শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০২০ সালের কোভিড ঝড়ের সঙ্গে প্রায় দুই বছর লড়াই করে আবারও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে এসেছে বিশ্ব। তবে সহসাই এতে স্বস্তি মিলছে না। আবারও বিশ্বজুড়ে নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এর নাম দেয়া হয়েছে জেএন.১।
দ্রুত ছড়ানোর কারণে এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে করোনার জেএন.১ ধরন পাওয়া গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বর্তমানে অমিক্রন–সংশ্লিষ্ট জেএন.১-উপধরনসহ ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ গুলোর সংক্রমণের হার শনাক্তের চেষ্টা করছে। যদিও এর কোনোটি উদ্বেগের নয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জেএন.১ উপধরনকে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ ঘোষণা করেছে। তারা আরও বলেছে, এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে বলা যায়, এই উপধরনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, কোভিডের জন্য দায়ী ভাইরাসটি শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে রূপ পাল্টেছে। এর কয়েকটি ধরনও তৈরি হয়েছে। মাঝে কিছুদিন বিশ্বজুড়ে অমিক্রন ধরনের আধিপত্য দেখা গিয়েছিল। তবে বর্তমানে এ ধরনের সংক্রমণজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কম এবং বিদ্যমান টিকাগুলোই এ ধরন থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেবে।
ধারণা করা হচ্ছে, অমিক্রনের আরেক উপধরন বিএ.২.৮৬ ধরনের তুলনায় জেএন.১-এর স্পাইক প্রোটিনের অতিরিক্ত পরিবর্তনের কারণে সব অঞ্চলে জেএন.১ দ্রুত ছড়াচ্ছে। বিএ.২.৮৬ ধরন থেকেই জেএন.১-এর উৎপত্তি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঝুঁকিসংক্রান্ত এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিশেষ করে, যেসব দেশে শীত মৌসুম শুরু হচ্ছে, সেখানে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্য সংক্রমণগুলোর পাশাপাশি এ ধরনের কারণে সারস-কভ-২ (করোনাভাইরাস) এর প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে।
ডব্লিউএইচও সবাইকে আরও সর্তক হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেছে, কিছু স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে। এর ভেতর জনাকীর্ণ ও বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরা, কাশি বা হাঁচির সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখা, কোভিড এবং টিকার নতুন নতুন তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা, বিশেষ করে, যাঁরা সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছেন। লক্ষণ দেখা দিলে রোগ শনাক্তের জন্য দ্রুত পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।
এদিকে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে আবারো করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ৩৯ থেকে ৫০ শতাংশই জেএন.১ উপধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশটির রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের জেএন.১ উপধরনে আক্রান্তের হার ক্রমে বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন করোনার যতগুলো ধরনে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তার মধ্যে এ ধরন সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। সিডিসি মনে করে, যে হারে উপধরনটি ছড়াচ্ছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে, এটি অপেক্ষাকৃত বেশি সংক্রামক নয়তো অন্য ধরনগুলোর তুলনায় এটি রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) ভেদ করতে বেশি পারদর্শী।
অন্যদিকে ভারতে গত দুইদিনে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। নতুন করে ৬৪০ জন করোনা সংক্রমিত খুঁজে পাওয়া গেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভারতে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২,৯৯৭ জন। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের বেশিরভাগই আগে থেকে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। তবে এখনও একে কোভিডের এর নতুন ঢেউ হিসেবে চিহ্নিত করছেন না দেশটির বিজ্ঞানীরা।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, সবথেকে বেশি মৃত এবং সংক্রমিত রাজ্য কেরালা। ওই রাজ্যে বিগত ২৪ ঘণ্টায় ২৬৫ জন নতুন কোভিড রোগী পাওয়া গেছে। কেরালার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যতজন রোগীর মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের অর্ধেকের মধ্যেই নতুন জেএন১ ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
কেরেলা রাজ্য কোভিড এক্সপার্ট কমিটির সদস্য ডা. অনীশ টি এম বিবিসিকে জানিয়েছেন, “যতজন করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে, তাদের ৫০ শতাংশ এরই কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আবার এরকম সংক্রমিতও দেখা যাচ্ছে যার এক আত্মীয় হয়তো পজিটিভ হয়েছেন এবং সেই ব্যক্তির সঙ্গে তিনি দূর থেকে দেখা করেছিলেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি যখন টেস্ট করালেন, দেখা গেল তার করোনা পরীক্ষার ফলও পজিটিভ।’
মানুষের মনে নতুন করে একটা ভয় ঢুকেছে তাই তারা সরকারি আর বেসরকারি কেন্দ্রগুলোতে নিজে থেকেই পরীক্ষা করাতে আসছেন বলে জানিয়েছেন ডা. অনীশ।
কেরালা ছাড়াও দেশটির তামিলনাডু, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গোয়া, রাজস্থান এবং পাঞ্জাব রাজ্যেও করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। নতুন করে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে কতজন করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন১ – এ আক্রান্ত, তা জানার জন্য আক্রান্ত রোগীর লালারসের নমুনা নিয়মিত জেনোম সিকোয়েন্সিংয়ে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে কলকাতার আমরি হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সায়ন চক্রবর্তীর বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছে, সম্প্রতি ভারতে করোনা ভাইরাসের নতুন যে ভ্যারিয়েন্টটা দেখা যাচ্ছে, সেটার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা আগের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের থেকে অনেকটাই বেশি। কিন্তু এই ভ্যারিয়েন্টটার ধার অনেকটাই কম, খুব বেশি যে অসুস্থ করে ফেলতে পারবে করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট, তা নয়। আগের কয়েকবার যেমন দেখা গেছে প্রচুর মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে, আইসিইউতে দিতে হচ্ছে, এই ভ্যারিয়েন্টে সেরকমটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই ভ্যারিয়েন্টের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বরের মতোই লক্ষণ দেখা দেবে।
বিবিসিকে ডা. সায়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘শুধু বয়স্ক মানুষ বা অন্যান্য রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হলেও হতে পারে। অন্যদের আমরা চিকিৎসা করছি সর্দি, কাশি, জ্বরের রোগীদের মতো করেই।’
Leave a Reply