মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
গৌরনদী প্রতিনিধি॥ প্রভাবশালীদের দখলের দাপটে অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকী -সাউদের খাল। প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটর খালটির বৃহত্তর ব্যবসায়ী বন্দর টরকীর বন্দর এলাকার প্রায় এক কিলোমিটর খাল প্রায় ২৫ জন প্রভাবশালী দখলে নিয়ে ভরাট করে তারউপর স্থাপনা নির্মান করেছেন।
ফলে খালটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। খাল দখলের ফলে নৌ-পথে ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনে ভোগান্তি ও কৃষি জমিতে সেচ সংকটসহ সাধারন মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী কৃষক, দখলদার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আড়িয়াল শাখা নদী পালরদী নদীর টরকী মোহনা থেকে উত্তরে প্রবাহমান প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটর দৈর্ঘ টরকী-সাউদের খাল। দক্ষিনাঞ্চলের বৃহৎ ব্যবসায়ী বন্দর টরকী বন্দরের কয়েক হাজার ব্যবসায়ী, ক্রেতা. বিক্রেতার মালামাল পরিবহনসহ এলাকার সুন্দরদী, টরকীরচর, বাউরগাতি, বাঘমারা গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকদের ফসল উৎপাদন ও পরিবহনে খালটি খুবই গুরুত্বপূর্ন । প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের দখলের ফলে খালটির প্রায় ১ কিলোমিটর জায়গা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এতে দখলদাররা পাকা, আধাপাকা ভবনসহ নানা স্থাপনা তৈরী করে প্রায় দুই দশক ধরে ব্যবসা বানিজ্য করছেন। বর্তমানে খালটিতে পানি চলাচল সম্পূর্নভাবে বন্ধ রয়েছে।
দখলদারদের মধ্যে রয়েছেন, টরকী বন্দরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রায়ত মোঃ জামাল মুন্সী, ব্যবসায়ী মালেক দেওয়ান, আজিজ মাল, রহুল সিকদার, রব সিকদার, মোঃ ফরহাদ মুন্সী, কমল রায়, শাহ আলম খান, শামীম খান, প্রায়াত মাইনুল ইসলাম, মোশারফ হোসেন, কায়েস শরীফ, শাহাবুব শরীফ, জাকির শরীফসহ প্রায় ২৫ জন। দখলদাররা সকলে প্রভাবশালী রাজতৈনিক দল আওয়ামীলীগ বিএনপির নেতাকর্মী এরা সকলেই খাল ভরাট করে নির্মান করেছেন পাকা, আধাপাকা ভবনসহ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পালরদী নদীর তীঁরে গরে উঠেছে দক্ষিানাঞ্চলের বৃহৎ ব্যবসায়ী বন্দর টরকী। টরকী বন্দরের পূর্ব পাশ পালরদী নদীর সংযোগ মুখ থেকে সাউদের খালের উত্তরে টরকী স্ব-মিলের পাশ খাল ভরাট করে সমতল ভূমিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাকা, আধাপাকা স্থাপনা। দেখে চেনার উপায় নেই যে এখানে কোন দিন কোন খালের অস্থিতত্ব ছিল। শুধু সংযোগ মুখ নয় টরকী-সাউদের খালের টরকী বন্দর এলাকার প্রায় ১ কিলোমিটর কাল ভরাট হয়ে গেছে।
বরিশালের মুলাদী উপজেলার চরকালেখা গ্রামের আবুতালেব হাওলাদার (৬৫) বলেন, টরকী বন্দরের বুক চিরে টরকী-সাউদের খালটি থাকায় আমরা ব্যবসায়ীরা সহজেই নৌপথে মালামাল পরিবহন করতে পারতাম কিন্তু খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে নৌকায় মালামাল তুলতে ভ্যানভাড়া অথবা কুলি দিয়ে মালামাল উঠানামা করতে হয়। এতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টরকী বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দখলদারা এতই ক্ষমতাশালী যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
গৌরনদী পৌর সভার ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল হাকিম খান বলেন, খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে টরকী বন্দরের বর্জ বের হচ্ছে না। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়ে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার ব্যবসায়ীকে। আমি একাধিকবার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে খালটি উদ্ধারে চেষ্টা করে প্রভাবশালী দখলদারদের দাপটে ব্যর্থ হয়েছি।
গৌরনদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুল ইসলাম প্রিন্স এ প্রসঙ্গে বলেন। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, যতই ক্ষমতাধর ব্যক্তি হোক না কেন কাউকে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করতে দেয়া হবে না। খালটি দখলমুক্তসহ দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply