শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৫ অপরাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধি॥ ধারের ১০ কেজি চাল ফেরত চাওয়ায় বরগুনার আমতলী উপজেলায় চাচাতো ভাইয়ের ছেলে সাগরের হাতে মো. নুরুল ইসলাম মুন্সী (৪৫) নামে এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে আমতলী থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সেকান্দারখালী (চাঘাট) এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের সেকান্দারখালী (চাঘাট) এলাকায় ভিকটিম নুরুল ইসলামের স্ত্রী রাণী বেগমের কাছ থেকে ১ বছর পূর্বে ১০ কেজি চাল ধার নিয়েছিল একই বাড়ির ছোট চাচি ও বাদশা মুন্সীর স্ত্রী আলেয়া বেগম। ওই চাল দেব দেব বলে আর ফেরত দেয়নি আলেয়া বেগম।
একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভিকটিমের ভাই হাসান মুন্সীর মুরগির ফার্মের সামনে গিয়ে আলেয়া বেগম ভিকটিম নুরুল ইসলাম মুন্সীর কাছে বাড়ির জমি-জমার কাগজপত্র চায়।
এ সময় ভিকটিম নুরুল ইসলামের স্ত্রী রানী বেগম আলেয়ার কাছে তার ধার দেওয়া ১০ কেজি চাল ফেরত চায়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে আলেয়া বেগম তার পড়নে থাকা কাপড়টি খুলে ঘটনাস্থলে রেখে বাড়িতে চলে যায়। পরে ধার দেওয়া চাল ফেরত দিতে না পারায় ভিকটিম নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আলেয়া বেগমের পড়নের কাপড় খুলে নিয়েছে বলে ছেলে আলমগীর ওরফে আলানুর (৪০), মেয়ে খালেদা বেগম (৪৫) ও নাতি সাগরকে (১৯) জানায়।
এ কথা শুনে তারা উত্তেজিত হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে চাচাতো ভাই আলমগীর ওরফে আলানুরের ছেলে সাগর তার হাতে থাকা চাকু দিয়ে ভিকটিম ও চাচা নুরুল ইসলাম মুন্সীর পিঠের ডান পাশে আঘাত করে। এতে সে গুরুত্বর আঘাতপ্রাপ্ত হলে দ্রুত স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক নুরুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় আমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এ দিকে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চাচাতো ভাই আলমগীর ওরফে আলানুর, বোন খালেদা বেগম ও চাচি আলেয়া বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। তবে সাগরকে এখন পর্যন্ত আটক করা সম্ভব হয়নি।
ভিকটিম নুরুল ইসলাম মুন্সীর ভাই হাসান মুন্সী বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে আমার ভাইয়ের স্ত্রী রিনা বেগম চাচির (আলেয়া বেগম) কাছে ধার নেওয়া চাল ফেরত চইলে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তার ছেলে আলানুর, নাতি সাগর মুন্সী ও কন্যা খালেদাকে পাঠিয়ে দেয়। তারা এসে আমার ভাইকে চাকু মেরে খুন করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এ দিকে, ভিকটিম নুরুল ইসলাম মুন্সির স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, আলানুর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার স্বামীকে মারতে আসে। আমি অস্ত্র তার হাত থেকে টেনে নেই। কিন্তু তার ছেলে সাগর মুন্সি ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে আমার স্বামীর পিঠে ছুরি ঢুকিয়ে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
অন্যদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. হিমাদ্রী রায় মুঠোফোনে বলেন, নিহত নুরুল ইসলাম মুন্সির পিঠের ডান পাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
আমতলী থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. শাহ আলম হাওলাদার দৈনিক অধিকারকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ধারের চাল ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে নুরুল ইসলাম মুন্সী নামে একজন খুন হয়েছেন। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। একই সাথে মূল ঘাতক সাগর মুন্সীকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
Leave a Reply