শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নেমেছেন বরিশাল-৫ (সদর) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে কর্মী সমর্থকসহ অন্য প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। নগরজুড়ে দুপুর দুইটার পর থেকে মাইকিং ও গণসংযোগের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণাও চালান তারা। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী সব প্রার্থীই ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহর কর্মী সমর্থকরা মঙ্গলবার আওয়ামীলীগের বিজয় র্যালিতে ব্যাপক শো-ডাউন দেয়। তবে এর কিছুক্ষণ পরই খবর আসে সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছে আদালত। এ খবরে নেতাকর্মীরা হতাশ হলে নগরীর সর্বত্র নিরব অবস্থা দেখা দেয়। সাদিক আব্দুল্লাহর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) করা আপিলের প্রেক্ষিতে চেম্বার জজ আদালতের বিচারক সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেন।
দেখা গেছে, নৌকা প্রতীক হাতে নিয়ে প্রচার প্রচারণার প্রথম দিন থেকেই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ৩০ টি ওয়ার্ড থেকেই আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা নগরীর সার্কিট হাউসের বিপরীতে নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে এসে পৃথক ভাবে লিফলেট বিতরণ করা শুরু করে। একই সাথে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডেই উৎসব মূখর পরিবেশে নেতাকর্মীরা বাংলাদেশ আওয়ামী মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে জনসংযোগ করা শুরু করে দিয়েছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ তুলে ধরে জেলা প্রশাসক অফিস থেকে শুরু করে চকবাজার এলাকা সদর রোড সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জনসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার খবরে সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুর থেকেই সাবেক মেয়র বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবন নগরীর কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে ভিড় করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সমর্থকরা। এ ঘোষণার পর থেকেই সাদিক শিবিরে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সাদিক সমর্থক নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করে।
এদিকে সাদিক আব্দুল্লাহর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) করা আপিলের প্রেক্ষিতে চেম্বার জজ আদালতের বিচারক সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করে। বরিশাল সদর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর হলফনামার বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম। কিন্তু জেলা রিটার্নিং অফিসার সেই অভিযোগ আমলে নেননি। পরে ৬ ডিসেম্বর জাহিদ ফারুকের পক্ষে তার মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী কেবিএস আহমেদ কবির নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পুনরায় আপিল করেন। আপিলের ব্যাপারে জানা যায়, সাদিক আব্দুল্লাহ তার হলফনামায় স্ত্রীর সম্পত্তির হিসাব গোপন করেছেন। তার স্ত্রীর নামে আমেরিকায় বাড়ি আছে। অথচ তিনি তা হলফনামায় দেখাননি। অন্যদিকে সাদিক আব্দুল্লাহ নিজেও দ্বৈত নাগরীক। তিনি আমেরিকার একজন ভোটার। এসব অভিযোগের শুনানি শেষে ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন সাদিকের মনোনয়ন বাতিল করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সাদিক আব্দুল্লাহ ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত শুনানি শেষে গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে রায় প্রদান করেন। এরপর তার সমর্থকরা নগরীতে বিজয় আনন্দ পর্যন্ত করেন। এমনকি বিজয় দিবসের সমাবেশের নামে তার পক্ষে নেতা-কর্মীরা ভোট প্রার্থনা করেন। তবে সেই পরিবেশ বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে চেম্বার জজ আদালতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন বরিশাল-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম। তার পক্ষে আপিল করেন ব্যারিষ্টার এহসানুল হক ও ব্যারিষ্টার সিদ্দিকুর রহমান। বিচারপতি এনায়েতুর রহমান আপিল শুনানি শেষে সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন। ফলে অবৈধ হয়ে যায় তার মনোনয়ন।
মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক বলেন, সাদিকের হাইকোর্টের প্রাপ্ত রায়ের বিরুদ্ধে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে লিপ টু আপিল করা হয়েছিল। বিচারক শুনানি শেষে হাইকোর্টের সেই রায় স্থগিত করে দেন। এতে করে মনোনয়ন অবৈধ হলো সাদিক আব্দুল্লাহর। এরপর আর আপিলের সুযোগ নাই বলে জানান এই আইনজীবী।
Leave a Reply