বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ জয়পুরহাট সদর উপজেলার পূর্ব-পারুলিয়া গ্রামে নিভা রানী নামে এক বৃদ্ধা মা’কে তার সচ্ছল ছেলেরা ঠিক মত খেতে পরতে দিতেন না এবং তার উপর গালমন্দসহ শারীরিক মানসিক নির্যাতন করা হতো, যা সহ্য করতে না পেরে ওই বৃদ্ধা মা আত্মহত্যা করেন, বলে এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন। বৃদ্ধা নিভা রানী বৃহস্পতিবার কোন এক সময় নিজ শয়ন কক্ষে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত ছেলেরাসহ এলাকাবাসি । বৃদ্ধা নিভা রানী পূর্ব-পারুলিয়া গ্রামের মৃত রবি চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী ও অভিযুক্ত ২ ছেলে সুজয় চন্দ্র মণ্ডল ও সুজিত চন্দ্র মণ্ডলের মা।
সরেজমিনে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার পূর্ব-পারুলিয়া গ্রামের রবি চন্দ্র মণ্ডল তার বিধবা স্ত্রী নিভা রানী এবং তার কর্মক্ষম, স্বাবলম্বী ও সচ্ছল ২ ছেলে সন্তান রেখে মারা যান বেশ ক’বছর আগেই। ছেলেরা বিয়ে করে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখে দিন পার করলেও তাদের কাছে যেন ভারী বোঝা হয়ে ওঠেন বৃদ্ধা মা নিভা রানী। ঠিক মত মা’য়ের ভরন-পোষণ তো দিতেনই না, উপরন্তু অবহেলা, গালমন্দ ছিল নিত্য দিনের, এমন অভিযোগ গ্রামবাসীদের। প্রতিবেশী দিবাকর চন্দ্র মিঠু, একই গ্রামের হাসান ও বৃদ্ধা মর্জিনা জানান, সুজিতের মা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পেয়ে তারা দেখতে আসেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশীদের প্রায় সকলেই অভিযোগ করে বলেন, অবহেলা আর অনাদরের পাশাপাশি খেতে চাইলেই প্রায়ই তার উপর চলত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। শুধু ছেলেরাই নয়, পুত্রবধূদেরও যেন পথের কাঁটা ছিলেন অসহায় বৃদ্ধা নিভা রানী। এ ভাবেই ছেলে আর পুত্রবধূদের অবহেলা আর অযত্নে দিনের পর দিন অর্ধাহারে, অনাহারে আমৃত বেঁচেছিলেন এই দুঃস্থ মা। অবশেষে জীবনের পড়ন্ত বেলায় কষ্ট সইতে না পেরে আত্ম হত্যা করে এ জনমের ক্ষুধা নিবারণ করে পর পাড়ে যেতে পারেন, এমন অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
এ ব্যাপারে বৃদ্ধার এক ছেলে দায়সারা বক্তব্য পাওয়া গেলেও শত চেষ্টাতেও দেখা মেলেনি অপর অভিযুক্ত ছেলেকে। মৃত রবি চন্দ্র মণ্ডল ও নিভা রানীর অভিযুক্ত ছেলেদের একজন সুজিত চন্দ্র মণ্ডল জানান, ‘এলাকাবাসী যা বলছেন, তা তাদের আক্ষেপ ও আবেগের কথা, মা’র সাথে এগুলো কখনই ঘটেনি, এলাকাবাসী আমাদের উপর ক্ষুব্ধ কেন, তাই তো বুঝি না… এখন আপনারা যা ভালো মনে করেন,তাই করেন।
জয়পুরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহরিয়ার খান বলেন, “বৃদ্ধা নিভা রানীর প্রতি তার ছেলে ও পুত্রবধূদের অবিচার জুলুমের শিকার হয়ে ওই বৃদ্ধা আত্মহত্যা করেছেন, এলাকাবাসীদের এমন অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ নিভা রানীর মৃতদেহটি অভিযুক্ত ছেলেদের কাছে হস্তান্তর করলে গত রাতেই তাকে দাহ করা হয়।
তবে বিষয়টি পুলিশ খতি দেখছে, এ ছাড়াও এ ব্যাপারে যদি কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়, সব দিক বিবেচনা করে তরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ওসি ।
বৃদ্ধা মা নিভা রানীর করুন পরিণতির বিচার চেয়ে এলাকার বৃদ্ধ মা-বাবাসহ সচেতন এলাকাবাসী। জীবনের শেষ দিনগুলোর অপেক্ষমাণ বৃদ্ধদের আর যেন নিভা রানীর মত করুন পরিণতি পোহাতে না হয়,এমন দাবী সচেতন মহলের।
Leave a Reply