নিয়ম উপেক্ষা করেই ভাড়া হচ্ছে বরিশাল লঞ্চের স্টাফ কেবিন, ঘটছে অপরাধ Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৬ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




নিয়ম উপেক্ষা করেই ভাড়া হচ্ছে বরিশাল লঞ্চের স্টাফ কেবিন, ঘটছে অপরাধ

নিয়ম উপেক্ষা করেই ভাড়া হচ্ছে বরিশাল লঞ্চের স্টাফ কেবিন, ঘটছে অপরাধ




নিজস্ব প্রতিবেদক॥  দক্ষিণাঞ্চলের নদীপথগুলো ঘিরে একের পর এক বিলাসবহুল ও আধুনিক নৌযান (লঞ্চ) যুক্ত হচ্ছে অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী নৌ-পরিবহন বহরে। তারপরও কেবিন সংকটে ভোগেন প্রায় সব নৌ-পথের যাত্রীরা। বিশেষ করে বরিশাল-ঢাকা রুটে সাধারণ সময়ে ৪-৫ দিন আগে না চাইলে কেবিন পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। তবে উৎসব ও ছুটিছাটা ঘিরে কেবিন হয়ে যায় ‘সোনার হরিণ।

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৎপর থাকে কালোবাজারিরা। তাদের পাশাপাশি স্টাফরাও লঞ্চে তাদের থাকার জন্য তৈরি কেবিনগুলো ভাড়া দিচ্ছেন যাত্রীদের কাছে। অথচ বিআইডব্লিউটিএ স্টাফ কেবিন ভাড়া দেওয়ার নিয়ম নেই বলে জানালেও ভাড়া প্রতিরোধে কঠোর কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না তারা।

তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার বরিশাল নদীবন্দরে ঢাকা থেকে আসা বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চ পারাবত-৭ এর স্টাফ কেবিন থেকে ৩৫ বছর বয়সী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তার সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা পুরুষসঙ্গী লাশ উদ্ধারের আগ থেকেই নিরুদ্দেশ ছিল।

২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে ঢাকা থেকে আসা সুন্দরবন-৬ লঞ্চের মাস্টার (স্টাফ) কেবিন থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অজ্ঞাতপরিচয় (৩৫) এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

চলতি বছরের গত ২০ জুলাই ঢাকা থেকে আসা সুরভী-৮ লঞ্চের ইঞ্জিনরুমের কাছে লস্করের কেবিন থেকে গার্মেন্টসকর্মী আঁখি আক্তারকে শ্বাস রোধে হত্যা করে পালিয়ে যায় তার পরকিয়া প্রেমিক। পরে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৮ সদস্যরা।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুলাই মাসের ঘটনাপ্রবাহ প্রায় কাছাকাছি। এর মধ্যে কেটে গেছে অনেক দিন, বদলেছে অনেক প্রেক্ষাপট। বেড়েছে লঞ্চ, বেড়েছে স্টাফ কেবিনের সংখ্যাও। হিসাব বলছে, কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত কেবিন ছাড়া স্টাফ কেবিনগুলোতেই ঘটছে চুরি, খুনসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। যদিও প্রতিটি ঘটনার পর লঞ্চ মালিক ও প্রশাসন কয়েকদিনের জন্য কড়াকড়ি আরোপ করে।

হত্যাকাণ্ডসহ যেকোনো অপরাধ সংঘঠিত করে স্টাফ কেবিন থেকে সহজেই চলে যেতে পারে অপরাধীরা। তাই এদিকেই আগ্রহ রয়েছে মুখোশধারী যাত্রীদের। যারা মূলত অপরাধ সংগঠিত করার জন্যই লঞ্চে ওঠেন, কারণ লঞ্চ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত কেবিনগুলো যাত্রীদের কোনো না কোনো তথ্য বা কারো রেফারেন্স দিয়ে নিতে হয়। আর স্টাফ কেবিনগুলো ওইসব ঝামেলা ছাড়াই ভাড়া নেওয়া যায়।

লঞ্চ মালিকরা বলছেন, সাধারণত লঞ্চের সিঙ্গেল, ডাবল, সেমি ভিআইপি কেবিনগুলো ভাড়া দেওয়ার সময় যাত্রীর পরিচয় নয়তো মোবাইল নম্বর রেখে দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে জাতীয় পরিচয়পত্রের আইডি কার্ডের ফটোকপি রাখা হতো। এতে অপরাধ করলেও দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়। অথচ স্টাফ কেবিনে কিছু ঘটলে ক্লু খুঁজে পেতেই কষ্ট হয় পুলিশের। লঞ্চ স্টাফরা বলছেন, ঠিকমতো বেতন-ভাতা ও বোনাস না দেওয়ায় পেট চালাতে গিয়ে হিমশিত খেতে হয় তাদের। তাই নিজের জন্য বরাদ্দ কেবিনটি ভাড়া দিতে হয় তাদের।

বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল অফিস জানায়, দুটি ঈদসার্ভিস ছাড়া বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে ১৭টি লঞ্চ চলাচল করে। এই ১৭টি লঞ্চের মধ্যে ১০টি লঞ্চের সার্ভে জরিপ বলছে ১৮০ জন স্টাফের জন্য নির্ধারিত কেবিন বরাদ্দ দেওয়া আছে। আর বাকি ১০ লঞ্চে মোট হিসাবে দুইশর মতো স্টাফ কেবিন রয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই রাতের যাত্রায় ভাড়া দেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, নোঙর করা লঞ্চের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে স্টাফ কেবিন বিক্রির জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে যাত্রী ডাকেন প্রত্যেকটি লঞ্চের স্টাফ। এদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এ সিস্টেম। শুধু স্টাফ কেবিন নয়, মাস্টার ব্রিজও ভাড়া দেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছে।

এ বিষয়ে বরিশাল নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শেখ আবুল হাশেম বলেন, স্টাফ কেবিন ভাড়া দেওয়া যাবে না এমন কোনো আইন নেই। বিষয়টি নিয়ে গত রোববার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি বলেছি, স্টাফদের বেতন-বোনাস ঠিকমতো পরিশোধ করুন। দেখবেন স্টাফ কেবিন ভাড়া দেবে না। তার মতে, সবাইকে বোঝতে হবে নিজের ঘুমানোর জায়গাটি মানুষ কখন অন্যের কাছে ছেড়ে দিয়ে রাত জাগে।

অপরদিকে নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, স্টাফ কেবিন যাত্রীদের কাছে ভাড়া দেওয়ার বিধান নেই। কেউ স্টাফ কেবিন ভাড়া দিলে তিনি আইন ভঙ্গ করছেন।এ ক্ষেত্রে লঞ্চ মালিক-স্টাফ ও যাত্রীদের সচেতন হওয়া উচিত। খুনের ঘটনা শুধু স্টাফ কেবিনেই হতে পারে তা কিন্তু নয়; অন্য কেবিনেও হতে পারে। তখন কর্তৃপক্ষের কিছুই করার থাকে না। কারণ আপনি কার সঙ্গে চলছেন তাতো আপনি জানেন, কেবিনওয়ালা জানবেন না।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD