান, বর্তমানে ভর্তি থাকা ৫ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি-না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
এসব প্রসঙ্গে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও শেবাচিম হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সদস্য কর্ণেল (অব:) জাহিদ ফারুক এমপি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সভা শেষে বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় শেবাচিম হাসপাতালে ২শ শয্যার একটি ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রোগী বেশী হলে বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাপোলোতে আরও ২শ শয্যার ইউনিট করা হবে। করোনাভাইরাস সনাক্তের কীট ২/১ দিনের মধ্যে বরিশালে পৌছবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা থেকে দলে দলে মানুষ গ্রাম-গঞ্জে এসেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে কোন ছাড় নয়। অকারণে রাস্তায় নামলেই ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃংখলাবাহিনীকে।
Leave a Reply