ঝালকাঠির দিনমজুর মোক্তার এখন শত বিঘা জমির মালিক Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




ঝালকাঠির দিনমজুর মোক্তার এখন শত বিঘা জমির মালিক

ঝালকাঠির দিনমজুর মোক্তার এখন শত বিঘা জমির মালিক

ঝালকাঠির দিনমজুর মোক্তার এখন শত বিঘা জমির মালিক




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ঝালকাঠির কাউখালী থেকে মুক্তিযুদ্ধের পরে বাগেরহাটে পাড়ি জমান মোক্তার আলী হাওলাদার। পেশা হিসেবে বেছে নেন দিনমজুরের কাজ। স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন সদর উপজেলার মোজারডাঙ্গা গ্রামে। বিয়েও করেন একই গ্রামে। প্রথমে দিনমজুর হিসেবে এলাকার মানুষের জমিতে কাজ করতেন। এখন ওই এলাকায় শত বিঘা জমির মালিক এই মোক্তার আলী। বাগেরহাটে এসে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুন পরিচিতিও ধারণ করেন মোক্তার। বাগেরহাটে নিজস্ব একটি বাহিনীও রয়েছে তার, যার নাম মোক্তার বাহিনী। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে পরে তাদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিয়ে জমি দখলই মোক্তারের অন্যতম লক্ষ্য। জাল দলিল করে অন্যের জমির মালিক বনে যান তিনি।

 

 

জানা গেছে, এক সময়ে বাগেরহাটে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জমি কিনে রাখতেন। বেছে বেছে সেই জমিগুলোও টার্গেট করে রাখতেন মোক্তার। নানা কৌশলে ধীরে ধীরে সেগুলো দখলে নিয়ে নেন তিনি।

 

এসব ঘটনায় তার নামে একাধিক মামলা হলেও শেষ পর্যন্ত বিচার হয়নি একটি অপরাধেরও। মুক্তিযোদ্ধা সেজে ছেলে-মেয়েদের চাকরিসহ রাষ্ট্রীয় নানা সুযোগ-সুবিধাও গ্রহণ করেছেন এই মোক্তার। কিন্তু তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। বরং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অত্যাচার-নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এমনকি ধর্ষণের মতো অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এক আত্মীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার থাকার সুবাদে তাকে দিয়ে সনদ বানিয়ে পরে রাষ্ট্রীয় সুাযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন এই মোক্তার। সর্বশেষ যাচাই-বাছাইয়ে অবশ্য মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে মোক্তারের নাম। ১৯৭৩ সালে এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে ঝালকাঠি জেলায় মামলাও হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। মামলা নং-০৪ ২১/১১/১৯৭৩।

 

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাগেরহাটে বসতি গড়ার পর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে জমি-জমা দখলই মোক্তারের মূল পেশা। সর্বশেষ গত ১৩ মে বাগেরহাট সদর থানায় জমি ও মাছের ঘের দখলের অভিযোগে মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। মামলা নং-২০৮৮। স্থানীয় সরুই কবরখানা রোডের বাসিন্দা শেখ ওয়ালিদ তার মাছের ঘের দখল ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মোক্তার আলীর বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। ওই মামলার এজাহারে বাদী শেখ ওয়ালিদ বলেছেন, মোক্তার আলী নিজস্ব বাহিনী নিয়ে বেআইনিভাবে তার (ওয়ালিদের) জলাবদ্ধ জমি ও মাছের ঘের দখলের উদ্দেশ্যে তার ওপর হামলা চালায়।

 

 

মোক্তারের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা সুকুমার বেপারী বলেন, ‘ঝালকাঠির কাউখালী উপজেলার বদরপুর গ্রামের মোক্তার আলী মুক্তিযুদ্ধের তিন মাস পর ওই এলাকা ছেড়ে বাগেরহাট চলে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মোক্তার বিভিন্ন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি, খুন-ধর্ষণ ও লুট করেন। কাউখালীর বদরপুর ও বৌলাকান্দা গ্রামে এসব করে মোক্তার। সঙ্গে তার সহকর্মীরাও ছিল।’

 

 

মোক্তারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বদরপুর গ্রামের রমণী দেবনাথের বোন শ্যামলাকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সুকুমার বেপারী আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পরই পালিয়ে বাগেরহাট চলে যায় মোক্তার। এরমধ্যে এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধা বনে যায় মোক্তার। আর এই ভুয়া সনদ দিয়ে পরিবারের সদস্যদের চাকরিও দেয় মোক্তার। জঘন্য এই পশুটিকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।’

 

 

এলাকাবাসী বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চালানো অপরাধ কর্মকাণ্ডের ‘স্বাদ’ যেন ভুলতে পারেননি মোক্তার। তাই বাগেরহাটে এসেও বেছে বেছে দুর্বল ও ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু মানুষদের ওপর চলে মোক্তারের অত্যাচার-নির্যাতন। সংখ্যালঘুদের জমি দখলসহ হেন কোনো অপরাধ নেই বাগেরহাটের মোজারডাঙ্গা গ্রামে তিনি করেননি। ইতিমধ্যে প্রায় শত বিঘা জমি দখল করে নিয়েছেন তিনি। যার অধিকাংশই হিন্দুদের। নিজস্ব একটি বাহিনী গড়ে তুলে জমি দখলে নামেন মোক্তার।

 

 

এ প্রসঙ্গে বাগেরহাট সদর উপজেলার আনোয়ারডাঙ্গা গ্রামের প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘অত্র এলাকার চিহ্নিত অপরাধী মোক্তার আলী হাওলাদার। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে আনোয়ারডাঙ্গা ও মোজারডাঙ্গা গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়সহ এলাকার নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালায় মোক্তার ও তার বাহিনী।’

 

 

মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে মোক্তার তার দুই ছেলেকে পুলিশের চাকরিতে ঢুকিয়েছেন জানিয়ে প্রফুল্ল আরো বলেন, ‘পুলিশ ছেলেদের ক্ষমতা ও তার ক্ষমতা মিলে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ। আমার প্রায় ৫ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে মোক্তার। প্রতিবাদ করলেই অত্যাচার নেমে আসে আমাদের ওপর।’

 

 

মোক্তারের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আরও কিছু তথ্য তুলে ধরেন ঝালকাঠির কাউখালীর ফয়সাল মোর্শেদ। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের তিন মাস পর এখান থেকে পালিয়ে যায় মোক্তার আলী। একসময়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বাগেরহাটে জমি কিনত। সে অনুযায়ী আমার দাদারাও সেখানে জমি কেনে। বাগেরহাট সদর ও এর আশপাশের এলাকায় প্রায় ৬/৭ বিঘা জমি ছিল আমাদের। মোক্তার আলী বাগেরহাটে আশ্রয় নিয়ে আমাদের সেই জমি দখল করে নিয়েছে। জাল দলিল ও ক্ষমতা দেখিয়ে এসব জমি তার দখলে নিয়েছে। মামলা করেছি, কিন্তু এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।’

 

 

ফয়সালের দাবি, বাগেরহাটে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রায় ৫ হাজার বিঘা জমি রয়েছে। এক সময়ে তাদের অঞ্চলের মানুষ বাগেরহাটে জমি কিনেছে। মোক্তার বাগেরহাটে গিয়ে সেইসব জমির বেশ কিছু দখল করে নিজের কব্জায় রেখেছেন।

 

 

মোক্তারের উত্থানের বর্ণনা দিতে গিয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মোক্তার আলী বাগেরহাটে এসে প্রথমে দিনমজুরের কাজ করতেন। পরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি বানান। এখানে একটি নিজস্ব বাহিনীও গড়ে তোলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে দুই ছেলেকে পুলিশে চাকরি দেন। এরপর তার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। এলাকার সংখ্যালঘু ও দুর্বল আর্থিক অবস্থার মানুষগুলোকে টার্গেট করেন। তারপর তাদের জমি দখলে নামেন মোক্তার। জমি প্রথমে জোর করে দখলে নিয়ে পরে জাল দলিল করে নিজের করে নেন। এভাবে এখন প্রায় শত বিঘা জমির মালিক মোক্তার।’

 

 

অবশ্য নিজের বিরুদ্ধে ওঠা বিস্তর অভিযোগের সবই মিথ্যা বলে দাবি করছেন মোক্তার আলী। তিনি বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা। দীর্ঘদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলে আসছিল এগুলো তারই অংশ।’

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD