সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ||নেই কার্যালয়, নেই কর্মী। নেই নব গঠিত কমিটি। এমন দুরাবস্থা বরিশালের বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের। যতগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে তার সংখ্যাও হাতে গোনা। বরিশালে যতগুলো সংগঠন কাজ করছে তার মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ সংগঠন নতুন কর্মীর অভাবে কমিটি গঠনে ব্যর্থ হচ্ছে, উপরন্তু নেই নিজস্ব কার্যালয়। ফলে কার্যক্রমেও ভাটা পরেছে।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে শিশু-কিশোর ও তরুণ শিক্ষার্থীরা সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ পাচ্ছেন না। রাতারাতি তারকা বনে যাওয়ার প্রবণতার কারনে কর্মীরা সাংগঠনিক দিকে মনোনিবেশ না করায় সংস্কৃতিতে স্থায়ী হচ্ছে না। এছাড়াও সংস্কৃতি বিকাশে মন্ত্রনালয়ের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তারা। কারন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় কক্ষ ভাড়া নিয়ে কার্যালয় স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা দুরুহ ব্যপার।
সমন্বয় পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের ২৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট হিসেবে কাজ করছে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। এছাড়াও জোটের বাইরেও কাজ করছে আরও ডজনখানেক সাংস্কৃতিক সংগঠন। সমন্বয় পরিষদভূক্ত সংগঠনগুলোর মধ্যে ৫টি সংগঠন একেবারেই অকার্যকর। অকার্যকরের তালিকায় রয়েছে চতুরঙ্গ সংগীত বিদ্যালয়, কীর্তনখোলা থিয়েটার, চাঁদের হাট, কালেক্টরেট ক্লাব ও প্রজন্ম নাট্য কেন্দ্র। তাদের নেই কোন কার্যালয়, নেই নব-গঠিত কমিটি।
কার্যক্রম আছে তবে কার্যালয়ের অভাবে চর্চা ব্যহত হচ্ছে এমন সংগঠনের সংখ্যা ৪ টি। সংগঠনগুলো হল, বরিশাল থিয়েটার, বরিশাল শিল্পমঞ্চ, রুপালী ব্যাংক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংসদ, সুরলহরী সংগীত বিদ্যালয়। ওদিকে জোটের বাইরের ১১টি সংগঠনের তথ্য নিয়ে জানা যায় এরও ৪টি সংগঠনের নেই নিজস্ব কার্যালয়।
কার্যালয় না থাকায় কর্মীদের নিয়মিত নাট্য ও আবৃত্তিচর্চা ব্যহত হচ্ছে। সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ের ঠিকানা না থাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে প্রেরিত পত্র দিতে হচ্ছে দায়িত্বশীল ব্যক্তির বাসায় বা হাতে হাতে। ফলে সাংগঠনিক ব্যবস্থার বাস্তবায়নও ব্যহত হচ্ছে বলে মনে করেন বরিশাল শিল্পমঞ্চের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান শাহিন।
জোটের বাইরের সংগঠনগুলো হলো, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, নজরুল সাংস্কৃতিক জোট, সুরঝংকার সংগীত বিদ্যালয়, বিভাগীয় বাউল শিল্পী সংগঠন, সংস্কৃতি পরিষদ, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আপন সংগীত সংগঠন, সপ্তসুর সংগীত একাডেমি, গণনাট্য সংস্থা,ইশান সংগীত একাডেমি ও জবা সংগীত বিদ্যালয়।
এ বিষয়ে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু কর বলেন, দক্ষ সংগঠক ও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের অভাব দেখা দিয়েছে সংগঠনগুলোতে। সমন্বয় পরিষদ সংগঠনগুলোর জোট কিন্তু সংগঠনগুলো নিজ নিজ অবস্থানে গঠনতান্ত্রিকভাবে স্বতন্ত্র তথাপিও সংগঠনগুলোর কর্মীসংকট মোকাবেলায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সাংগঠনিক পরামর্শ ও সহযোগীতা দিচ্ছে সমন্বয় পরিষদ। তিনি সংস্কৃতি চর্চার জন্য নির্মানাধীন বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম অচিরেই নির্মানকাজ শেষ করে সংস্কৃতি কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত করার আহবান জানান।
সংস্কৃতির অঙ্গনে কর্মী সংকট প্রসঙ্গে কবি হেনরি স্বপন বলেন, ‘সংস্কৃতিতে কর্মী হবার জন্য নয় বরং নিজের শিল্পীসত্ত্বা প্রদর্শন করে মঞ্চে নিজেকে উপস্থাপন করার প্রবণতা নিয়ে সামান্য সংখ্যক তরুণ সংস্কৃতির চর্চা করলেও তাদের মধ্যে সাংগঠনিক কর্মীসত্ত্বা জাগ্রত না হওয়ায় এসব তরুণরা সংস্কৃতিতে স্থায়ী হচ্ছে না।
সংস্কৃতিতে বিদ্যমান সংকট নিয়ে কথা হয় বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষের সাথে। তিনি বলেন, বরিশালের জেলা প্রশাসক শিশু-কিশোরদের সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ দেয়ার জন্য শুক্র ও শনিবার দু’দিন কোচিং সেন্টার বন্ধ কার্যকর করেছেন। তবে দু:খজনক হলেও সত্য যে, সংস্কৃতিবান্ধব সরকার ক্ষমতায় থাকলেও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দ অপ্রতুল। যা দিয়ে সারাদেশের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বেগবান করা অসম্ভব।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয়ভাবে সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় যেমন: সংগীত, চারুকলা ও নাট্যকলায় যেন উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করতে পারে সে জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সকল বিষয়ে বিভাগ চালু করার আহবান জানান সংস্কৃতিজন কাজল ঘোষ।
Leave a Reply