বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান। আক্রান্ত হওয়ার পর রাজধানীর রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
বুধবার (৭ এপ্রিল) রাতে ডিআইজি হাবিবুর রহমানের করোনামুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের এসপি (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফিন্যান্স) ড. মো. এমদাদুল হক।
তিনি বলেন, ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সর্বশেষ করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। তিনি এখন করোনামুক্ত। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি হাসপাতাল ছেড়ে নিজ বাসায় ফিরেছেন। গত ২৩ মার্চ তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত দুটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন ডিআইজি হাবিব। পূর্বপশ্চিমের পাঠকদের জন্য ডিআইজি হাবিবের দুটি ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রথম স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ছিলাম দীর্ঘদিন। গত রাতে বাসায় ফিরে এসেছি। গত ১৫ দিনে এত বেশি শুভানুধ্যায়ী আমার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন, আল্লার কাছে প্রার্থনা করেছেন, সুস্থ হওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার পাঠিয়েছেন; তাদের সবার নাম উল্লেখ করা ফেসবুকের এই সীমিত পরিসরে সম্ভব নয়। সবার প্রতি আমার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
‘হাসপাতালের নিয়মের কারণে, অনেক প্রিয় মানুষ দেখতে এসেছেন, বেশিরভাগই দেখা করতে না পেরে ফিরে গেছেন। নিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিকে তুচ্ছজ্ঞান করে, আমার প্রতি যে মমতা সবাই দেখিয়েছেন; সবার প্রতি আমি আমার আন্তরিক শুভকামনা জানাচ্ছি। যারা দেখা করতে এসে ফিরে গেছেন, তাদের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনাদের সহযোগিতার কারণেই হয়তো আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে এসেছি।’
‘আমার অনেক প্রিয়, স্নেহাস্পদ ও শ্রদ্ধেয়জন আমার জন্য দোয়া করেছেন। অনেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন। মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনাদের দোয়া কবুল করেছেন। আপনাদের প্রতি আমি মোবারকবাদ জানাচ্ছি।’
‘আমি হয়তো সবার কথা লিখতে পারছি না। তবে সবাই জানবেন, আমি আপনাদের সবার নাম সযত্নে সংরক্ষণ করেছি। আপনাদের এই ভালোবাসা কোনোদিন ভুলে যাওয়ার নয়।’
দ্বিতীয় স্ট্যাটাসে ডিআইজি হাবিব লেখেন, ‘গত ১৫ দিন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। কিছু সামাজিক যোগাযোগের সুযোগও হয়েছিল। তাদের মধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ছিলেন। তাদের সবাই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন একটা বিষয় নিয়ে, সরকারি একটি হাসপাতাল কীভাবে এত পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক হতে পারে, কীভাবে এর সেবা এতটা আন্তরিকতায় পূর্ণ হতে পারে; ইত্যাদি আরও অনেক বিষয় নিয়ে। বিস্মিত হওয়ার পাশাপাশি তারা আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশের গর্ব- এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সবাইকে। তাদের মতামত আর কৃতজ্ঞতাবোধের সঙ্গে আমারও বুকটা গর্বে ভরে ওঠে।’
‘একটু পিছনে ফিরে দেখি। ড. বেনজীর আহমেদ (আইজিপি) চাকরিজীবনের শুরু থেকেই একজন ব্যতিক্রমধর্মী কর্মকর্তা, ভিশনারি লিডার। বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, নেতৃত্ব, পেশাদারিত্ব এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গুণাবলির উৎকর্ষে, তিনি অনুসরণীয়। কালের প্রবাহে, খুব স্বাভাবিক নিয়মে, আজ তিনি বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি। ইতোপূর্বে ডিএমপি কমিশনার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থেকে অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন পুলিশ তথা সরকারের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। গত বছর মার্চে যখন করোনাভাইরাস এদেশে তার থাবা বিস্তার করছিল, যখন মৃত্যু প্রতিদিনের সংবাদের প্রধান শিরোনাম, যখন সবাই আতঙ্কে দিশেহারা, যখন মানবতা হারিয়ে গিয়েছিল- সন্তান তার পিতার মৃতদেহ সৎকারে অনিচ্ছা প্রকাশের মতো ঘটনায় সারাদেশ হতবাক; তখন ফিনিক্স রোডের পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বসে ফিনিক্স পাখির মতো এগিয়ে এলেন ড. বেনজীর আহমেদ। নির্দেশনা দিলেন, অধীন ইউনিট ও ইউনিট কমান্ডারদের। জেগে উঠল বাংলাদেশ পুলিশ, নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে এগিয়ে এলো মানবতার সেবক হয়ে, নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠল বাংলাদেশ পুলিশ।’
‘দূরদর্শিতার এক অনন্য নিদর্শন স্থাপন করলেন ড. বেনজীর আহমেদ। নিজ বাহিনীকে সম্মুখসারির যোদ্ধা বানিয়ে তিনি তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের আধুনিকায়নের ব্যবস্থা করলেন। ২০২০-এর মার্চের পূর্বের রাজারবাগ হাসপাতাল আর আজকের রাজারবাগ হাসপাতালের পার্থক্য দেখে যে কেউ বুঝতে পারবেন, অল্প সময়ে কতটা আধুনিকায়ন সম্ভব। বলতে দ্বিধা নেই, ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের কারণেই আজ সারা দেশের করোনা রোগীদের প্রথম পছন্দ রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল।’
‘পাশাপাশি আইজিপি মহোদয়ের সুযোগ্য সহযোগী হাসপাতাল পরিচালক ড. হাসানুল হায়দার স্যারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। তিনি যোগদানের পর থেকেই কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের আধুনিকায়নের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সেই প্রচেষ্টার ফসল আজকের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল। স্যারের দূরদর্শী পরিচালনায় ড. এমদাদ, সুপারিনটেনডেন্ট ড. মনোয়ার অ্যাডিশনাল এসপি শান্তসহ একঝাঁক তরুণ চিকিৎসক তাদের ব্যবস্থাপনা, সেবা, নার্সিং, পরিচ্ছন্নতা সবাই মিলে যে টিম ওয়ার্কের নজির স্থাপন করেছেন; তা এক কথায় অভূতপূর্ব।’
‘ব্যক্তিগতভাবে সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আজ সুস্থ হয়ে আমি হাসপাতাল থেকে ফিরে যাচ্ছি। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি, অসাধারণ কিছু স্মৃতি সীমাহীন আত্মবিশ্বাস বিশেষ করে দূরদর্শী পুলিশি নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা।’
Leave a Reply