মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কারা কর্তৃপক্ষ নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি বন্দির সংখ্যা কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে তিন হাজারের বেশি বন্দিকে মুক্তির প্রস্তাব করে একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। জামিনযোগ্য ধারায় তাদের মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। এরপর বিচারক জামিন দিলেই তাদের মুক্তি দেবে কারা কর্তৃপক্ষ।
করোনা পরিস্থিতিতে এই প্রথম কারা কর্তৃপক্ষ বন্দির সংখ্যাধিক্যের কথা বিবেচনা করে মুক্তির জন্য এমন প্রস্তাব দিল। এ ছাড়া পৃথক আরেকটি আইনের ধারায় আরও দেড় হাজার বন্দিকে মুক্তির কথা ভাবা হচ্ছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে যাদের সাজা খাটার হিসাব ২০ বছরের বেশি পার হচ্ছে, তারা ওই প্রক্রিয়ায় ছাড়া পাবেন।
এ হিসাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোট সাড়ে চার হাজারের বেশি মুক্তি পেতে পারেন। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজার হাজতি ও বাকিরা কয়েদি। স্বরাষ্ট্র ও কারাগারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, সরকারের নির্দেশনার আলোকে তিন হাজার বন্দির একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি এখন স্বরাষ্ট্র থেকে আইন ও বিচার বিভাগে যাবে। জামিনযোগ্য ধারায় বিচারক তাদের জামিন দিলেই কারা কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ কারাবন্দিদের মুক্তি দিয়েছে।
কর্নেল আববার হোসেন আরও বলেন, কারাবন্দি কারও শরীরে এখন পর্যন্ত করোনার জীবাণুর অস্তিত্ব ধরা পড়েনি। তবে শুরু থেকে করোনাভাইরাস রোধে কারা কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সতর্কতার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই।
কারাগারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কারাবন্দির মধ্যে কারও মধ্যে যাতে করোনার সংক্রমণ না ঘটে, এ ব্যাপারে সতর্ক সংশ্নিষ্টরা। কারণ কারাগারে এক জায়গায় অনেক বন্দি থাকেন। তাদের অন্যত্র যাওয়ার সুযোগও থাকে না। তাই এ ধরনের জায়গায় করোনার সংক্রমণ ঘটলে তা বিপজ্জনক হতে পারে। দেশের ৬৮টি কারাগারের ৯০ হাজারের মতো বন্দি রয়েছে। ধারণক্ষমতার তিনগুণ বন্দি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনা পেয়েই জামিনযোগ্য ধারায় সারাদেশের বন্দিদের মধ্যে তিন হাজার ৯২ জনকে মুক্তির প্রস্তাব করে তালিকা তৈরি করে কারা প্রশাসন।
সংশ্নিষ্ট অপর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী আরও এক হাজার ৪৬৯ জন বন্দিকে মুক্তির বিষয়টি নিয়ে ফাইল নড়াচড়া চলছে। ২০ বছর সাজা খেটেছেন এমন কয়েদিদের মধ্যে যারা খুব অসুস্থ, অক্ষম বা বৃদ্ধ, তাদের জন্যই এ ধারা প্রযোজ্য।
এ ছাড়া কেউ খুব ভালো আচরণ করলে তার ক্ষেত্রেও ধারাটি প্রয়োগ হতে পারে। তবে বিতর্কিত কারও জন্য এ ধারা প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়।
কারাগারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী এর আগে ২০১০ সালে এক হাজারের বেশি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
কারাসংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের কারাগারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্দি রয়েছে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে বর্তমানে ৯ হাজারের মতো বন্দি আছে। তবে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য জানার পর কারাগারে নতুন বন্দির সংখ্যা কমছে। বর্তমানে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে গড়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন নতুন বন্দি আসছে। আগে যে সংখ্যা ছিল ২০০-৩০০ জন।
জানা গেছে, বর্তমানে কারাগারে কোনো নতুন বন্দি এলেই তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। পুরোনো কোনো বন্দির সঙ্গে তাকে মিশতে দেওয়া হয় না। এ ছাড়া তার স্বাস্থ্যের ওপর নজরও রাখা হচ্ছে। আক্রান্ত সন্দেহে এরই মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও বাগেরহাট জেলে বন্দি তিনজনের লালা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন চীনের নাগরিক ও একজন সম্প্রতি চীন থেকে ফিরেছে। চীনের ওই দুই নাগরিক অনেকদিন ধরেই বাগেরহাট কারাগারে রয়েছে। আর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অপর যে বাংলাদেশি নাগরিকের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হয়েছে, সে একটি জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়। চীন থেকে ফেরার পরই তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পরীক্ষায় চীনের দুই নাগরিকসহ তিন কারাবন্দির কারও শরীরে করোনার জীবাণু পাওয়া যায়নি। তারা তিনজনই সুস্থ রয়েছেন। আইইডিসিআরের প্রতিনিধিরা কারাগারে গিয়ে ওই তিনজনের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কারাবন্দি ও কারাগারের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সাবান, হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার ব্যবহার ছাড়া কেউ কারাগারে ঢুকতে পারছেন না। শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা কারার জন্য ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। কারাবন্দিদের সঙ্গে তাদের স্বজনরা দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মোবাইলে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের যোগাযোগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
হাজতি বন্দিদের সঙ্গে ১৫ দিনে একবার এবং কয়েদিদের সঙ্গে ৩০ দিনে একবার সাক্ষাতের অনুমতি পাবেন স্বজনরা। প্রতি বন্দির সঙ্গে সর্বোচ্চ দু’জন দেখা করতে পারবেন।
করোনা পরিস্থিতিতে বন্দিদের জন্য ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার পরিবেশন করতে বলা হয়। কারাগার ও এর আশপাশ এলাকা জীবাণুমুক্ত রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমলেও যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, ইরানসহ অনেক দেশে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। আর তাই এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রায় ৮৫ হাজার বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইরান। করোনা আতঙ্কে ইতালির একটি কারাগারে ভয়াবহ দাঙ্গায় প্রাণ গেছে অন্তত ১০ জনের।
এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের ৬৪ জেলার কারাবন্দি আসামিদের প্রিজনভ্যান বা অন্য কোনো উপায়ে মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে দেশের সব জেলা ও দায়রা জজকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply