সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
কাউখালী প্রতিনিধি॥ কচাঁ, সন্ধ্যা, কালী গঙ্গা নদী বেস্টিত কাউখালী উপজেলার অধিকাংশ ফসলি জমি ও বাড়িঘর বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে অরক্ষিত। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কয়েকশ’ একর ফসলি জমি। এসব জমি সাধারণ জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়ায় রবি শস্য উৎপাদন করতে পারে না কৃষক। অসময় জমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয় প্রতিবছর।
যে কারণে এসব জমিতে কৃষক রবি শস্য উৎপাদন করতে পারে না। কৃষি ফসল ও বাড়িঘর রক্ষার জন্য স্বাধীনতার পর অল্পকিছু বেরিবাধ নির্মাণ হলেও প্রাকিৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ সিডর, আইলা ও আম্ফানের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে বেড়িবাঁধগুলো। মাঝে মধ্যে বাঁধগুলো পুর্ননির্মাণ হলেও তাও বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় ধুয়েমুছে গেছে।
উপজেলার সবচেয়ে প্রান্তিক এলাকা শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের কচাঁ নদীর তীরবর্তী এলাকার পশ্চিম ফলইবুনিয়া ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক মো. সাইয়েদুল আলম জানান জোলাগাতী থেকে শাপলেজা ও ফলইবুনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার বেড়িবাধ ১৯৮৬ সালে শাহাবুদ্দিন তালুকদার চেয়ারম্যান থাকাকালীন সংস্কারের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয় এরপর ২০০৬ সালে আংশিক কিছু সংস্কার করা হয়েছিল এরপর থেকে আর কোনো সংস্কার বা মেরামত করা হয় নাই যার ফলে আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বসেছে এ পানি রক্ষা বাঁধটি।
জাতীয় পার্টি জেপি এর শিয়ালকাঠী ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান আলী মোল্লা জানান। কয়েক যুগ আগে পানি রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ফলে এলাকার বাড়িঘর ও ফসলি জমি রক্ষা করার জন্য এই বাঁধ খুবই ফলপ্রসু হলেও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়া বা পুর্ননির্মাণ না করায় বাঁধের তিনের দুই ভাগেই সিডর, আইলায় ভেসে গেছে ফলে জনর্দুভোগ চরম পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
এলাকাবাসি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল সরকারের ঐ সময়ের পানি সম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ভিটাবাড়িয়া থেকে শিয়ালকাঠী পর্যন্ত কচাঁ নদীর তীরবর্তী এই বেরিবাধ পুর্ননির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রকল্পটি ভান্ডারিয়া অংশে কাজ শেষ করে কাউখালী অংশের সামান্য কিছু কাজ শুরু করার পরই বন্ধ হয়ে যায়।
অদ্যবধি অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে প্রকল্পের বাকি কাজ সমাপ্ত করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ সব এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকায় জনজীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অভ্যন্তরীন রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। বিশেষ করে জোলাগাতি, সাপলেজা, ফলইবুনিয়া এই তিন গ্রামের মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
স্বাভাবিক জোয়ার ও বন্যায় পানির অতিরিক্ত চাপে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ধুয়ে-মুছে খাল এবং জমির সঙ্গে মিশে গেছে। এই সমস্ত গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে বর্ষা মৌসুমে ঘর থেকে বাইর হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। জীবন-জীবিকার জন্য বাইরে যাওয়ার একমাত্র ভরসা কলাগাছের ভেলা অথবা নৌকা এদের শেষ ভরসা। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়ার কোন পথ খোলা থাকে না যার ফলে প্রীতি বছর ঝরে পরছে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বাড়ছে বেকারত্ব এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব খেটে-খাওয়া মানুষের ছেলেমেয়েরা। এলাকার মানুষ বেড়িবাঁধের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন ও চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ধারণা দিয়েছেন বহুবার।
পিরোজপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও প্রকৌশলী সৈয়দ মহাসিন উল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালে পিরোজপুর ২ আসনের মাননীয় সংসদ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মহোদয় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং সে সময় মন্ত্রণালয় থেকে কিছু থোপ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল সেই টাকা দিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে ভান্ডারিয়া অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং কাউখালী জোলাগাতি অংশে সামান্য কিছু কাজ হয়েছিল। পরবর্তী সময় আর কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় বাকি কাজ করা সম্ভব হয় নাই।
এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. খালেদা খাতুন রেখা জানান, তিনি নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আবহিত করেছেন। বর্তমানে তিনি আবারও সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্যারের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।
Leave a Reply