বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন
তানজিল জামান জয়,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি।। ভুতুড়ে নামে বিতরণ করা হয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর দশ টাকা কেজি দরে চাউল। উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন ২০ হাজার ১৫৩ জন সুবিধাভোগী কার্ডধারীর মধ্যে ৩৮২৪ টি কার্ড বের হয়েছে যা অস্থিত্বহীন। কলাপাড়ার বাসিন্দা হলেও এই কার্ডধারীরা জানতেনও না তাদের নামে দশ টাকা কেজি দরে প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাউল উত্তোলন করা হচ্ছে।
ডিলার, জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম চৌকিদারেরর গোপন আতাঁতে এই চাউল ছাড়িয়ে তা বাজারে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে বছরের পর ব্ছর। কলাপাড়ার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের বরকতিয়া গ্রামে ১১ দুঃস্থ্য মানুষের খাদ্যবান্ধব কার্ড জালিয়াতির তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে বের হয়ে আসে এ তথ্য। বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন ভূয়া তিন সহ¯্রাধিক কার্ড বাতিল করে প্রকৃত দুঃস্থ্যদের নামে এ কার্ড বরাদ্দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং জালিয়াতির সাথে জড়িতদেন বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানাযায়,খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির এ কার্ডধারীরা বছরের মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই পাঁচ মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল নির্দিষ্ট ডিলারদের কাছ থেকে ক্রয়ের সুবিধা পাচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনা রয়েছে গ্রামে বসবাসরত সবচেয়ে হতদরিদ্র পরিবার, ভূমিহীন, কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, উপার্জনে অক্ষম, বিধবা/তালাকপ্রাপ্তা/স্বামী পরিত্যক্তরা এই সুবিধা ভোগ করবেন। কিন্তু কলাপাড়ায় এ নিয়ম মানছেন না ডিলাররা। নামে-বেনামে কার্ড করে প্রতি মাসে সরকারি হিসেবেই ৩৮২৪ জনের ৩০ কেজি করে এক লাখ ১৪ হাজার ৭২০ কেজি(২৮৬৮ মন) চাউল কালো বাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থা চলছে ২০১৬ সাল থেকে।
এ অনিয়মের চিত্র প্রশাসনের নজরে এলে এ ভূয়াকার্ড বাতিল করার উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। প্রাথমিক তদন্তে— কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের ৩৫৭টি, টিয়াখালীর ৮৭৮টি, লালুয়ায় ৬৩৩টি, মিঠাগঞ্জে ৩৭৪টি, নীলগঞ্জে ৩৫২টি, মহিপুরে ৯৬টি, লতাচাপলী ২৪৯টি, ধানখালীতে ১২৯টি, ধুলাসারে ৩১টি, বালিয়াতলী ২৪৬টি, ডালবুগঞ্জ ২৫৯টি এবং চম্পাপুর ইউনিয়নের ২২০ টি কার্ড সংশোধন করা হয়েছে।
কলাপাড়ার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ১১ কার্ডধারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে এসে তাদের নামে চাউল বছরের পর বছর ধরে কারা উত্তোলন করছে এর বিচার দাবি করলে বেরিয়ে আসে কলাপাড়ার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর কার্ড জালিয়াতির তথ্য। যদিও প্রশাসন আগেই এই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে এবং তিন সহ¯্রাধিক কার্ড বাতিল করে প্রকৃত দুঃস্থ্যদের নামে বরাদ্দ এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রকাশ্যে টানানোর নির্দেশ দেয়।
ডালবুগঞ্জের বরকতিয়া গ্রামের মো. হানিফ। কার্ড নং ৮৮০। ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে চার মাস চাউল উত্তোলন করেছেন। কিন্তু তারপরই তার কার্ডটি আটকে দেয় চৌকিদার আবু সালেহ। অথচ গত ১২ মাস তার নামে ত্রিশ কেজি করে ৩৬০ কেজি চাউল উত্তোলন করা হয়েছে। বিষয়টি তিঁনি জানেন না। একইভাবে ৯৭৮ নং কার্ডধারী আম্বিয়া বেগমের নামে ১০ মাস, ৮৮৩ নং কার্ডধারী ছালেহা বেগমের নামে ১২ মাস,৮৭৯ নং কার্ডধারী মো. সিদ্দিকের নামে ১২ মাস, ৯০২ নং কার্ডধারী আমির হোসেনের নামে ১৭ মাস, ৮৮৭ নং কার্ডধারী হান্নান সরদারের নামে ১৬ মাস, ৯০৭ নং কার্ডধারী মাহাতাবের নামে ১১ মাস ৩০ কেজি করে চাল উত্তোলন করে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। অথচ তারা জানতেনও না প্রতিমাসে তাদের নামে চাল উত্তোলন হচ্ছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ করেন, কার্ডে তাদের নাম থাকলেও টাকার বিনিময়ে তাদের ছবি পাল্টে অন্যজনের ছবি বসিয়ে চাউল উত্তোলন করছে। ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের এক চৌকিদার এ কাজ করেছেন। এ ভূক্তভোগীদের কেউ ভিক্ষুক, কেউ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা বৃদ্ধ।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মেসবাহ খান বলেন, গ্রামবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বরকতিয়া গ্রামের চৌকিদার আবু সালেহর কাছ থেকে ১১টি কার্ড উদ্ধার করেন। এ কার্ডের চাউল এতোদিন চৌকিদার উত্তোলন করে বিক্রি করে দিচ্ছিলো।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, খাদ্যবান্ধব তালিকায় অনিয়মের তথ্য পেয়ে তালিকা সংশোধন করা হয়েছে এবং তিন সহ¯্রাধিক নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply