বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৪ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গণপরিবহনের মতো অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে গণপরিবহন। এসময়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরনে যাত্রী ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী এরি মধ্যে বুধবার থেকে বরিশালসহ দেশের সকল রুটের বাসের বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হয়েছে। সেই সাথে বৃহস্পতিবার ১ এপ্রিল থেকে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে নৌ রুটের যাত্রী পরিবহনে। সেই সাথে সকল রুটে নৌ-পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তও হয়েছে।
বুধবার সচিবালয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ঈদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বৈঠকে লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ যাত্রীবাহী নৌ পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু।
বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস স্ট্যান্ড এবং নগরীর রূপাতলী বাস স্ট্যান্ডে যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত বর্ধিতহারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতার কথা বলা হলেও কোন বাস টার্মিনালেই সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। আবার বেশিরভাগ যাত্রীই মাস্ক বিহীন বাস ভ্রমন করছে। আবার অর্ধেক যাত্রী তোলার নির্দেশনা থাকলেও বেশিরভাগ বাসে তা মানা হচ্ছে না। টার্মিনাল থেকে সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বের হলেও পথে পথে যাত্রী তোলার অভিযোগ উঠেছে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন অনেক যাত্রী।
বরিশাল-পটুয়াখালী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা মতে সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বুধবার সকাল বাস চলাচল শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বাসে ওঠার আগেই যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক এর ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করছেন চালক, সুপারভাইজার ও চালকের সহযোগিরা। মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিটি বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মাস্ক এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি বাস টার্মিনালে মাইকিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষনের জন্য আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তিনটি টিম গঠন করে দিয়েছি। এর মধ্যে একটি রূপাতলী, একটি বাকেরগঞ্জ এবং অপর টিম বরিশাল-বাকেরগঞ্জের মধ্যবর্তি বোয়ালিয়ায় দায়িত্ব পালন করছেন। টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাবার পরে বাসে যাত্রী তুলে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে কি-না সে বিষয়টি দেখভাল করবেন তারা। আবার বরিশাল সমিতির বাইরে পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর এবং ঝালকাঠি মালিক সমিতিও একইভাবে টিম গঠনের মাধ্যমে বাসে স্বাস্থ্যবিধি এবং অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে কি-না সে বিষয়টি তদারকি করছেন।
বাস মালিক নেতা কাওসার হোসেন শিপন বলেন, ‘সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা এই মুহুর্তে জরুরি ছিল। তবে এতে আমাদের মালিকদের ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা টার্মিনাল থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস ছেড়ে দিলেও শ্রমিকরা মাঝ পথে যাত্রী তুললে সেটার দায় আমরা নিতে পারছি না। কেননা যাত্রী তুললেও সেই ভাড়া আমরা মালিকরা পাচ্ছি না। সেটা থেকে মালিকরাই লাভবান হবে। অথচ এ অপরাধে মামলা হলে সেই দায়ভার বাস মালিকদেরকেই নিতে হবে। আবার যাত্রীরাও ৬০ শতাংশ ভাড়া দেয়া নিয়ে ঝামেলা করছে। বুধবার প্রথম দিনেই এ নিয়ে ঝাত্রীদের সাথে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ বিষয়ে মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠন ও প্রশাসনের তদারকি প্রয়োজন বলে মনে করেন বাস মালিকরা।
অপরদিকে, যাত্রীবাহী নৌ-পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘বুধবার সচিবালয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে লঞ্চ মালিকদের নিয়ে ঈদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে বৃহস্পতিবার থেকে লঞ্চগুলোতে ধারন ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী তোলার পাশাপাশি এ দিন থেকেই ৬০ শতাংশ হারে বর্ধিত ভাড়া রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। সেই সাথে বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকা-বরিশালসহ সকল নৌ রুটে লঞ্চ বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মালিকদের পক্ষ থেকে লঞ্চগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। মাস্ক ছাড়া যাতে যাত্রীরা লঞ্চে উঠতে না পারে সে বিষয়ে সার্বক্ষনিক প্রচারণার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ করে লঞ্চে প্রবেশের পূর্বে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার করা এবং মাস্ক পরার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে শ্রমিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া লঞ্চের প্রবেশ পথে জীবাণুনাশক টানেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তবে এই মুহুর্তে বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধির কোন সুযোগ নেই। কেননা বরিশালে এখন আর রোটেশন নেই। প্রতিদিন ৬-৭টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী যাত্রী হচ্ছে না। তার পরেও ঈদের পূর্বে যাত্রীদের চাপ বাড়লে আরও তিনটি লঞ্চ বৃদ্ধি করা হবে। পাশাপাশি আমরা ডাবল ট্রিপের ব্যবস্থা করবো। আশাকারছি সরকারের স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করেই যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করবে।
Leave a Reply