শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:মাদকের গডফাদারদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইনের খসড়া আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব ফরিদউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী। তিনি বলেন, একটি ‘টেকসই’ পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযান চলবে। চলমান অভিযানের কোনো লিমিট (সময়সীমা) নেই।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্রসচিব ফরিদউদ্দিন এই মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মতবিনিময় সভাটির আয়োজন করে। এতে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট, কারাগার, ফায়ার সার্ভিস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের স্থানীয় কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় চট্টগ্রাম নগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এবং জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বক্তব্য দেন।
সভায় সচিব ফরিদউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে ১৯৯০ সালের প্রণীত আইনে অনেক দুবর্লতা আছে। পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে, মাদকের গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে। গডফাদার বলতে যাঁরা মাদকে অথর্লগ্নি করছেন, তাঁরা হয়তো দেশেও থাকেন না, সিঙ্গাপুর বা দেশের বাইরে থেকেই করছেন। নতুন আইনে গডফাদারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হবে। আগামী সোমবারের বৈঠকে নয়, পরের সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য উঠতে পারে।
দেশের কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ৩৬ হাজার ৬০০ বলে জানান স্বরাষ্ট্রসচিব ফরিদউদ্দিন। তিনি বলেন, এখন কারাগারে ৯০ হাজার বন্দী আছেন। এর ৪৩ শতাংশই মাদকের মামলার আসামি, যার সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। অর্থাৎ কারাগারের ধারণক্ষমতার পুরোটাই মাদকের আসামি দিয়ে ভরা। তিনি আরও বলেন, দেশে বতর্মানে ৬০ থেকে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত ব্যক্তি আছে। তাদের নেশার জগৎ থেকে বের করে আনতে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যার মাদক নিরাময় কেন্দ্র করা হবে। একইভাবে জেলাগুলোতেও নিরাময় কেন্দ্র হবে। আসলে সরকারের পক্ষে এককভাবে সব জায়গায় নিরাময় কেন্দ্র করা সম্ভব নয়। প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের ভিত্তিতে এসব হাসপাতাল হলে ভালো হয়। এ জন্য বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
চলমান মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার কথাও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব ফরিদউদ্দিন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্সের (শূন্য সহনশীলতা) নির্দেশনা আছে। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, যত দিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হবে, তত দিন পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযান চলবে। আরও একটা বিষয় হচ্ছে যৌথ বাহিনীর অভিযানও শিগগিরই শুরু হবে।
মাদক নির্মূলের জন্য কক্সবাজারকে একটি পৃথক অঞ্চল হিসেবে নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে সচিব জানান। তিনি বলেন, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে নজরদারি বাড়িয়ে যাতে যৌথ অভিযান করা যায়। আর মিয়ানমারের সঙ্গে বিশাল সীমান্ত এলাকা সিলগালা (স্থায়ীভাবে বন্ধ) করতেও চিন্তাভাবনা চলছে। সীমান্ত সিলগালা হলে মাদক পাচারের আশঙ্কা কমে যাবে।
মাদকবিরোধী অভিযানের সময় ‘বিচারবহির্ভূত’ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিদেশি চাপের মধ্যে থাকার কথাও জানিয়েছেন সচিব। তিনি বলেন, ‘“এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং” নিয়ে আমরা অনেক চাপের মধ্যে আছি। বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের সব সময় এটা বলে। বিদেশ থেকেও চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং বলতে যেটা বলা হচ্ছে, সেটা তো হচ্ছে না।’
আজকের সভায় মিয়ানমারের সমালোচনা করেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব ফরিদউদ্দিন আহম্মদ। তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে মাদক পাচার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল, যাতে প্রতিবছর বা দুই বছরে অন্তত একবার দুই দেশের কর্মকর্তারা পর্যালোচনা বৈঠকে বসেন। কিন্তু মিয়ানমার বৈঠক করতে আগ্রহ দেখায় না বলে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে না। বরং মিয়ানমার ব্যাপকভাবে ইয়াবা পাচার করে বাংলাদেশকে পঙ্গু করার চক্রান্ত করছে। এ বিষয়ে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠকে কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার কারা চালায়, তা সবাই জানে।
সভায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম মাদক মামলায় বিচারকাজ পরিচালনায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আদালতে যেসব মাদক মামলার শুনানি চলছে, তা ১৭ থেকে ১৮ বছর আগে করা। অথচ ওই সময় যাঁরা আসামি হন, তাঁরা অনেকে এই ব্যবসা থেকে সরে গেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মাদকের ব্যবহার, পরিবহন ও পাচার বেড়ে গেছে। অনেকে ধরা পড়ছেন। তাঁরা আবার জামিনে বেরিয়ে মাদক ব্যবসা করছেন। কিন্তু তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে ১৫ থেকে ২০টি করে মামলা আছে। এই মুহূর্তে তাঁদের বিচার নিশ্চিত করে জেলে পাঠাতে পারলে দেশে মাদকের ভয়াবহতা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, মাদকের সঙ্গে যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নয়, গোটা সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
Leave a Reply