রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর রিকশায় মাইক বেঁধে প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করতে শোনা যেতো এক সময়। নানা স্লোগানে প্রার্থী ও তাঁর প্রতীকের গুণগান তুলে ধরেতেন ঘোষক। এসব স্লোগান শুনতে রিকশার ধারে ভীরতেন মানুষ। সময় বদলেছে, এখন আর এসব শোনা যাচ্ছে না।
ঝালকাঠি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিজিটাল সামগ্রী ব্যবহার করে মাইকিং চলছে শহর কিংবা গ্রামে। দেশের জনপ্রিয় গানগুলোর সুর ও সংগীত মিল রেখে পাল্টে ফেলেছেন কথাগুলো।
প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনায় ব্যবহার করা হচ্ছে জনপ্রিয় এসব গানের সুর। অনেকে আবার মেলোডি মিউজিক ব্যবহার করে উচ্চ শব্দে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে যেমন শব্দ দূষন হচ্ছে, তেমনি বিরক্ত হচ্ছেন ভোটাররা।
পাল্লা দিয়ে এক পথে কয়েকজন প্রার্থীর মাইকিংয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন জনসাধারণ। মাইকিং দেখলে রাস্তায় বের হওয়া পথচারীরা কান চেপে ধরে দূরে সরে যাচ্ছে মানুষ।
ঝালকাঠি জেলায় ৩১টি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি পৌরসভায় এক হাজার ৪৫৭ প্রার্থী প্রতিদিন প্রচারণা চালাচ্ছেন। জানা যায়, প্রথম ধাপে ঝালকাঠি জেলার ৩১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ২১ জুন। এর মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নে ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে তিনটি ইউনিয়নে বিনাপ্রতিদ্বদ্বিতায় জয়ের পথে আওয়ামী লীগ মনোনীত তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী।
তবে এ তিনটি ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচন হবে। ২৮টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন করে সতন্ত্রসহ চেয়ারম্যান প্রার্থী ১০১ জন প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন। সাধারণ সদস্য পদে ৯৯৯ ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৩০৭ জন। একই দিন ঝালকাঠি পৌরসভারও ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করেছে নির্বাচন কমিশন। মেয়র পদে তিনজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩১ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৬ জন প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন।
কিছুদিন স্থগিত থাকার পরে আবারো প্রচার প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। মাইকের উচ্চ শব্দে যেমন বিরক্ত হচ্ছেন ভোটররা, তেমনি জনপ্রিয় শিল্পীর গানগুলোকে বিকৃত করে মেলোডি দিয়ে প্রার্থীদের পক্ষে দোয়া চাওয়া হচ্ছে। ঝালকাঠি শহরের ব্যবসায়ী আল আমিন খান বলেন, শহরের চৌমাথায় আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টানা প্রচারণায় অস্থির হয়ে পড়েছি। জনপ্রিয় গানগুলো বিকৃত করায় আমাদের কষ্ট হয়। ঝালকাঠি শহরের চাঁদকাঠি এলাকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবুল হোসেন বলেন, গান বাজিয়ে প্রচারণা বিরক্ত লাগে। উচ্চ শব্দে বাচ্চারা পড়ালেখা করতে পারে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রার্থী বলেন, আসলে মানুষ এখন আর পুরনো স্টাইলে প্রচারণা শুনতে চায় না। নতুন কিছু যুক্ত করলে মানুষ তা শোনে। তাই গান বাজিয়ে প্রচারণায় মনযোগ বেশি আকর্ষণ করে। জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও উদীচী ঝালকাঠির আহ্ববায়ক গোলাম সাঈদ খান বলেন, প্রকৃত শিল্পীর গান বিকৃত করে যেভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, এতে মনে হচ্ছে ‘মধুর মধ্যে বিষ’ দিল যা হয়। গানটাকে একদম পচিয়ে ফেলা হচ্ছে।
এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রকৃত গানটির সঙ্গে যারা জড়িত, বিকৃত গান শুনে তাঁরা নিশ্চয়ই কষ্ট পায়। এ ধরণের প্রচারণা বন্ধ করা উচিত। ঝালকাঠি সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন হিমু বলেন, গান বাজিয়ে প্রচারণার একটি ভালো দিকও রয়েছে।
তবে প্রকৃত শিল্পীর গান বিকৃত করা ঠিক নয়। নতুন গান তৈরি করে প্রচার করলে মনে হয় ভালো লাগতো। ঝালকাঠি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওহিদুজ্জামান মুন্সি বলেন, নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনে এ বিষয়টি নেই। তবে প্রকৃত শিল্পীদের গান বিকৃত না করাই ভালো।
Leave a Reply