রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন
রাজাপুর প্রতিনিধি॥ ঝালকাঠির রাজাপুরে স্বামী পরিত্যক্তা এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারী উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তবে এই সন্তানের বাবার পরিচয় পাওয়া যায়নি। যাদের পাপে নিস্পাপ শিশুটি পৃথিবীতে এসেছে, তারা নবজাতকের দায়িত্ব না নিয়ে উল্টো স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে শিশুটিকে নিয়ে ব্যবসার ফন্দি এটেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, উপজেলা সদর ইউনিয়নের আংগারিয়া গ্রামের নির্জন একটি চরে আট বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন স্বামী পরিত্যাক্তা ওই নারী। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ওই নারী ঘরে নিয়মিত যাতায়াত করতেন রাহাদ, আবু সায়েদ, রফিক, মানিক, নয়নসহ স্থানীয় কয়েক যুবক। দির্ঘদিন ধরে শারীরিক সম্পর্কের কারণে এক পর্যায়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েন ওই নারী। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে অভিযুক্তদের বাঁচাতে শিশু বিক্রির পরিকল্পনা করে স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পদক্ষেপের কারণে নবজাতক এখনো তাঁর মায়ের কোলে রয়েছে। তবে প্রতিবন্ধী ওই নারীর পক্ষে তাঁর কোন স্বজন না থাকায় কেউ অভিযোগ করছেনা। তাই নির্যাতিতা এই নারী ন্যায় বিচার না পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, স্বামী পরিত্যক্তা ওই নারী একটি ভাঙা ঘরে নির্জন চরে বসবাস করতেন। ৭ বছর আগে মা ও দেড় বছর আগে তাঁর বাবা মারা যায়। এরপর থেকে আট বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে কষ্টের জীবন শুরু হয় তাঁর। ওই চরে ভুক্তভোগী নারীর বড় বোন থাকলেও সে তার কোন খোঁজ খবর রাখতো না। এই সুযোগে স্থানীয় কয়েক বখাটে যুবক বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী ওই নারীর ঘরে অবাধে যাতায়াত করতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানায়, গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় রোজিনা বেগম, সরোয়ার হোসেন, ভুক্তভোগী ওই নারীর বড় বোন সুখি বেগম ও দুলাভাই লিটন হাওলাদারসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা অনাগত শিশুটিকে নিয়ে ব্যবসার ফন্দি আটেন। প্রসবের পরে মোটা অংকের বিনীময়ে নিঃসন্তান এক দম্পতির কাছে শিশুটিকে বিক্রির পরিকল্পনাও করা হয়। ওই নিঃসন্তান দম্পতির কাছ থেকে অগ্রীম টাকাও নেওয়া হয়। তা থেকে সন্তান প্রসব ও ওষুধপত্রের খরচের জন্য গর্ভবতী ও নারীকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্য ও গর্ভবতী নারীকে দেখভালের জন্য স্থানীয় একজন দায়ী নিয়োগ করা হয়।
গত বুধবার বিকালে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় সাংবাদিদের উপস্থিতি টের পেয়ে গর্ভবতী ও নারীকে লুকানোর চেষ্টা করে কুচক্রী মহলটি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের সহায়তায় নারী ইউপি সদস্য নাজমা ইয়াসমিন মুন্নি ওই নারীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। জন্মের খবর পেয়ে নবযাতক শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় চক্রটি।
ভুক্তভোগী ওই নারী বোন সুখি বেগম বলেন, ‘ও একটা পাগল। কখনই আমাদের কথা শোনেনা। ওর ব্যাপারে আমরাও কোন খবর রাখি না। গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি আমরা জানিনা।’ শিশু বিক্রির অভিযোগে অভিযুক্ত রোজিনা বেগম বলেন, ‘বাচ্চা কেনা-বেচা নিয়ে আমি কিছুই জানিনা। শুধু বাচ্চা প্রসবের জন্য রিজিয়া নামে একজন দাই নিয়োগ করেছিলাম।’
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ‘ঘটনা শুনে ওই নারীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর সন্তানের পিতার পরিচয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply