সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন
রিয়াজ মাহামুদ আজিম//
অপরাধ নিরসনে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বেঁধে দেওয়া নিয়মাবলী মানছে না আবাসিক হোটেলগুলো। আর নিজেদের ইচ্ছেমত করে হোটেল পরিচালনা করায় কমছে না অপরাধ। নগরী ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বে আবাসিক হোটেলগুলোতে পুলিশের নজরদারী থাকলেও দিনে দিনে নজরদারীতে ভাটা পড়ায় যাচ্ছেতাই রকমের চলছে এসব হোটেল।
নগরীতে বিআইপি হোটেলের মধ্যে রয়েছে গ্রান্ডপার্ক, সেডোনা ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিঃ, এরিনা ও হোটেল এ্যাথেনা। এছাড়াও সেমি ভিআইপি হচ্ছে হোটেল সামস, হক ইন্টারন্যাশনাল, হেটেল আলী, হোটেল ওয়ান ও রোদেলা। আর নিম্ন-মধ্যমানের ও নিম্নমানের প্রায় একশ’ হোটেল নগরীতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, হোটেল কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক বোর্ডারকে কক্ষ ভাড়া দেয়ার পূর্বে বোর্ডারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, স্থিরচিত্র, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, হাতের ছাপ, ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করবেন।
ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কিন্ত বাস্তবতায় সরোজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শুধুমাত্র সিসি ক্যামেরা থাকলেও আর কোনো নির্দেশনাবলী মানছেনা হোটেল কর্তৃপক্ষ। আবার মধ্যম ও নিম্ন-মানের হোটেলগুলোতে সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা সক্রিয় নেই।
কথা হয় হোটেল সেডোনার ম্যানেজার বিপ্লব কুমারের সাথে। তিনি দাবী করেন, সিসি ক্যামেরা থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র, স্থিরচিত্র রাখার ক্ষেত্রে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তারপরও আমরাা রাখছি। তবে ২/১ টি প্রমাণ দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক কর্মচারী জানান রেজিস্টার বহিতে শুধুমাত্র নাম ঠিকানা রেখেই দায়-দায়িত্ব শেষ করা হয়।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার সামনে হোটেল নুপুরের এক কর্মচারী জানান, সিসি ক্যামেরাগুলো নষ্ট। জাতীয় পরিচয়পত্র, ও স্থিরচিত্র রাখা হয়না। কারণ এখানে যেসব বোর্ডার আসে তাদের অধিকাংশই পুর্ব পরিচিত। এমন সময় হোটেল পরিচালক জাকিরুল ইসলাম ঐ কর্মচারীকে হোটেল সম্পর্কিত কোন তথ্য দিতে বারণ করেন। এমনকি হোটেল কর্মচারীকে গালমন্দ করে।
হোটেল হক ইন্টারন্যাশনালের কর্মচারী মোঃ ইব্রাহিম বলেন, সিসি ক্যামেরা থাকলেই যথেষ্ট। এর বেশী কিছু রাখা হয়না। হোটেল ওয়ানের কর্মচারী মোঃ কামালের ভাষ্য, বর্তমানে তেমন বোর্ডার নেই। তাই আনুসাঙ্গিক বিষয়ের প্রয়োজন পড়ে না।
হোটেল সামস্‘র কর্মচারী মোঃ শফিকুল ইসলাম ৩ জন পুরুষ বোর্ডার আসামাত্রই রেজিস্টার খাতায় নাম লিখে কক্ষের চাবি দিয়ে দেন।
হোটেল আলীর কর্মচারী কামরুল ইসলাম মতবাদ অনলাইনকে বলেন, সিসি ক্যামেরাই যথেষ্ট। কারণ ক্যামেরা ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত থাকে। হোটেল ইসলামিয়ার ২য় তলায় উঠতেই দেখা গেলো ২ যুবতী ও এক যুবক কক্ষের মধ্যে সময় কাটিয়ে নীচের দিকে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে কথা হলে হোটেল কর্মচারী মোঃ জলিল মিয়া বলেন, মাঝে মধ্যে কিশোরীরা আসে। আবার চলে যায়। তবে এখন পর্যন্ত এ হোটেলে কোনরকম হত্যাকান্ড, ধর্ষণ বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। আর অপরাধমুলক ঘটনা এড়ানোর জন্য সিসি ক্যামেরার ওপর ভরসা করতে হয়। কিন্ত হোটেল ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ সিসি ক্যামেরাই অচল।
হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, ‘আমি সভাপতি হলেও এসব সাংগঠনিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত নই। তাছাড়া মানুষ এখনও সচেতন হয়নি। যার কারনে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলেও অনেকের ক্ষেত্রে পেশাগত পরিচয় রাখতে হয়। আবার ক্যামেরায় ফুটেজ সংরক্ষিত থাকে।’
বরিশাল কেতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও স্থিরচিত্র রাখা বাধ্যতামূলক কিনা তা জানেন না’ জানিয়ে বলেন, ‘হোটেল কর্তৃপক্ষ বোর্ডারের তালিকা নিয়মিত থানায় এসে জমা দিয়ে যায়।‘
তবে বিএমপির মুখপাত্র নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন, পুরো বিষয়টি তদারকি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে থানার ওসিকে। নিয়মমাফিক পুলিশ গিয়ে হোটেলের রেজিস্টার খাতা তদারকি করে আসবে।’সুত্র,মতবাদ অনলাইন
Leave a Reply