বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে বাতিল করা হলো বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন’র বদলী আদেশটি। গতকাল ৩১ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব শারমিন আক্তার জাহান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তার বদলীর আদেশটি বাতিল করেন। বেলা ১২ টায় মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে এই প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হলে খুশি হন এখানকার চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা স্বস্তি প্রকাশ করে পরিচালকের বদলীর আদেশটি বাতিল হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এদিকে একই প্রজ্ঞাপনে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চলতি দায়িত্বে পরিচালক হিসেবে বদলীর আদেশধীন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি দায়িত্বে পরিচালক ডাঃ এ,টি,এম,এম. মোর্শেদকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে বদলী করা হয়। তার স্থলে পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করা হয় ঝিনাইদহ ম্যাটস’র অধ্যক্ষ ডাঃ মুন্সী মোঃ রেজা সেকান্দারকে।
সূত্র মতে, ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন গত দুই বছরে অগুছানো বৃহৎ এই হাসপাতালে সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। তিনি গত ৩১ মার্চ ২০১৮ তারিখ এই হাসপাতালে যোগদানের পর নানান অনিয়ম দুর করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায়ও আমুল পরির্তন ঘটিছেন তিনি। ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ তিনি এখানে যোগদানকরেই নানান জটিলতায় ঝুলে থাকা নতুন ২১২ কর্মচারী বেতন ভাতা প্রক্রিয়া সম্পূন করেন।
এতে করে ওই সকল কর্মচারীর পরিবারের হাজারো সদস্যের মাঝে সস্তি নেমে আসে। তিনি হাসপাতালে প্রথমবারের মতো সম্পূন্ন আলাদা একটি ইউরোলজী বিভাগ চালু করার ব্যবস্থা করেন। জাইকা প্রজেক্টের অধিনে বহুতল বিশিষ্ট হাসপাতাল এলাকায় পৃথক ৭ তলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাজ ভবন, ৫তলা বিশিষ্ট রেডিওলজী ও ইমেজিং, প্যাথলজী এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার নির্মাণ করা প্রক্রিয়া হাতে নেয়া নেন তিনি।
সেই সাথে নতুন করে ১০ তলা বিশিষ্ট ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মানের প্রক্রিয়া হতে নেন তিনি। বরিশালে শেখ রাসেল শিশু হাসপাতালের কার্যক্রমেও অগ্রিনী ভূমিকা রাখেন ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন। স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি’র আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল¬াহ এমপি’র সহযোগীতায় মন্ত্রনালয়ে যোগযোগ করে দীর্ঘদিন পর নতুন একটি এ্যাম্বুলেস আনার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এ্যাম্বুলেন্সটি বর্তমানে সেবার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। নিজ উদ্যোগে হাসপাতালের সামনে ও ৪র্থ শ্রেনীর স্টাফ কোয়াটারে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা সম্ভব করেছেন তিনি।
হাসপাতালে যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চত করতে বায়োমেট্রিক মেশিন চালু করেছেন ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন। ফলে প্রতিদিন ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন তিনি। গত ২ বছরে ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন নিজস্ব উদ্যোগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতায় হাসপাতালের অর্ধশত দালাল ও ভুয়া চিকিৎসক নিমূল করেছেন। বছরের পর বছর হাসপাতালের ভিতরের পরিবেশ নষ্টকারী ভ্রাম্যমান দোকানী ও হকারদের আনাগোন বন্ধ করেছেন তিনি।
নিয়ম ভেঙ্গে যখন তখন হাসপাতালে অবাদে প্রবেশকারী বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশে সময় বেধে দেয়া হয়েছে (অফিস সময়ের পর)। এতে করে চিকিৎসকরা রোগীদের প্রতি আরো মনযোগী হচ্ছেন। হাসপাতালে চোর ও ছিনতাইকারী রোধে আরো আধুনিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন তিনি। হাসপাতালের সমস্যা, সমাধানের বিষয়ে প্রতি সপ্তাহে একবার ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের নিয়ে সভা করার নিয়োম চালু করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকা দুটি লিফট চালু করাসহ আরো দুটি উন্নতমানের লিফট স্থাপনের প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছিলেন তিনি। রোগীদের হাসপাতালেই সকল ধরেনর প্যাথলজী ও ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা সহ সচ্ছতার জন্য প্যাথলজী, রেডিওলজী, রক্ত পরিসঞ্চলন কেন্দ্রে ইউজার ফি’র ডিজিটাল চার্ট তৈরি করে দিয়েছেন।
বিষুদ্ধ পানি ও হাসপাতালে সর্বক্ষনিক পানির নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষে ৫ম তালার ছাদে একাধীক বৃহত্তর পানির ট্যাঁক তৈরি করার ব্যবস্থা করেছেন। মাত্র ১১০ জন পরিছন্নতাকর্মি নিয়ে বৃহৎ এই হাসপাতাল পরিছন্নতা জন্য দিন তিনবার করে পরিস্কার-পরিছন্ন ও সোয়াব দেয়ার নিয়োম চালু করেছেন তিনি। দীর্ঘ ৫০ বছর পর প্রথম বারের মতো হাসপাতালের সিটিজেন চাটার তৈরি করেছেন তিনি।
দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতালে অব্যবহিৃত আসবারপত্র স্তুপ করে রাখায় রোগী থাকার স্থান নিয়ে সংকট দেখা দেয়ায় উক্ত অব্যবহিৃত মালামাল কন্ডেম নেশন ও পুড়িয়ে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা প্রদানসহ তাদের পোশাক বিতরণ করেছেন।
হাসপাতালের ডি-ব্লক’র নিচ তলা থেকে ৫ তলার ছাদ পর্যন্ত মেরামত ও সংস্কার সম্পূন্ন করেছেন তিনি। শেবাচিম হাসপতাালে ২২৪ পদের মাত্র ৯৭ জন চিকিৎসক, ৭৭৫ জন নার্স, ৫০ জন ৩য় শ্রেনী আর ৩১৯ জন ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের নিয়ে বৃহৎ এই হাসপাতালের কার্যক্রম চালিয়ে এমন সাফল্যতা অর্জন করেছেন ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন।
হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরের চিকিৎসকরা জানান, বর্তমান সময় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করায় দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ সবক্ষেত্রে নানান কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন তিনি।
সেই আলোকে পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন তৎক্ষনিক একটি পৃথক করোনা ভাইরাস ইউনিটের কার্যক্রম চালু করেছেন। হাসপাতাল জুড়ে জনবল সংকট থাকা সত্বেও সল্প সময়ের মধ্যে রাত-দিন কর্মস্থলে থেকে দ্রুততার সাথে ওই ওয়ার্ডটির কার্যক্রম চালু করায় প্রশংসার দাবীদার তিনিই।
দেশের এই অবস্থায় এমননি একজন যোগ্য প্রশাসক ও পরিচালকের বদলীর আদেশটি বাতিল করায় আমরা খুশি। নতুন এই প্রজ্ঞাপনটি জারি হওয়ায় আমারা সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
শুধু করোনা ভাইরাস প্রতিরোধেই নয়, ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন সম্প্রীতি সময়ে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে এই হাসপাতালে সম্পূন্ন আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালুর মাধ্যমে এক অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। মুজিববর্ষ সর্থক ও সফল করতে নানান কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে চলছেন ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন।
Leave a Reply