সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ আর মাত্র ১০ দিন বাকি। ঘুম হারাম প্রার্থীদের। রাত-দিন এক করে চলছে প্রচার-প্রচারণা। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ছুটছেন প্রার্থী বা তার সমর্থকরা। প্রথম দিকে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে হাতপাখার প্রার্থীকে বিবেচনা করা হলেও বেশ কিছু কারণে প্রচারণায় তিনি অনেকটাই পিছনে চলে গেছেন। অপরদিকে তৃণমূল কর্মী সংকটে ভুগছেন লাঙ্গল এবং ঘড়ি। ওদিকে অন্তঃকোন্দলই ভাবাচ্ছে আওয়ামী লীগকে। তাই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নয়, ঘর সামলে কর্মীদের ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টায় দলের নেতাদের নাভিস্বাস উঠেছে।
১২ই জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় দলের শীর্ষ কিছু নেতা ভোটকেন্দ্র হয়তো যাবেন না। কিন্তু তৃণমূল কর্মীরা এরই মধ্যে বিভিণ্ন প্রার্থীর পিছনে ছুটতে শুরু করেছেন।
মেয়র পদে ৭ প্রার্থী থাকলেও মাঠে রয়েছেন মূলত ৪ জন। এরা হচ্ছেন নৌকার আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত, হাতপাখার মুফতি মো. ফয়জুল করিম, লাঙ্গলের ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস এবং ঘড়ি মার্কার কামরুল আহসান রূপন।
প্রথমদিকে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থক ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে না পাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা খুশিতে আটখানা ছিলেন। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে দলটির ঐক্য তত সুদৃঢ় হচ্ছে। মাঠে নেমে পড়েছেন দলের শীর্ষ নেতারাও। নৌকার নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি নিয়ে প্রথমদিকে অনেকেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলেও এরা সবাই যে ঝানু রাজনীতিবিদ তা প্রমাণেও বেশি সময় লাগেনি। ৩০টি ওয়ার্ডেই এখন নৌকার প্রচার প্রচারণা তুঙ্গে। নৌকার নির্বাচনী পরিচালনা কমিটিতে সাদিক আব্দুল্লাহপন্থি কোনো নেতা নেই। তাদের বাদ দিয়েই নির্বাচন করতে হবে- এমনটাই পণ নিয়েই মাঠ সাজাচ্ছেন তারা। যদিও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে সাদিকপন্থি একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও গাজীপুরের মতো বরিশালের পরিণতি চান না দাবি করে একের পর এক নেতা বরিশালে ছুটে আসছেন। সভা করছেন। প্রচারণায়ও নামছেন। সবাইকে নৌকার পক্ষে মাঠে নামারও নির্দেশ দিচ্ছেন। এতে কাজও হচ্ছে। কন্দ্রেীয় এক নেতার মতে, গাজীপুর আর বরিশালের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আওয়ামী লীগ। এখানে সেটা নয়। আর সংখ্যালঘুদের যে ভোট ব্যাংক আছে, তারা নৌকার বিকল্প হিসেবে হাতপাখাকে ভোট দেবে এটি অবাস্তব। অপরদিকে ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন যে এবার হবে না, এটি নেতারাও বুঝতে পারছেন। সে কারণে দলের কোন্দল চাপা দিয়ে ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি।
ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা নিয়ে নানামুখী আলোচনা ছিল। এর সবটাই ছিল আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল ঘরে উঠানো আর বিএনপির ভোট বাগানো। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে- চরমোনাই পীরের বড় সংখ্যায় মুরিদ রয়েছে এটি ঠিক, কিন্তু এরা সবাই যে ভোট দেবেন তার নিশ্চয়তা নেই। এর প্রতিফলনও শুরু হয়েছে। সময় যত গড়িয়েছে, সে স্বপ্নও তত ফিঁকে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মীদের নৌকা ছাড়া যে কিছু তাদের অন্তরে নেই তা বুঝতে সময় লাগেনি। অপরদিকে বিএনপির ভোট ব্যাংক অনেক হিসাব কষছে। গুঞ্জন উঠেছিল আওয়ামী লীগের একটি অংশের প্ররোচণায় ফয়জুল করিমকে প্রার্থী করা হয়েছিল।
এ জন্যই যেদিন প্রার্থী ঘোষণা করার কথা সেদিন আকস্মিকভাবে তা স্থগিত করা হয়। এটি গুজবের বাজারে বেশ দ্রুত ছড়িয়েছে। এ কারণে বিএনপির একটি অংশ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিএনপির বড় একটি অংশ নৌকাকে নয়, খোকন সেরনিয়াবাতকে ভোট দেবে এমনটা পরিষ্কার হচ্ছে। ক্লিন ইমেজ, সৎ লোক এবং গত ৫ বছরের আবর্জনা দূর করতে তাকে দরকার এমনটাই মনে করছেন বিএনপির ভোটাররা। আর ১২ই জুনের নির্বাচনে এটি যদি বাস্তবে রূপ নেয় তাহলে হাতপাখার জোড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যে আভাস মিলেছিল তা হয়তো আর দেখা হবে না।
জাতীয় পার্টির ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরছেন। তৃণমূল কর্মী সংকট ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করছে। ২নং ওয়ার্ডে প্রচারণা চালানোর সময়ে তার সঙ্গে স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকে দেখা যায়নি। ওই নেতা নিজেই বর্তমান কাউন্সিলর এবং জাতীয় পার্টি মহানগরের শীর্ষ নেতা। এভাবে অনেক নেতাই তাপসের সঙ্গে নেই।
মরহুম আহসান হাবিব কামাল একজন সফল মেয়র ছিলেন এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন। তার পুত্র রূপন নির্বাচন করছেন। কিন্তু বিএনপি থেকে তাকে সমর্থন দেয়া হয়নি। উল্টো তাকে বহিষ্কারের তালিকায় রাখা হয়েছে। বাস্তবতা হলো তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠও ছিলেন না। বয়সও কম। প্রতিটি ওয়ার্ডে তার কর্মীদের দেখা মেলে না। নগরীর প্রধান সড়কে তার মাইকিং চলছে। ভোটারদের মতে- তৃণমূল কর্মী ছাড়া প্রচার-প্রচারণা, নির্বাচনে লড়াই করা কষ্টকর।
Leave a Reply