সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন
ইন্দুরকানী প্রতিনিধি॥ দেশের সকল মানুষকে জন্ম নিবন্ধনের আওতায় আনতে ২০০১ সাল থেকে শুরু হয় নিবন্ধন কার্যক্রম। প্রথমে হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হতো। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনের সনদ প্রদান করা হয়। এ ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে অনেক অসঙ্গতি। কারও কারও নামে রয়েছে একাধিক নিবন্ধন সনদ। আর এ সকল সনদের অনেকের নামে, জন্ম তারিখে, পিতা-মাতার নামে ভুল রয়েছে। সনদ ইস্যুর তারিখ ব্যক্তির জন্মের আগেও লিপিবদ্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। জন্ম নিবন্ধন সনদ’র তথ্য ভুলের কারণে ভোগান্তিতে ইন্দুরকানী উপজেলার ৫ ইউনিয়নের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষ।
সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাথীদের ইউনিক আইডি (শিক্ষার্থী পরিচয় পত্র) তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন সনদ ও পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন ভেড়িফাই কপিসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে খোঁজতে গিয়ে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। আবার অনেকের মূল জন্ম সনদের সঙ্গে অনলাইন জন্ম সনদের হুবাহুব মিল নেই। আবার কারও কারও ব্যক্তিগত পরিচিতি নং ১৭ সংখ্যার স্থানে ১৫ সংখ্যা রয়েছে যা শুদ্ধ জন্ম নিবন্ধন সনদ নয়। এ কারণে অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে ইউনিক আইডির জন্য প্রোয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাদের মধ্যে উপজেলার নব গঠিত চন্ডিপুর ইউনিয়নের (সাবেক বালিপাড়া ইউনিয়ন) খোলপটুয়া ওয়ার্ডেরই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর সনদে এ ধরনের ভুল ধরা পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার খোলপটুয়া ওয়ার্ডের অনেকগুলো জন্ম সনদ পাওয়া গেছে তার মধ্যে দু-চারটির তথ্য সঠিক এবং বাকি সব অনলাইনে থাকলেও তার নাম, পিতার নাম, জন্ম তারিখ অথবা নিবন্ধন নম্বর ১৫ সংখ্যা হিসেবে অনলাইনে আপলোড রয়েছে। তবে তা সঠিক নয়। এ কারণে অনেকেই জন্ম নিবন্ধন সনদের ভুল সংশোধন করতে ভিড় জমাচ্ছেন নিবন্ধকের কার্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায়। আর এ জন্য পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
এদিকে, কারও নাম সহজে সংশোধন করা গেলেও জন্ম তারিখের বেলায় হচ্ছে সমস্যা। কাগজ পত্রের তালিকায় এসএসসি সনদের কথা বলা হলেও যাদের বয়স ১৫ বছরের কম তাদের এসএসসি সনদ দাখিল করা অসম্ভব। যাদের শিক্ষাগত সনদ রয়েছে তাদের অনেকের বয়স সংশোধন করতে গিয়ে দেখা গেছে একাডেমিক সনদে যে বয়স রয়েছে তার পূর্বে জন্ম সনদ নিবন্ধিত হয়েছে। যে কারণে বয়স সংশোধন করতে অনেকেই পড়ছেন বিপাকে। আবার এ ক্ষেত্রে ভোগান্তির পাশাপাশি সরকারি নির্দেশের বাইরে অতিরিক্ত কয়েক গুণ বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে ভুল সংশোধনের জন্য।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, উপজেলার চরবলেশ্বর গ্রামের জান্নাতুল, ফারজানা, মো. তামিম হোসেন, চন্ডিপুর গ্রামের মিম আক্তার, হিমু আক্তার, তামিম, জুই, ফারজানা আক্তার, তানভীর হাওলাদার, সাদিয়া আফরিন টুকটুকি, জোসনা, খোলপটুয়া গ্রামের আরিফা, নাজিফা, আশিকুর রহমান, মো. রাজু, ফারজানা, লিজা, রুনা, মো. কিবরিয়া, রবিউল ও কলারণ গ্রামের লাইছা জাহানের মত অনেকেরই জন্ম সনদে এ ধরনের ভুল রয়েছে।
খোলপটুয়া গ্রামের শিক্ষার্থী আরিফা ও নাজিফা আক্তারের বাবা আবুল আকন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার দুই মেয়েরই জন্ম সনদে ভুল রয়েছে। এটি নজরে আসার পর এখন সংশোধনের জন্য বিপাকে পড়েছি। এ গ্রামের আরো অনেক ছেলে মেয়ের জন্ম সনদে ভুল রয়েছে।’
৩৪নং কলারণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ জোমাদ্দার বলেন, ‘যখন জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তখন অনেক অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে এ জরিপ করানো হয়েছে। তাই অনেকের নামের শুদ্ধ বানান বা জন্ম তথ্য সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করতে পারেনি। এছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ না করে একই বাড়ি বসে আশপাশের কয়েক বাড়ির তথ্য সংগ্রহ করার কারণে এ ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। জন্ম সনদে ভুলের কারণে বেশি বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
বালিপাড়া ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত মো. কামাল উদ্দিন গাজীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুরুতে যে সময় জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় ওই সময়ে এখানে আমি চাকরিরত ছিলাম না। তবে কারও জন্ম সনদে ভুল থাকলে সংশোধনের ব্যাপারে ইউনিয়নের বাসিন্দারা ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন।
Leave a Reply