রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন
বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি॥ বরিশালের বাবুগঞ্জে বিএনপি নেতার দ্বিতীয় স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় তার স্বামীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথম স্ত্রীকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
বাবুগঞ্জে বিএনপি নেতার দ্বিতীয় স্ত্রী মারুফা বেগমকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (২১ নভেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকুদিয়া গ্রামে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বলছে এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তখন থেকেই নিহতের স্বামীও তাদের নজরদারিতে রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গৃহবধূর বাবা মো. আইউব আলী বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় গৃহবধূর স্বামী ব্যবসায়ী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মিলন খানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত আরো সাতজনকে।
বাবুগঞ্জ থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যা ও সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিলন খানের প্রথম স্ত্রী ঝুমুর বেগমকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে কিনা, বলেন ওসি।
তিনি আরো জানান, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বামী মিলন খান পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। এর আগে সোমবার দিবাগত রাত দেড়টায় উপজেলার রাকুদিয়া গ্রামে বাসাবাড়ির কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে একদল দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে। তারা এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে গৃহকর্ত্রী ৩০ বছর বয়সী মারুফা বেগমকে হত্যা করে। এ সময় গৃহকর্তা মিলন খানকে কুপিয়ে জখম করে ও বেঁধে টাকা-স্বর্ণালংকার লুট করা হয় বলে দাবি করেছে পরিবার। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছে।
নিহতের বাবা মো. আইউব আলী বলেন, তার মেয়ে নিজের বাড়িতেই থাকতো। তাছাড়া মিলন খানের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। তারপর প্রথম স্ত্রী মিলন খানের মায়ের বাসায় আসতেন। জমিজমা এবং পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
মারুফার ফুফাতো ভাই সাদিকুর রহমান জানান, বাসায় মিলন খান, মারুফা, তাদের দুই সন্তান নিহাদ (৭) ও মাহিন (৩) এবং ভাগনি জুয়েনা (১২) ছিল।
জুয়েনার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা মারুফা বেগমকে হত্যা করে চলে যাওয়ার সময় জুয়েনার কক্ষে যায়। সেখানে তাকে জাগিয়ে তুলে একজন বলে, ‘তোর খালাকে মেরে ফেলা হয়েছে। চিৎকার করলে তোকেও মেরে ফেলা হবে। ‘ দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার পর বাসার পেছনের দরজা খুলে জুয়েনা বের হয়ে পাশের ঘরের লোকজন ডেকে আনে। পরে তারা এসে খালু মিলন খানের চোখের বাঁধন খুলে তাকে মেডিক্যালে পাঠিয়েছে।
সাদিকুর রহমান আরো জানান, মারুফার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে লাশ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত ৮টায় তাকে বাড়ির পাশে দাফন করা হয়েছে।
মিলনের ভাই সবুজ খান জানান, রাত দেড়টার দিকে বাসার কলাপসিবল গেট ভেঙে ডাকাতদল প্রবেশ করে। ডাকাতরা বাসায় থাকা নগদ আড়াই লাখ টাকা ও তিন ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার লুট করার সময় মারুফা বাধা দেন। তখন ডাকাতরা মারুফাকে কুপিয়ে হত্যা করে। স্ত্রীকে রক্ষায় স্বামী এগিয়ে গেলে তাকেও কুপিয়েছে ডাকাতরা। পরে ভাইয়ের মুখ কাপড় দিয়ে ও হাত-পা রশি দিয়ে খাটের সঙ্গে বেঁধে রাখে।
এটা ডাকাতি না হত্যাকাণ্ড জানতে চাইলে সবুজ খান বলেন, এটা তো ডাকাতির মতোনই, সবকিছু দেখলেই বোঝা যায়। ভেঙেচুরে সব কিছু নিয়ে গেছে তারা।
তবে পুলিশ বলছে, মিলনের বাসায় ডাকাতির কোনো ঘটনাই ঘটে। জিনিসপত্র তছনছ করা হলেও কোনো কিছুই খোয়া যায়নি। মূলত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ঢাকতে ডাকাতির বিষয় থেকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।
Leave a Reply