শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ করোনা সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মধ্য ও নিম্নবিত্তের আয়-রোজগার কমলেও কমেনি রাজধানীর বাসা ভাড়া।
ফলে অনেকেই চলে যাচ্ছেন গ্রামে। আবার অনেকে বাসা পরিবর্তন করে কম ভাড়ার বাড়িতে উঠছেন। এদিকে ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেড়ে দেয়ায় এবং নতুন ভাড়াটিয়া না পেয়ে বিপদে পড়েছেন বাড়ির মালিকরা।
অন্যদিকে করোনার সংক্রমণ শুরুর দিকে ভাড়াটিয়াদের পক্ষে বাসা ভাড়া মওকুফের দাবি উঠেছিল। অনেকেই সে সময় বাসা ভাড়া মওকুফ করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু বাড়ির মালিকদের মহানুভবতার মূল্যায়ন করেনি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। বাড়িওয়ালাদের পক্ষ থেকে হাউজিং ট্যাক্স কমানোর দাবি তোলা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি বলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাড়িওয়ালারা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর পুরান ঢাকা, খিলগাঁও, মানিকনগর, তালতলা, মুগদা, বাসাবো, রামপুরা, বনশ্রী, জুরাইন, মুরাদপুর, দনিয়া, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরখান, দক্ষিণ খান, পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, নয়াটোলা, বাবুবাজার, শাঁখারীপট্টি, মীরহাজিরবাগ, সূত্রাপুর, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, ডেমরা, রায়েরবাগ, ধানমন্ডি, কলাবাগান এলাকায় বহু বাড়িতে টু-লেট সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। অনেক মানুষের শ্রেণি কাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে অনেক মানুষ হতদরিদ্র হয়েছেন ফলে আগের ভাড়ার ভার বইতে পারছেন না তারা। সেজন্য ছেড়ে দিচ্ছেন বাসা, ছেড়ে দিচ্ছেন ঢাকা ।
এদিকে, প্রতিদিনই মহাসড়কে দেখা যাচ্ছে মালামাল ভর্তি ট্রাক বা মিনি ট্রাক ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের মালিক সমিতির নেতা আলী বলেন, বাসা বাড়ির মালামালের জন্য এখন ট্রাক বা মিনি ট্রাক, পিকাপভ্যান বেশি ভাড়া হচ্ছে। মানুষ বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।
ঢাকার কুড়িল এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি কিছুদিন আগে পরিবারসহ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে গেছেন। তিনি বলেন, সকল আসবাবপত্র সমেত পুরোপুরি গ্রামে ফিরে গেছেন। তিন মাস বেতন পাইনি। খরচ কমানোর জন্য শুরুতে আমার স্ত্রী ও ছেলেকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়াতে চাইলো। বাসা ভাড়া দিতাম ১২ হাজার টাকা আর বেতন ছিল ২২ হাজার। চাকরি নেই, তিনমাস বেতন পাইনি, এত বাড়িভাড়া কোথা থেকে দেবো? দেখলাম আর পারা যাচ্ছে না। তাই বাড়ি চলে এসেছি ।
তেজগাঁও ফার্মগেট এলাকার চা বিক্রেতা রেজাউল করিম রেজা বলেন, তেজকুনি পাড়া একটি বাড়িতে সব মিলিয়ে ৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতেন। এখন আগের মত বেচা বিক্রি না থাকায় আয়-রোজগার কমে গেছে। তাই এখন ৪ হাজার টাকার একটি টিনশেড বাড়িতে উঠেছেন।
বাড্ডার আদর্শনগর এলাকার একটি বাড়ির মালিক কবির বলেন, তার বাড়িটি বড় রাস্তা-সংলগ্ন হওয়ায় বছরের কোনো সময়ই কোনো ফ্ল্যাট ফাঁকা থাকে না। এমন কোনো মাস যায়নি, যে মাসে তার কোনো ফ্ল্যাট ভাড়াটিয়ার অভাবে ফাঁকা গেছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই মাস ধরে তার দুটি ফ্ল্যাট ফাঁকা পড়ে আছে।
মিরপুর ১ নাম্বারের বাড়ি মালিক মনির হোসেন বলেন, তার বাড়ির এখন বেশিরভাগ ফ্ল্যাটই খালি। ভাড়াটিয়াদের মধ্যে অনেকেই চলে গেছেন। কেউ আগামী মাসে যাবেন।
Leave a Reply