পুলক চ্যাটার্জি॥ করোনা সংকটে বরিশালে ভিন্ন রকম যুদ্ধে নেমেছেন তিনজন। তারা হলেন- বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট বিভূতি ভূষণ হালদার, বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী। তারা ভয়কে জয় করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বরিশাল বিভাগের একমাত্র করোনা পরীক্ষাগার শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৯ মার্চ থেকে শুরু হয় পরীক্ষা কার্যক্রম। নমুনা নেওয়ার জন্য হাসপাতালের পাঁচ টেকনোলজিস্টের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। ওই পাঁচজনের মধ্যে চারজন বিভিন্ন অজুহাতে তালিকা থেকে নাম বাদ দিলেও সাহস নিয়ে এই কাজে যুক্ত হন বিভূতি ভূষণ হালদার। তিনি একাই এখন সংগ্রহ করছেন নমুনা। এ পর্যন্ত তিনি হাসপাতালের করোনা ইউনিট ও আইসোলেশনে থাকা ২০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন তিনি। বরিশাল মেডিকেল এবং স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিভূতিকে ‘করোনা যুদ্ধের নায়ক’ অবহিত করেছেন।
ঝুঁকি জেনেও নমুনা সংগ্রহের কাজ করতে ভয় হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে বিভূতি ভূষণ বলেন, দুর্যোগের সময় কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন তার এমন সাহসিকতায় ‘করোনা যুদ্ধের বীর সৈনিক’ উপাধি দিয়েছেন।
বরিশাল নদীবন্দর ও নৌ টার্মিনালে শতাধিক ছিন্নমূল মানুষের নিয়মিত বাস। লকডাউন শুরু হলে বিপাকে পড়ে তারা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের মধ্যে প্রতিদিন খাবার বিতরণ শুরু করেন নদীবন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু। ২৭ মার্চ থেকে প্রতিদিন দুপুরের খাবার দিচ্ছেন ব্যক্তি উদ্যোগে। এই মানুষগুলোকে রাতের খাবার দিচ্ছেন বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন।
এদিকে, নগরীর নিম্নবিত্ত মানুষের পাশে ‘একমুঠো চাল’ কর্মসূচি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তী। মানুষের দান করা মুঠো চালের ত্রাণ তিনি দুস্থদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন। চালু করলেন স্বল্পমূল্যের মানবতার বাজার। রেশনিং পদ্ধতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ সেই বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিতে পারছেন।
ডা. মনীষা মোবাইল ফোনে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য শুরু করেন ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেল’। সেখানে যুক্ত করলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরও। ঘরে বসেই সবাই যেন যে কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ পেতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করলেন। সেখান থেকেই ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে করোনা কিংবা জরুরি হাসপাতালে নেওয়ার মতো রোগীদের জন্য শুরু করেছেন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।
Leave a Reply