বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ‘আমি বীর বিক্রমের মেয়ে। আমার বাবা যুদ্ধ করেছিল বলেই তোমরা পুলিশ হয়েছ।’ পাল্টা জবাব, ‘আমরাও ভেসে আসিনি। আমিও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আপনার বাবা একা যুদ্ধ করে নাই।’ রোববার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে সরকারি বিধিনিষেধের পঞ্চম দিনে ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে এভাবেই বাগবিতণ্ডায় জড়ান চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তা। এদিন দুপুরে তিন পক্ষের বাগবিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ উৎসুক জনতার নানা পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, দুপুরে এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইবা শওকত জিমি ভ্রাম্যমাণ আদালতের চেকে পড়েন। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসন অফিসের সহকারী কমিশনার শেখ মো. মামুনুর রশিদ আদালত পরিচালনা করছিলেন। নিউ মার্কেট থানার একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে একাধিক পুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্বরত ছিলেন।
চেক পোস্টে পুলিশ সদস্যরা চিকিৎসকের কাছে তার আইডি কার্ড দেখতে চান। সঙ্গে আইডি কার্ড আনেননি বলে জানান চিকিৎসক জিমি। এরপর তার কাছে মুভমেন্ট পাস দেখতে চাওয়া হয়। এ সময় জিমি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। জিজ্ঞাসা করেন, ডাক্তারের মুভমেন্ট পাস লাগে?
তিনি গাড়িতে বিএসএমএমইউ স্টিকার ও হাসপাতাল থেকে পাওয়া তার লিখিত পাস দেখান। এরপরও পুলিশ তার কাছে আইডি কার্ড দেখতে চান। এ সময় জিমি আরও উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে বলেন, ‘আমি ডাক্তার। করোনার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি। আপনারা কয়জন মরছেন। আমরা ১৩০ জন মরেছি।’ ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আপনি ধমক দিচ্ছেন কেন? আমরা প্রশাসনের লোক। ১০০ বার আপনার কাছে আইডি কার্ড দেখতে চাইতে পারি।’
এরপর চিকিৎসক বলেন, ‘আমি বীর বিক্রমের মেয়ে।’ তখন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আমিও বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। আমরা কি ভাইসা আসছি নাকি?’
‘আমি শওকত আলী বীর বিক্রমের মেয়ে। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল বলেই তোমরা পুলিশ হয়েছ।’ এ সময় সেখানে দায়িত্বরত নিউ মার্কেট থানা পুলিশের পরিদর্শক বলেন, ‘আমিও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আপনার বাবা একা যুদ্ধ করে নাই।’
চিকিৎসক জিমি গাড়িতে উঠতে উঠতে বলতে থাকেন, ‘ডাক্তার হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’ তখন পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘কোনো ডাক্তার হয়রানি হচ্ছে না।’
এরপর গাড়ি রাস্তার একপাশে নিয়ে তিনি (চিকিৎসক জিমি) কেন খারাপ ব্যবহার করেছেন, তা জানতে চান ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি আমাকে তুই-তুকারি করতে পারেন না। জীবন আমরাও দিচ্ছি। আন্দোলনের ভয় দেখাচ্ছেন। আমরা কি ভাইসা আসছি?’
‘আর আমি কে, সেটা এখন তোদের দেখাচ্ছি হারামজাদা।’ এরপর একজন মন্ত্রী ফোন করেছেন বলে মোবাইল ফোন ম্যাজিস্ট্রেটের দিকে এগিয়ে দেন চিকিৎসক জিমি। কিছু সময় কথা বলার পর মোবাইল তার কাছে ফেরত দেন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মো. মামুনুর রশিদ।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি প্রশাসনের লোক। ইউনিফর্ম থাকার পরও সঙ্গে আইডি কার্ড আছে।’ তখন চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ডাক্তার। গায়ে অ্যাপ্রন আছে। আপনি মেডিকেলে চান্স পাননি বলে পুলিশ হয়েছেন।’
এরপর চিকিৎসক জিমি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে ফোন দিয়ে কথা বলতে বলেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয়বার কথা বলেননি। তারা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
চিকিৎসক জিমি দীর্ঘ সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে পুলিশকে স্যরি বলতে বলেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ স্যরি বলেছে কি না, তা জানা যায়নি।
এ বিষয়ে চিকিৎসক সাইবা শওকত জিমি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাস্তার মধ্যে একজন নারী চিকিৎসককে যেভাবে অপমান করা হয়েছে, তা সভ্য কোনো দেশে হতে পারে না। আমি একজন বীর বিক্রমের মেয়ে। আমার বাবা কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার পাঁচবারের চেয়ারম্যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বাই নামে চেনেন। তারপরও এ ধরনের আচরণ করেছে তারা। পুরো ঘটনাটি আমি বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেবে। না নিলে আমি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। এর বিচার চাইতে যেখানে যেখানে যেতে হয় সেখানে যাব।’
সাইবা শওকত জিমি বলেন, ‘আমি ছোট একটা বাচ্চা রেখে শুধু মানুষের সেবা করার জন্য বের হয়েছি। করোনার মধ্যে যেখানে আত্মীয়স্বজনকে রোগীরা পান না, সেখানে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এর বদলে এ ধরনের আচরণ! চিকিৎসকরা পুলিশের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী সচিব শেখ মামুনুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তার (চিকিৎসক) কাছে আইডি কার্ড চাইতেই তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আমাদের গালিগালাজ করতে থাকেন। তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেও পারিনি। একপর্যায়ে বিএসএমএমইউ থেকে ডাক্তাররা এসে ওনার পক্ষ থেকে আমাদের কাছে স্যরি বলেছেন। ডাক্তারদের ভুয়া অ্যাপ্রন লাগিয়ে অনেকেই রাস্তায় বের হয়েছেন। তার আইডি কার্ড নাই, সেটা ভালোভাবে বললেই আমরা ছেড়ে দিতাম। কিন্তু তিনি পুলিশের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তাতে রীতিমতো অবাক হয়েছি। তারপরও চেষ্টা করেছি বিষয়টি সামাল দিতে।’
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। আপনি যদি দেখতে চান, আপনাকে গেজেট পাঠাতে পারি।’
মামুনুর রশিদ বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় আমরা সবাই যুদ্ধ করছি। এমন পরিস্থিতিতে যদি ফ্রন্ট লাইনে থাকা ডাক্তার, প্রশাসন, পুলিশ, সাংবাদিক— নিজেরা যদি এভাবে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি তাহলে সাধারণ মানুষ কী ভাববে? সবার উচিত রাগ সামলে নিজেকে কন্ট্রোল করা।’
বিষয়টি আপনার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি ভাইরাল হয়েছে। কর্তৃপক্ষ হয়ত জেনেছে। তারপরও তিনি যদি অভিযোগ করেন, ভিডিওসহ আমি প্রমাণ করতে পারব কার দোষ কতটুকু।
ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক
https://www.facebook.com/watch/?v=1821726631342146
Leave a Reply