শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০০ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ নাজমা তাঁর স্বামী আর দুই সন্তান ও মা-বাবাকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার ধামরাইয়ের সূতিপাড়া ইউনিয়নের বাটারখোলা গুচ্ছগ্রামে (সোনালী বার্তা ২)। গুচ্ছগ্রামে বাস করলেও তাঁদের নামে সরকার থেকে কোনো ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তাঁদের থাকতে দিয়েছেন বারপাইকা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের নামে গুচ্ছগ্রামে বরাদ্দকৃত সরকারি ঘরে।
এখানেই দুই মাস আগে তাঁর স্বামী বাবুল হোসেন মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। চার দিন আগে মারা যান তাঁর মা। সাত মাস আগে মারা যান বাবা আক্কাস আলী। স্বামী ছিলেন সাইকেল মেকার ও বৃদ্ধ বাবা ছিলেন দিনমজুর। তাঁদের উপার্জিত আয়েই চলত ছয় সদস্যের সংসার। সাত মাসের মধ্যে ছয় সদস্যের তিনজনই মারা যান। প্রয়োজন আর প্রিয়জনদের হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন নাজমা বেগম (২৮)। স্বামী মারা যাওয়ার সময় নাজমা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুতে অবুঝ দুই সন্তানের মুখে এক মুঠো ভাত দেওয়ার মতো কিছুই রেখে যাননি তাঁর স্বামী। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার প্রসববেদনায় কাতর হয়ে পড়েন নাজমা। স্থানীয় ইউপি মহিলা সদস্য আছিয়া বেগমের সহযোগিতায় তাঁকে ভর্তি করেন ধামরাইয়ের ডাউটিয়া রাবেয়া মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
ওই দিন অস্ত্রোপচারের (সিজার) মাধ্যমে এক পুত্রসন্তান জন্ম দেন তিনি। এরপর নবজাতককে নিয়ে পড়েন বিপাকে। বাড়িতে নিয়ে নবজাতককে কী খাওয়াবে, কিভাবে ভরণপোষণ করবে-এসব কথা চিন্তা করে সেই নারীছেঁড়া ধনকে অভাবের তাড়নায় বিক্রি করে দেন মাত্র ৬০ হাজার টাকায়, শুক্রবার। হাসপাতালের সাড়ে ১০ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করে শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে চলে যান সেই গুচ্ছগ্রামে।
নাজমা বেগম জানান, পৃথিবীর কোনো মা-ই তাঁর সন্তানকে ব্যাচপার চায় না। আমিও চাই ন্যাই। কিন্তু আমি তো অসহায়। আমার একটি মেয়ে (৮) একটি ছেলে সন্তান (৫) আছে। ওগোই কী খাওয়ামু। আমার থাকারই ঘর নাই। অন্যজনের দয়ায় আমাগো থাকপার দিছে। চিন্তাই থাকি কোন সময় খ্যাদিয়ে দেয়।
বাটারখোলা সোনালী বার্তা ও রুপালী বার্তা গুচ্ছগ্রামের সভাপতি সুলতান উদ্দিন জানান, প্রায় ৯ বছর আগে এ গুচ্ছগ্রামে সরকার থেকে যাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজন কোনো দিন আসেও নাই, বসবাসও করে নাই। সরকার যদি সেখান থেকে একটি ঘর নাজমার নামে বরাদ্দ দিত, তাহলে তাঁর উপকার হতো।
স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য আছিয়া বেগম বলেন, নিতান্তই নিরুপায় হয়ে সন্তান বিক্রি করেছে নাজমা। নাজমার নেই কোনো থাকার ঘর। গুচ্ছগ্রামে থাকার মতো একটি ঘর দিলে অবুঝ দুই সন্তান নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেত নাজমা।
ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল হক বলেন, সন্তান বিক্রি করা আইনবিরোধী। এটা অত্যন্ত অমানবিক ও দুঃখজনক ঘটনা। তবে তাকে পুনর্বাসন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply