সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রশাসনের সঙ্গে সভা করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার বেলা ১টায় উপাচার্যের সভাকক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে ববিতে চলমান সকল ধরণের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
আলোচনা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি অমিত হাসান রক্তিম বলেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কথা হয়েছে। আমরা চলমান এই সংকটের স্থায়ী সমাধান প্রত্যাশা করছি। একই সঙ্গে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
বৈঠক শেষে উপাচার্য ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলার ঘটনায় চিহ্নিত দোষীদের দ্রুত বিচার চান। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনায় বসে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে পদক্ষেপ গ্রহণে কাজ শুরু করেছে।
যদিও শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের মারধরের বিচার চেয়ে আন্দোলনে সক্রিয় থাকা অনেক শিক্ষার্থীকে সর্বশেষ দুটি বৈঠকে দেখা যায়নি। প্রথমদিকে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আমাদের সঙ্গে কারোর কোনো বিরোধ নেই। আমরা চেয়েছিলাম নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা সঠিক বিচার পাক। কারণ বিগত দিনেও পরিবহন শ্রমিকদের হাতে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা। শেষ মুহূর্তে ছাত্রনেতা হতে গিয়ে কেউ কেউ মারধরকারীদের সঙ্গেই আঁতাত করেছেন। যে কারণে বিচার নিশ্চিত হওয়ার আগেই সবকিছু থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওদিকে মঙ্গলবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না বলে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় চিহ্নিত হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিগত সাতদিন ধরে মহাসড়ক অবরোধসহ নানা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও চরমোনাই বার্ষিক মাহফিল উপলক্ষে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে সড়ক অবরোধ স্থগিত করে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে নগরের রূপাতলী হাউজিং এলাকায় বসবাসকারী অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মেস থেকে নামিয়ে মারধর করে একদল সন্ত্রাসীরা। ওই রাত থেকেই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপনের নেতৃত্বে মারধর করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী মারধরের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার, আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে যান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চাপের মুখে পড়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ দুই শ্রমিককে গ্রেফতার করে। যদিও গ্রেফতারকৃত শ্রমিক দুজন হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল না বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা ও রূপাতলীর বাস শ্রমিকরা।
সেই শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে যান শ্রমিকরা। বাস মালিক-শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবরোধ-ধর্মঘটে কার্যত ভোগান্তিতে ছিল দক্ষিণাঞ্চলবাসী। তবে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আন্দোলন স্থগিত করে বাস মালিক-শ্রমিকরা।
মূলত মঙ্গলবার দুপুরে বিআরটিসি বাসের হেলপারের সঙ্গে হাতাহাতির সূত্র ধরে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। সেই সূত্রে মাঝরাতে মারধরে আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলিম সালেহী, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের নুরুল্লাহ সিদ্দিকী, গণিত বিভাগের ফজলুল হক রাজীব, রসায়ন বিভাগের এস এম সোহানুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আহসানুজ্জামান, বোটানি ও ক্রপ সাইন্সের আলী হাসান, বাংলা বিভাগের মো. রাজন হোসেন এবং মার্কেটিং বিভাগের মাহবুবুর রহমান, মাহাদী হাসান ইমন, মিরাজ হাওলাদার ও সজীব শেখ।
Leave a Reply