বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ পূর্বাহ্ন
পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥ অবশেষে পিয়াইবির তদন্তে দুই বছর পর উন্মোচিত হল ঢাকার আশুলিয়ার বিউটিশিয়ান কান্তা হত্যা রহস্য। এ ঘটনায় ধরা ছোয়ার বাইরে থাকা কান্তার স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগর, সহযোগী খুনী মামাতো ভাই মামুন, কুয়াকাটা আল-মদিনা আবাসিক হোটেলের মালিক দেলোয়ার, তার ছোট ভাই আনোয়ার, ম্যানেজার আমির, বয় সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে হয়। কুয়াকাটা থেকে গ্রেপ্তারকৃত চারজনকে পিআইবি নরসিংদি নিয়ে গেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নরসিংদী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ইন্সপেক্টর মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, নরসিংদীর বেলাবো থানার সোহরাব হোসেন রতনের মেয়ে মার্জিয়া আক্তার কান্তা ঢাকার আশুলিয়ায় বিউটি পার্লারের ব্যবসা করতেন। সেখানে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারীর শহিদুল ইসলাম সাগরের সাথে পরিচয়ের সূত্রে দুই লাখ টাকার কাবিননামায় মুসলিম শরীয়ত অনুযায়ী তাদের বিয়ে হয়।
বিয়ের কিছু দিন পর মার্জিয়া কান্তা জানতে পারে তার স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। বিষয়টি গোপন করে তাকে বিয়ে করায় সহজে মেনে নিতে পারছিল না কান্তা। এ নিয়ে কান্তা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরকে একজন প্রতারক লম্পট ও অসহায়ত্বকে জিম্মি করে একাধিক মেয়ের জীবন নষ্টকারী বলে উল্লেখ করে।
এরপর ভালবাসার অভিনয় করে ভারতে বেড়াতে নিয়ে যাবার কথা বলে স্ত্রী মার্জিয়া কান্তার মনজয়ের চেষ্টা করে এতে সফলও হয় স্বামী সাগর। পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থেকে স্বামী-স্ত্রী প্রথমে শরীয়তপুরে আবাসিক হোটেল নূর ইন্টারন্যাশনালে এসে রাত কাটায়। সেখানে স্বামী শহিদুলের মামাত ভাই মামুন এসে তাদের সাথে যুক্ত হয়।
পরদিন তারা শরীয়তপুর থেকে কুয়াকাটায় এসে আবাসিক হোটেল আল মদিনার বি-১ নম্বর কক্ষে ওঠে। হোটেলে ওঠার পর কোন এক সময় কান্তকে হত্যা করে পলিথিনে লাশ মুড়িয়ে খাটের নিচে রেখে দুই খুনি শহিদুল ও মামুন পালিয়ে যায়।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বিকেলেও ওই হোটেল কক্ষে তালা ঝুলতে দেখে কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে মহিপুর থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে কান্তার ব্যবহৃত জামা-কাপড় জব্দ করে নিয়ে গেলেও বক্স খাটের নিচে লাশ থাকার বিষয়টি তাদের নজরে আসেনি। এর দুই তিন দিন পর ওই কক্ষ থেকে দুর্গন্ধ বের হলে হোটেল ম্যানেজার আমির এবং হোটেল বয় সাইফুলের নজরে এলে তারা হোটেল মালিককে জানায়।
হোটেল মালিক দেলোয়ার ও তার ছোট ভাই আনোয়ার এবং ম্যানেজার আমির ও বয় সাইফুল চারজনে মিলে হত্যার আলামত নষ্ট করে লাশ গুমের সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত এগারটার দিকে বস্তায় ভরে দোলোয়ার ও আনোয়ার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম দিকে লেম্বুরচর এলাকায় আন্ধারমানিক নদী মোহনায় লাশ ভাসিয়ে দেয়। আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষের এভাবে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ায় খুনিরা এতদিন ধরা ছোয়ার বাইরে থাকলেও পিবিআইর তদন্তে হত্যকান্ডের রহস্য দুই বছর পর উন্মেচিত হয়।
এঘটনার প্রায় একবছর পর নরসিংদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরসহ তার পরিবারের পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মার্জিয়া কন্তার বাবা সোহরাব হোসেন রতন বাদী হয়ে ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ হত্যা করে লাশ গুমের মামলা দায়ের করে। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে নরসিংদীর বেলাবো থানায় এজাহার হিসেবে গণ্যকরে তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরবর্তিতে আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
অভিযুক্ত স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরকে গ্রেফতারের পর তদন্তের হালে পানি পায়। এরপর সহযোগী অপর খুনি মামাত ভাই মামুন পিবিআইর জালে চলতি বছর ১ সেপ্টেম্বর ধরা পড়লে তদন্তের আরও গতি পায়। মামুনের দেওয়া তথ্যনুযায়ী তাকে নিয়ে পিবিআই কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল আল-মদিনায় বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) অভিযানে গেলে হোটেল মালিক দোলোয়ার ও তার ছোট ভাই আনোয়ার, হোটেল ম্যানেজার আমির এবং বয় মার্জিয়া কান্তার লাশ গুমের সত্যতা স্বীকার করলে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
মামলার তদন্তের বিস্তারিত অগ্রগতি তুলে ধরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নরসিংদী পিবিআইর পরিদর্শক মোঃ মনিরুজ্জামান গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করার কথা জানিয়েছেন।
মহিপুর থানার ওসি মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, হোটেলে অবস্থানকারীরা ভাড়া পরিশোধ না করেই তাদের ব্যবহৃত কিছু জামাকাপড় রেখে পালিয়েছে মর্মে হোটেল আল মদিনার পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ওইসব ব্যবহৃত জামাকাপড় তখন জব্দ করে থানায় রাখে। পরবর্তীতে খাটের নিচে লাশ পাওয়ার বিষয়টি পুলিশকে না জানিয়ে হোটেল মালিক ও কর্মচারীরা আলামত নষ্ট করে লাশ গুম করে।
Leave a Reply