শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন
এইচ.এম.এ রাতুল: বরিশালে ভ্যাপসা গরম আর বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ৮ লক্ষাধিক গ্রাহককে। এতে করে সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। তারা বলছেন, ইদানিং বাড়তি বিল আসছে ঠিকই, কিন্তু বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী সাপ্লাই না থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, বরিশালে বুধবার দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বাতাসে আদ্রতা রয়েছে ৮১ শতাংশ।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ ও ২ এবং ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন (ওজোপাডিকো) ডিভিশন ১ ও ২ এ মোট ৮ লাখ ১১ হাজার গ্রাহকের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২৫৫ মেঘাওয়াট। আর গত ২/৩দিন যাবত সাপ্লাই পাচ্ছে ১৮৫ মেঘাওয়াটের কিছু কম/বেশি। ফলে বিপুল এ গ্রাহক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। এ কারণে শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে।
সূত্রমতে, বরিশাল ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ডিভিশন-১ এ ৭০ হাজার গ্রাহকের প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৮০ মেঘাওয়াট। আর ডিভিশন-২ এ ৬৬ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩৫ মেঘাওয়াট। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সাপ্লাই না থাকায় শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের। তবে গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল সিটি এলাকায় গত ২/৩ দিন যাবত দিন-রাত মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ বার ঘন্টাব্যাপী লোডশেডিং করা হচ্ছে।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন বলেন, জাতীয় গ্রিডে সমস্যা হলে তার প্রভাব সারাদেশেই পড়ে, যেমনটা বরিশালেও পড়ছে। তবে তার দাবি, গরমের সময় এতটুকু লোডশেডিং স্বাভাবিক। কেননা এ সময়টাতে বিদ্যুতের ব্যবহারও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে।
আর ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বরিশালে চাহিদার তুলনায় গ্রিড থেকে সাপ্লাই না থাকায় এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে তা খুবই সামান্য।
এদিকে বরিশালে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৬ লাখ ৭৫ হাজার গ্রাহকের ১৪০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে গত ২/৩দিন যাবত সাপ্লাই ১০৫ মেঘাওয়াট থাকায় সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১-২ ঘন্টা লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। তবে গ্রাহকদের দাবি, প্রতিদিন তিন থেকে চারবার কখনো ১ ঘন্টা আবার কখনো দুই ঘন্টা লোডশেডিং পাচ্ছেন তারা।
বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সমিতি-১ এর আওতায় ৩ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহকের চাহিদা রয়েছে ৭০ মেঘাওয়াট। আর এ চাহিদার বিপরীতে গত দু’তিন দিন যাবত সাপ্লাই পাচ্ছেন ৪৫ মেঘাওয়াট। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ ১-২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) মো. সাদেকুর রহমান জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতায় গ্রাহক সংখ্যা ৩ লাখ ২৫ হাজার। যাদের চাহিদা রয়েছে ৭০ মেঘাওয়াট। তবে গ্রিড থেকে সাপ্লাই পাওয়া যাচ্ছে ৬০ মেঘাওয়াট। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত মিলিয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। এটা সহনীয় পর্যায়ের মধ্যে পড়ে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ভোলা ও পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বরিশালে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ভোলায় একটি প্লান্ট বন্ধ থাকায় বর্তমানে বিদ্যুৎ সাপ্লাই কম রয়েছে। তিনি বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে এসিসহ বিদ্যুৎ ব্যবহার আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে, এর ফলে পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, কিন্তু চাহিদার বিপরীতে অন্তত ২০ ভাগ বিদ্যুৎ কম সরবরাহ থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল বলেন, বরিশালে তাপমাত্রা কম থাকলেও বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। তবে শনিবার থেকে বরিশালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
Leave a Reply