শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ পাবনা-৪ আসনে (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) ১৯৯৬ সাল থেকে টানা পাঁচবারের সাংসদ ছিলেন সদ্য প্রয়াত সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। গত এপ্রিলে তার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এই আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রী, পুত্র, মেয়ে, জামাই, খালাতো ভাই, ভগ্নিপতি মিলে ওই পরিবারেরই ছয়জন। তবে ডিলু পরিবারকে বিতর্কিত আখ্যায়িত করে মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন একাধিক জনপ্রতিনিধিসহ কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা। অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা অনিশ্চয়তার দোলাচলে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণার পরই উপনির্বাচনে মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন তার স্ত্রী ও ঈশ্বরদী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুন নাহার শরীফ। এরই মধ্যে তার পোস্টার-ব্যানারে নির্বাচনী এলাকা ভরে গেছে। দুই ছেলে কনক শরীফ ও তমাল শরীফ মাকে সমর্থন দিলেও বড় ছেলে ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গালিবুর রহমান শরীফ নিজের পোস্টার-ব্যানার টানিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। মা ও ভাইয়ের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন মাহজেবিন শিরিন। তিনি সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বড় মেয়ে ও জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। শিরিনের স্বামী ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। একই দৌড়ে অংশ নিয়েছেন শামসুর রহমান শরীফের খালাতো ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বশির আহম্মেদ এবং ভগ্নিপতি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান।
গালিবুর রহমান শরীফ বলেন, ‘আমি ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন।’ সাবেক ভূমিমন্ত্রী মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে তিনি কমিটিতে এসেছেন।
গালিবের মা কামরুন নাহার শরীফ বলেন, ‘মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার আমার আছে। দলেও অবস্থান ভালো। আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।
গালিবের বোন মাহজেবিন শিরিন বলেন, ‘আমার বাবা ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি উন্নয়নের কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।
এদিকে ডিলু পরিবারের বাইরেও মনোনয়নযুদ্ধে আওয়ামী লীগের অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আগ্রহ অতীতের রেকর্ড ভেঙেছে। মোট মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ২৮ জন। জমাও দিয়েছেন সবাই।জগ
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের মধ্যে রয়েছেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুজ্জামান বিশ্বাস, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) এ এস এম নজরুল ইসলাম রবি, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস, জেলা কমিটির উপদপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী জিরু, পৌর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান স্বপন, মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল আলিম, অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ বকুল, ড. মুসলিমা জাহান ময়না, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য জালাল উদ্দিন তুহিন, ড. মুসলিমা জাহান ময়না, সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুর রহমান বিশ্বাস, ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আকরাম আলী খান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিব, তাঁতী লীগের সহসভাপতি এস এম গোলাম মোস্তফা ও সলিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৯ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী।
মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল বলেন, দলের প্রভাবশালী একটি পরিবারের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে পাবনা-৪ আসনে দল বারবার বিতর্কিত হয়েছে। সেখানে দলীয় কোন্দলও চরমে। নেত্রী আমাকে আসনটির দায়িত্ব দিলে আমি এসব সংকট কাটিয়ে দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হব।
সাবেক এমপি পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস বলেন, নেত্রীর প্রতি আমার আস্থা আছে। গত নির্বাচনে আমাকে প্রার্থী করতে এলাকার মানুষ চাঁদা তুলে আমার ব্যাংকঋণ পরিশোধ করেছিল। এবারও তাদের চাপেই প্রার্থী হতে হয়েছে। দলীয় সভানেত্রী সবার কর্মকাণ্ড সম্পর্কেই অবহিত। তিনি অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।
অন্যদিকে বিএনপি এই উপনির্বাচনে অংশ নেবে কি-না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জেলা বিএনপি বা উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ কারণে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও কর্মপন্থা ঠিক করতে পারছেন না। গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, কেন্দ্রীয় একটি ভার্চুয়াল সভায় উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে শুনেছি। কিন্তু চূড়ান্তভাবে পাবনা জেলা বিএনপির নেতাদের কিছু জানানো হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে দল সিদ্ধান্ত নেবে। সুত্র,পূর্বপশ্চিম
Leave a Reply