রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন
মো. সুজন মোল্লা,বানারীপাড়া॥ বরিশালের বানারীপাড়া পৌর শহরের বন্দর বাজারের কোন এক দোকানে সকাল হলেই আসতেন সেঁতারা পাগলি। বলতেন ভাত দাও , ভাত দাও। হোটেল দোকানীরা প্লেট ভরে ভাত দিতেন সেঁতারা পাগলিকে। দুপুরে কোন দিন আসলেও আসতেন। বেশির ভাগ দিনই আসতেন না। তবে রাত হলে চায়ের দোকানের সামনে এসে ভির ভির করে কি যেন বলতেন। তখন দোকানীরা চা ও রুটি দিতেন। রং চা তিঁনি খেতেন না। ওনার বাড়ি বানারীপাড়া পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডে। তাঁর পিতার নাম মরহুম জবেদ আলী বেপারী। স্বামী মৃত আব্দুল হক। সাংসারিক জীবনে ২টি মেয়ে আছে। তবে তারা মায়ের ব্রেইন বিকৃত হবার পরে কোন প্রকার খোঁজ-খবর নেয় না বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানান, স্বামী আব্দুল হক মারা যাবার পরেই সেঁতারা বেগমের ব্রেইন বিকৃত হতে শুরু করে। সে প্রায় ৩০ বছর হয়েছে।
সেই থেকেই তাঁর রাস্তায় রাস্তায় ঘরবসতি। তাঁর এক আপন ভাই আছেন বন্দর বাজারে কাপড়ের ব্যবসায়ী। সেও বোনের কোন খেয়াল রাখেনা বলে স্থানীয়রা জানান। অবাক করার বিষয় হলো সেঁতারা পাগলি বেশির ভাগ সময়ই তার নিজ বাড়ি পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির অফিসের বারান্ধায় কাটালেও কখনও কোন বাড়িতে গিয়ে কিছু খেতে চাইতেন না। কারও কোন ক্ষতিও করতেন না। এলাকার বাসিন্দারাসহ বন্দর বাজারের সকলেই এ জন্য তাকে ভলোবাসতেন। সেই ভালোবাসার প্রিয় সেঁতারা ভুয়াকে প্রায় ৪ মাস না দেখে সবাই মনে করেছিলেন হয়তো এই নাট্টমঞ্চ ছেড়ে তিঁনি চলে গেছেন।
তবে না তিঁনি বেঁচে আছেন। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) এমনটাই জানালেন পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (সংরক্ষিত-১) মোসাম্মত ডেইজী বেগমের স্বামী মোস্তফা কামাল। পরে তাদের বাসায় গিয়ে খোঁজ মিলে সেঁতারা বেগমের। অবাক করার বিষয় হলো বিদায়ী সাল ২১’র অক্টোবর মাসের শেষের দিকে অসুস্থ হয়ে সেঁতারা পাগলি সিনেমা হল রোডে পড়েছিলেন। সে সময়ে ওই সড়ক দিয়ে হেটে যাবার সময় ডেইজী বেগম তাঁকে পড়ে থাকতে দেখে, কাছে গিয়ে গায়ে হাত দিয়ে দেখেন অনেক জ্বর। সমস্ত শরীর কাঁপতেছে। তাৎক্ষণিক নিয়ে যান বানারীপাড়া হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে বটে তবে ভর্তি নেয়নি।
প্রয়োজনীয় ঔষধ ক্রয় করে কাউন্সিলর ডেইজী বেগম অসুস্থ সেঁতারা পাগলিকে নিয়ে ৩নং ওয়ার্ডের নিজ বাড়ির একটি কক্ষে ঠাঁই দেন। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত সেঁতারার বসতি ওখানেই হয়েছে। নিজ হাতে গোসল করিয়ে পরিধেয় কাপড়ও পাল্টে এমনকি প্রকৃতির ডাকের পানি খরচও ওই কাউন্সিলর ডেইজী বেগম করিয়ে দিয়েছেন, যতদিন গুরতর অসুস্থ ছিলেন। বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য ও বানারীপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর ডেইজী বেগম বলেন, জনপ্রতিনিধি হয়ে তাঁকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে নিজের মনকে স্থির করে রাখতে পারিনি।
তবে প্রায় ৪ মাস হয়ে যাবার পরে তার ভাই বন্দর বাজারের ব্যবসায়ী মাত্র একটি বারের জন্য বোনকে কেবল এক নজর দেখে গেছেন। দুটি মেয়ে মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়েছে তবে দেখতে আসেনি। সরজমিনে দেখা গেছে সকলের প্রিয় সেঁতারা পাগলি খুব ভালোই আছেন ওই বাড়িতে। তিন বেলা পেটপুরে খাবার আর লেপ-তোষকে ঘুম তার ওপরে আবার ঔষধ সেবন চলছে তাঁর। এ ঔষধে তাঁর শারীরিকভাবে সুস্থতা আসলেও ব্রেইনে যে সমস্যা তা সঠিক চিকিৎসা না হলে ঠিক হবার নয়।
Leave a Reply