শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি:ঝালকাঠির সরকারি মহিলা কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী বেনজির জাহান মুক্তা (১৯) হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নলছিটি থানায় নিহতর বাবা জাহাঙ্গীর হাওলাদার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় মেয়েটির কথিত প্রেমিক সোহাগ ও অজ্ঞাত আরো দুই-তিন জনকে আসামী করা হয়। সোহাগের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, সোহাগকে গ্রেপ্তার করলেই হত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এদিকে মুক্তার সহপাঠী ও কলেজের শিক্ষকরাও হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।
পুলিশ জানায়, মুক্তাকে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যে ছেলেটি হত্যাকান্ড ঘাটিয়েছে তাঁর সঠিক পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক তদন্তে সোহাগ নামে এক যুবক এ ঘটনায় জড়িত রয়েছে বলে জানাগেছে। কিন্তু তাঁর ঠিকানা এখনো পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত মুক্তার ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকেলে বাড়ির উঠানে তাঁর জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর মৃতদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।
নলছিটি থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল হালিম তালুকদার বলেন, আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযুক্তকে সনাক্ত করার চেষ্টা করছি।
হত্যাকান্ডের আগে সোহাগ নামে এক যুবক ফোনে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছিল। তাঁর অবস্থান জানা মাত্রই অভিযান চালানো হবে। হত্যাকারীকে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। আমরা সোহাগের অবস্থান জানার জন্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজ লাগিয়েছি।
নিহত মুক্তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, আমার মেয়ে মোবাইলে কার সঙ্গে কথা বলতো, তা আমরা কেউ জানি না। তবে সোহাগ নামে এক যুবক ঘটনার দিন তাকে ফোন করে বাড়ি থেকে সামনে বের হতে বলেছিল। সোহাগের বাড়ি কোথায় এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি, তবে কেউ কেউ বলছে তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। নলছিটি থানার পুলিশ কলাপাড়া থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
নিহত মুক্তার বড় বোন রিফাত জাহান বলেন, মুক্তা কলাপাড়ার সোহাগ নামে এক যুবকের সঙ্গে কথা বলতো। আমার সঙ্গেও ছেলেটির দুই-তিনবার কথা হয়েছে।
এটা আমাদের পরিবারের কেউ জানতো না। সেহাগই আমার বোনের খুনি। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারলে হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ জানা যাবে।বারইকরণ গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, মুক্তার হত্যাকারী যুবকটি মোটরসাইকেল নিয়ে বারইকরণ গ্রামে এসেছিল বলে শুনেছি। পরিকল্পিতভাবে মুক্তাকে হত্যা করে সে পালিয়ে যায়। মুক্তাকে খুন করার জন্য সে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসেছিল বলে এলাকার লোকজন ধারণা করছেন।
নিহত মুক্তার সহপাঠী ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী কলি আক্তার বলেন, মুক্তা খুব ভাল ছিল। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতো। আমাদের সঙ্গে কখনো মুক্তার মনমালিন্য হয়নি। মুক্তার হত্যাকারীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর খান বলেন, মুক্তা নদী পার হয়ে নিয়মিত কলেজে আসতো। তাঁর বাবাও একজন শিক্ষক ছিলেন। সহপাঠীদের কাছ থেকে শুনেছি মেয়েটি অনেক ভাল ছিল, সে ছাত্রীও ভাল। তাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। দিন দুপুরে এভাবে একটি হত্যাকান্ড হয়ে গেল, পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারলো না। আমরা চাই দ্রুত আসামীর সন্ধান নিয়ে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য সোমবার দুপুরে কলেজ শেষে নলছিটির বারইকরণ গ্রামের বাড়িতে যায় মুক্তা। মোবাইলফোনে মুক্তার সঙ্গে জরুরী কথা আছে জানিয়ে কল করেন সোহাগ নামের এক যুবক। মুক্তার বাড়ির সামনের সড়কে আসলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
Leave a Reply