শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন
(বেলায়েত বাবলু)
॥ নগরীতে খ্যাতিমান ডাক্তার মহোদয়রা ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রাকটিস করে থাকেন এটা সবারই জানা। একজন ডাক্তার সকালে এক জায়গায় তো দুপুরে আরেক জায়গায়, বিকেলে এক জায়গায় তো সন্ধ্যায় আরেক চেম্বারে বসে রোগী দেখে থাকেন। তারা কখন কোথায় বসে চিকিৎসা দেবেন এটা তাদের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়।
আসলে আমি আজ একটি ভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। এই নগরীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে সিরিয়াল পাওয়াটা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। পরামর্শ ফি ছাড়া চিকিৎসা সেবা পাওয়ার স্বপ্নও হয়তো কেউ দেখেন না বা দেখা ঠিকও না। ফি দিয়ে ডাক্তার দেখাতে গেলেও ঘন্টার পর ঘন্টা ডাক্তারদের চেম্বারে গিয়ে বসে থাকতে হয়। তাতেও সমস্যা মনে করেননা অনেকে। কিন্তু যখন দেখা যায় কোন ধরনের সিরিয়ালের তোয়াক্কা না করে কেউ কেউ বাঁধাহীনভাবে ডাক্তারদের কক্ষে ঢুকে পড়েন তখন চাইলেও মেজাজটাকে ঠিক রাখা যায়না। কারন আপনি টাকা দিয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকবেন আর কোন কিছু আমলে না নিয়ে কেউ এসে ঢুকে পড়বেন তা কি মেনে নেয়া যায়?
আপনি মুখ বুঝে যদি এটাও মেনে নেন দেখবেন ডাক্তার সাহেবরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য কতোটুকু সময় ব্যয় করেন আর আপনাকে কতোটুকু সময় দেন। নতুন রোগী হলে আপনার কাছ থেকে ৬শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত পরামর্শ ফি নেয়া হবে। আর প্রভাবশালী ব্যক্তিটাকে ডাক্তার সাহেব হেসে বলবেন যান লাগবেনা। আপনাকে অল্প কিছু সময় দিয়ে একগাদা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলা হবে।
ডাক্তার সাহেবই বলে দিবেন অমুক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আসুন। আর যিনি প্রভাবশালী তাকে বেশী সময় ধরে দেখার পর হয়তো সামান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দেয়া হবে। আর সেখানেও ডাক্তার সাহেব ওই ব্যক্তিকে সুবিধা দেবেন। এক্ষেত্রে ডাক্তার সাহেব তার পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে পাঠিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ৫০ থেকে একশ ভাগ ছাড় দেয়ার সুপারিশ লিখে দেন। যদিও অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার এক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে।
ডাক্তার ছাড়ের কথা লিখুক আর নাইবা লিখুক, প্রভাবশালী ব্যক্তির চাওয়া থাক আর না থাক তারা নিজ উদ্যোগী হয়ে ১০০ ভাগ ছাড় দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে দেন। সব দেখে শুনে সঙ্গত কারণেই এসকল ব্যাপারে অনেক প্রশ্নের জন্ম হতে পারে। আপনার প্রশ্নের জবাব আদৌ পাবেন কিনা তার কোন গ্যারান্টি না থাকলেও প্রশ্নগুলো করার অধিকার আমাদের সকলের আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে দ্রুত ও কম খরচে চিকিৎসা সেবা পাওয়া কি সবার অধিকারের মধ্যে পড়েনা? না প্রভাবশালী যে শুধুমাত্র তিনিই সব সুবিধা ভোগ করবেন? প্রশ্ন হচ্ছে যাদের অঢেল আছে তারা কেন পরামর্শ ফি ছাড়া ও কোন অর্থ বা নামকাওয়াস্তে দেয়া অর্থ দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সুযোগ পাবেন? প্রশ্ন হলো আমরা যারা প্রভাবশালীর তালিকায় নেই তারা কেন প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হবো? আসলে এসকল সহজ প্রশ্নের উত্তর যাদের কাছে আসে সমাজে তারাও অনেক প্রভাবশালী। তাই আমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর কখনো জানার সুযোগ আমরা কখনোই পাবোনা।
সবশেষে বলতে হয় ওই কথাটাই, কতোটা পথ পেরুলে পথিক বলা যায়, কতোটা উড়লে পাখি জিরোবে তার ডানা, কতোটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়? প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরতো জানা।
Leave a Reply