শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ জাটকা নিধন ঠেকাতে অভিযান অব্যাহত থাকলেও বরিশালের বাজারগুলো জাটকা ইলিশে সয়লাব হয়ে গেছে। প্রকাশ্যেই সমস্বরে ক্রেতাদের ডাকা হচ্ছে। এসব বাজার থেকে প্রশাসনের লোকজন মাছ ক্রয় করলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বাধা-নিষেধ ছাড়াই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে জাটকা ইলিশ পাইকারী পাওয়া যাচ্ছে।
বরিশাল নগরীর রসুলপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, রূপাতলী, চৌমাথা, বাংলা বাজার, নতুন বাজার এবং নথুল্লাবাদ বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া শহরের উপকণ্ঠ তালতলী বাজার, মাধবপাশা বাজার, বানারীপাড়া, উজিরপুর, আগৈলঝাড়া, গৌরনদী উপজেলা এবং বাবুগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে।
বরিশাল মৎস্য অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১৮ দিনে অর্থাৎ ৪ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৬২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ৫ দশমিক ৬০১ মেট্রিক টন জাটকা জব্দ করা হয়েছে। এ সময়ে চারজনকে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়। ওদিকে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৫ দিনে ১৯০টি অভিযানে ৯ দশমিক ৩৫৪ মেট্রিক টন জাটকা জব্দ করা হয়।
মৎস্য দপ্তরের অভিযানের তথ্য বলছে- সময়ের সঙ্গে অভিযানে সফল হয়েছে মৎস অধিদপ্তর। কিন্তু বরিশালে হাত বাড়ালেই নিষিদ্ধ জাটকা পাওয়া যায় যে কোনো স্থানে। বরিশালের সবচেয়ে বড় মাছের আড়ৎ রসুলপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ভোরে গিয়ে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে জাটকা বিক্রি করছেন। এছাড়া নিলামেও পাইকারী বিক্রি হচ্ছে জাটকা।
ক্রেতা রূপাতলী বাজারের ব্যবসায়ী হাসান জানান, বাজারে এখন বড় ইলিশ পাওয়া না গেলেও ছোট ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো ক্রেতারাও বেশি কেনেন। কারণ কম দামে পাচ্ছেন। পাইকারী কিনে ৩শ থেকে ৪শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন। তাছাড়া প্রতিদিনই ২/৩ মণ জাটকা তিনি পাইকারী নেন।
নতুন বাজারের ব্যবসায়ী শ্যামল বলেন, ইলিশের বড় অভিযানের সময়ে আমরা বাজারেও বিক্রি করি না। এখনতো বড় ইলিশ বিক্রিতে নিষেধ নেই। কিন্তু বড় ইলিশ কেনার ক্রেতা কম। এজন্য পুরো বছরই জাটকার খুব চাহিদা থাকে। আমরা মোটামুটি সব সময়েই বিক্রি করি।
নথুল্লাবাদের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, আজকে জাটকা নিয়ে আপনাকে (প্রতিবেদক) বললে কাল দেখবো ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে জরিমানা করছে। এমন অভিজ্ঞতা আমার আছে। যেদিন জাটকার বিরুদ্ধে কথা বলেছি তার পরের দিন আমাকেই জরিমানা করেছে।
তিনি বলেন, জাটকা মাছ বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের লোকইতো আমাদের কাছ থেকে জাটকা কিনে নেন। আপনি বরিশালের সব বাজারে গিয়ে জাটকা পাবেন। জাটকা পোর্ট রোড থেকে সব জায়গায় যায়। সেখানে এক দিনও অভিযান চালাতে দেখেছেন?
দুই দিন আগে কথা হয় বাবুগঞ্জের রহমতপুরের ভ্রাম্যমাণ মাছ বিক্রেতা ইউনুস হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিভিন্ন গ্রামে আমি ছোট ইলিশ বিক্রি করি। বড় অভিযানের সময়ে সাবধানে বিক্রি করতে হলেও এখন আর কোনো ভয় নেই। জাটকা না পেলে দেশের মানুষ ইলিশের স্বাদ ভুলে যাবে। কারণ বড় মাছ ক্রয়ের ক্ষমতাতো মানুষের নেই।
মাধবপাশাবা বাজারে কথা হয় হারুন নামে আরেক মাছ বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে জাটকা বিক্রিতে কোনো সমস্যা হয় না। ইদানিং জাটকাবিরোধী অভিযান বন্ধ রয়েছে। আরও কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাছের আড়ত থেকে প্রকাশ্যেই তারা জাটকা কিনে বিভিন্ন পরিবহনে করে বাজারে খুচরা বিক্রি করেন।
বরিশাল নগরীর চৌমাথা বাজারের ক্রেতা আরিফ হোসেন বলেন, আমি মনে করি ইলিশ রক্ষায় কার্যকর কোনো অভিযান চলে না। যেসব অভিযান চলে তাও বিতর্কিত। অথচ বরিশাল শহরের সবগুলো বাজারে সারা বছর জাটকা পাওয়া যায়। অভিযান চালালে শুধু নদীতে নয় মৎস্য আড়ত, মাছের মোকাম আর খুচরা বাজারগুলোতেও অভিযান চালিয়ে এগুলো বন্ধ করতে হবে।
বাংলা বাজারের আরেক বিক্রেতা সজল বলেন, জাটকা সংরক্ষণে প্রশাসনের অভিযান আইওয়াশ মাত্র। তারা মুখে মুখে অভিযান চালায়। আমি প্রতি সপ্তাহে বাংলা বাজার থেকে জাটকা কিনে নিই। এগুলো দামে কম এবং সহজলভ্য।
বরিশাল অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন বলেন, জাটকা নিধন বন্ধ করতে আমরা সব জায়গায়ই অভিযান পরিচালনা করতে পারি। বাজারে জাটকা বিক্রি হচ্ছে- এমন তথ্য জানা ছিল না। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো এবং শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, জাটকা নিরোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে আমাদের লোকবল সংকটের কারণে একই সময়ে সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, জাটকাবিরোধী অভিযান চলমান থাকলেও বাজারে কিছু জাটকা পাওয়া যাচ্ছে এটি সত্য। নদীতে এখন প্রচুর পরিমাণে জাটকা রয়েছে। এতে কিছু পরিমাণ শিকারও হচ্ছে। মৎস্য দপ্তর, জেলা প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একা চাইলে জাটকা শিকার ও বিক্রি প্রতিরোধ সম্ভব না। এজন্য সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় জাটকা বিক্রি বন্ধ করা সম্ভব না। এজন্য তিনি সকলের সহায়তা কামনা করেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের নিচে জাটকা ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।
Leave a Reply