বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন
আমজাদ হোসেন, বাউফল প্রতিনিধি॥ আলোকি নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় শুক্রবার বিকালে আসলাম দম্পতির লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। লঞ্চের ধাক্কায় তারা মারা যান। তাদের ৮ মাসের মেয়ে তানহা মুখে বুলি ফোটার আগেই এতিম হয়ে গেল। দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে ৪ দিন আগে বকেয়া বেতন আনার জন্য ঢাকায় যান গার্মেন্টস কর্মী জান্নাত বেগম। কর্তৃপক্ষ পরবর্তীকালে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জান্নাতকে ফিরে যেতে বলেন।
বুধবার জান্নাত তার স্বামীকে নিয়ে ঢাকা-কালাইয়া রুটের ডবল ডেকার লঞ্চ ঈগল’-এ বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেন। বৃহস্পতিবার ভোরে জান্নাত বেগম ও তার স্বামী আসলাম শরীফ নুরাইনপুর লঞ্চঘাটে নেমে খেয়া নৌকা পাড়ি দিয়ে নিজ গ্রামে যাচ্ছিলেন। তাদের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সদর ইউনিয়নে।
যে লঞ্চে তারা ঢাকা থেকে এলেন সেই লঞ্চের সঙ্গেই ধাক্কা লেগে খেয়া নৌকা থেকে পড়ে নিখোঁজ হন এই দম্পতি। একই ঘটনায় আনোয়ার হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। শুক্রবার বিকালে আসলাম দম্পতির লাশ আলোকি নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামের আলম শরীফের ছেলে আসলাম শরীফের সঙ্গে বিয়ে হয় বাউফল সদর ইউনিয়নের জালাল মোল্লার মেয়ে জান্নাত বেগমের। বিয়ের পর ঢাকায় দিনমজুরের কাজ শুরু করেন আসলাম আর জান্নাত সিদ্দিরগঞ্জ ইপিজেড-এ গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ করেন। বিয়ের সাড়ে ৩ বছর পর তাদের কোলজুড়ে আসে তানহা।
বর্তমানে তানহার বয়স ৮ মাস। কাজে যাওয়ার সময় জান্নাত ঢাকার বাসায় তার মায়ের কাছে শিশু সন্তানকে রেখে যেতেন।
করোনার কারণে লকডাউন শুরু হওয়ার পর জান্নাত পরিবার নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। কয়েকদিন আগে তার কারখানা থেকে বকেয়া বেতনের টাকা নেয়ার জন্য ফোন করা হয়। সেই ফোন পেয়ে জান্নাত তার শিশু সন্তানকে দাদির কাছে রেখে কয়েকদিনের জন্য ঢাকায় যান। ঢাকায় যাওয়ার পর কারখানা থেকে বলা হয় আরও কয়েকদিন পর টাকা পরিশোধ করা হবে। এরপর আবার বাড়ি ফিরে আসার প্রস্তুতি নেয় জান্নাত। বুধবার বিকালে জান্নাত ফের তার স্বামীর সঙ্গে লঞ্চযোগে রওয়ানা দেন।
শুক্রবার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামে আসলামের বাড়ি পরিদর্শনকালে দেখা যায় হৃদয় বিদারক দৃশ্য। ৮ মাস বয়সের শিশু সন্তানটি মুখে বুলি ফোটার আগেই এতিম হয়ে গেল। বাড়ির সবাই বিলাপ করছেন।
আসলামের বড় ভাই আল আমিন শরীফ বলেন, এই এতিম শিশু সন্তানটির দায়িত্ব এখন কে নেবে?
Leave a Reply