বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৭ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ খুলনা মহানগরীর আটরা গিলাতলার ইস্টার্ণগেট এলাকায় প্রতিপক্ষের গুলিতে ও গণপিটুনিতে চারজন নিহতের ঘটনার নেপথ্যে দুইটি কারণ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।তবে অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে সীমাহীন অভিযোগ এলাকাবাসীর। প্রথমত, স্থানীয়দের বিরোধীতায় মশিয়ালী দাখিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে সভাপতি হতে না পারায় ক্ষুব্ধ শেখ মো. জাকারিয়া।
দ্বিতীয়ত, বৃহস্পতিবার এলাকার নিরীহ ও সাদামনের মানুষ হিসেবে পরিচিত মো. মজিবুর রহমানকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে পুলিশে সোর্পদ করে জাকারিয়ার ভাই জাফরীন হাসান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তাদেরকে লক্ষ্য করে বাড়ির ভেতর থেকেই গুলিবর্ষণ করেন শেখ জাকারিয়া, মিল্টন, জাফরীন হাসান ও কবির। সহোদরদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান চলছে বলে কেএমপির ঊদ্ধর্তন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি মশিয়ালী দাখিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে শেখ মো. জাকারিয়ার বিপক্ষে স্থানীয়রা সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। নানা অন্যায়-অকর্মে অতিষ্ঠ ছিলেন এলাকাবাসী। মাদরাসা কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে মশিয়ালী ঈদগাহ, জামে মসজিদ, এতিমখানা ও দাখিল মাদরাসা এসব প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণের সুযোগ হয়।
মর্যাদার এ আসনটিতে আসীন হতে না পাওয়ার মনোকষ্টে স্থানীয় কয়েকজনকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন শেখ জাকারিয়া। প্রায়ই মুরব্বিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের দানা বাঁধে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার এলাকার নিরীহ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত মো. মজিবুর রহমানকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে পুলিশে সোর্পদ করে জাফরীন হাসান। নিরীহ মজিবুরকে কিভাবে থানা থেকে ছাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা করতে রাতে জাকারিয়ার বাড়িতে যাচ্ছিলেন এলাকাবাসী।
জাকারিয়া ও তার ভাইয়েরা ভেবে নেয় এলাকাবাসী হামলা চালাতে আসছে। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছলে কিছু বুঝে উঠার আগেই নির্বিকারে গুলি চালায় তারা। বাড়ির ভেতর থেকে আচমকা কয়েকটি গুলিবর্ষণের ঘটনায় এলাকাবাসী ছুটাছুটি শুরু করে। ঘটনাস্থলেই ঢলে পড়েন ৮/১০ জন। এরপর মসজিদের মাইকে ঘটনাটি কেউ একজন ঘোষণা দেয়। পরে এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ একত্রে জাকারিয়াদের বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। মুহূর্তেই ঘটনাস্থল থেকে সঁটকে পড়েন অস্ত্রধারীরা। সেই থেকে লাপাত্তা তারা।
শুক্রবার সকালে যশোরের অভয়নগর এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) এসএম বজলুর রহমান বলেন, ঘটনার পর থেকেই অভিযান চলছে। কাউকে আটক করা যায়নি। তবে একজনকে অভয়নগর এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে মজিবুরকে ফাঁসানোর বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
খানজাহান আলী থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, খুমেক হাসপাতালে নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। নিহতদের মরদেহ শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অপরাধীদের ধরতে অভিযান চলছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন আটরাগিলাতলার মশিয়ালী এলাকার মো. বারিক শেখের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম ও একই এলাকার মো. ইউনুচ আলীর ছেলে গোলাম রসুল। আর খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ সাইফুল ইসলাম এবং প্রতিপক্ষের গণপিটুনিতে জাহিদুল ইসলাম জেহাদ নামে এক যুবক নিহত হন।
এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম, আফসার শেখ, শামীম, রবি, খলিলুর রহমান ও মশিয়ার রহমানসহ অন্তত ৮ জন। শেখ মো. জাকারিয়া, তার ভাই মিল্টন, জাফরীন হাসান ও কবিরকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
Leave a Reply