বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫০ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ স্কুলছাত্রী কিশোরীকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে—এমন স্বীকারোক্তি দেওয়া মামলার তিন আসামি কারাগারে বন্দি। আর ওই জবানবন্দি দেওয়ার ১৪ দিন পর জিসা মনি (১৫) নামের ওই কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে।
গতকাল সোমবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে ঘটনার বিবরণ দিয়ে জবানবন্দি দেওয়ার পর সন্ধ্যায় জিসাকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান।
ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার। এর আগে রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ তাকে বন্দরের নবীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে উদ্ধার করে।
জানা গেছে, গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয় নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জিসা মনি। গত ১৭ জুলাই সদর মডেল থানায় জিডি করেন জিসা মনির বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। এরপর ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন তিনি।
মামলায় বলা হয়, ‘আসামি আব্দুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত করত। সে গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় ফোনে ঠিকানা দিলে আমার মেয়ে ওই ঠিকানায় যায়। পরে তাকে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগীরা।
পুলিশ মেয়েটির মায়ের মোবাইলের কললিস্ট চেক করে রকিবের সন্ধান পায়। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়ে আব্দুল্লাহ জিসার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এ ঘটনায় রকিব, আব্দুল্লাহ ও নৌকার মাঝি খলিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আসামিরা। স্বীকারোক্তিতে তাঁরা জানান, জিসাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে।
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানায়, গত রবিবার বিকেলে বন্দরের নবীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে জিসা তার মা রেখা আক্তারকে ফোন করে কিছু টাকা চায়। জিসার বাবা বিষয়টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান। পরে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে নবীগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয় জিসাকে।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুন জানান, জিসা গত ৪ জুলাই আব্দুল্লাহর ফোন পেয়ে নারায়ণগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখানে আব্দুল্লাহর সঙ্গে তার দেখাও হয়। একপর্যায়ে আব্দুল্লাহ চিপস কিনে আনার কথা বলে আর ফিরে না এলে জিসা পূর্বপরিচিত বন্দরের ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর কাছে চলে যায় এবং তাঁকে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করছিল। ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
এদিকে কারাবন্দি খলিলের স্ত্রী শারমিন বেগম ও আব্দুল্লাহর বাবা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে ওরা মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। অথচ ওদের রিমান্ডে নিয়ে যাতে শারীরিক নির্যাতন করা না হয় সেই জন্য পুলিশ আমাদের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছে। আমরা দ্রুত এই তিনজনের মুক্তি চাই।
স্বজনদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। আদালতে ওরা বুঝেশুনেই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের কোনো টর্চার করা হয়নি। কোনো টাকা-পয়সাও লেনদেন করা হয়নি। তবে বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল এক ব্রিফিংয়ে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আসল রহস্য উদ্ধার করা হবে। তবে এখানে পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।
পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম গতকাল রাতে বলেন, প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা (ডিআই-১) পরিদর্শক ইকবাল হোসেন।
Leave a Reply